আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন সাধারণত একটা নকশা মেনে চলে। যে দল ক্ষমতায় রয়েছে, কংগ্রেসে তাদের আসন কমে যায়। নির্বাচনের পরের দিন ফলপ্রকাশ হলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শাসক দলের বিরুদ্ধে গণভোট হিসেবে আদপেই এই নির্বাচনকে দেখা যাবে না।’ বিরোধী দলও চেনা বুলি আওড়ায়— ‘এই জয় শাসক দলের বিরুদ্ধে আমেরিকার মানুষের জয়।’ মধ্যবর্তী নির্বাচনের এটাই বাঁধা ছক।
এই দেশের সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সেস’। সরকার ঠিক মতো কাজ করছে কি না, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছিল তা পালন করছে কি না, দু’বছরের মাথায় এ সব খতিয়ে দেখে মতামত জানান মার্কিন ভোটদাতারা। যদি কোনও মধ্যবর্তী নির্বাচনে, চেনা ছকের বাইরে দিয়ে, শাসক দলই কংগ্রেসে বেশি আসন জেতে, তা হলে তা প্রেসিডেন্টের সমর্থনে বিপুল গণভোট বলেই গণ্য করা হয়।
এ বারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ছক মানবে না ছক ভাঙবে, তা জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। আমেরিকার সময় বুধবার সকাল আটটা, মানে ভারতীয় সময় বুধবার সন্ধে সাড়ে ছ’টা থেকে ফলাফল জানা যাবে। তবে তার বেশ কিছু ক্ষণ আগে থেকেই শুরু হয়ে যাবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা। তবে একটা কথা ইতিমধ্যেই ভোটদাতারা বুঝে গিয়েছেন— এই বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে ‘ঈশ্বরের বাণী’ না ভাবাই ভাল। ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, এ ধরনের সমীক্ষার উপর বিশেষ ভরসা করা যায় না। কারণ, সে বার প্রায় কোনও সমীক্ষার ফলাফলই বাস্তবের সঙ্গে মেলেনি। এ বারও নানাবিধ সমীক্ষা হচ্ছে, কিন্তু যাঁরা এই সমীক্ষা চালাচ্ছেন, তাঁরাও অতি সন্তর্পণে পা ফেলে চলছেন। এত দিন সমীক্ষা করার সময়ে কিছু সহজ সমীকরণকে হাতিয়ার করতেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কেমন সেই সমীকরণ? যেমন, নতুন ভোটদাতাদের সংখ্যা অনেক বেশি হলে ডেমোক্র্যাটদের পোয়াবারো, কারণ বেশির ভাগ নতুন ভোটদাতা ডেমোক্র্যাটদেরই ভোট দেন। অথবা, এ বার শহরতলির ভোটদাতা অনেক বেশি আর শহরতলির ভোটদাতারা সাধারণত রিপাবলিকানদের ভোট দেন — এই ধরনের সমীকরণের ফাঁদে চট করে পড়তে চাইছেন না সমীক্ষকেরা। ফলে ‘আমি যাদের ভোট দিয়েছি তারাই জিতবে’ এই আত্মবিশ্বাস ছাড়া এ বার ভোটদাতাদের বিশেষ কোনও অবলম্বন নেই!
রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট, যে দিকেই পাল্লা ঝুঁকুক, কাল এক দল ভোটদাতা খুশি হবেন। আর এক দল মুষড়ে পড়বেন। ঘুম ভেঙে ফলাফলের খবর শুনে যাঁদের মুখে চওড়া হাসি দেখা দেবে, তাঁরা মনে মনে নিশ্চয় ভাববেন, ‘আমি যা চেয়েছি, গোটা দেশও তা-ই চেয়েছে।’ আর যাঁরা ভেঙে পড়বেন, তাঁদের উদ্দেশে একটাই কথা বলার, ভরসা রাখুন। ছবিটা দু’বছর বাদেই বদলে যেতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy