বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটেই এনে ফেলা হয়েছিল ‘শেক্ষপীরের’ নাটকটাকে। বহুপ্রতীক্ষিত খুনের দৃশ্য তত ক্ষণে সমাগত।
আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছুরির আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবেন স্যুট-টাই পরা জুলিয়াস সিজার। কাতর গলায় বলে উঠবেন, ‘ব্রুটাস, তুমিও!!!’
হঠাৎ এ কী! এই দৃশ্যটাও ইংরেজ কবি লিখে গিয়েছিলেন নাকি? মঞ্চে উঠে পড়েছেন এক তরুণী। চিৎকার করছেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হিংসার শিকার বানানো হচ্ছে। দক্ষিণপন্থীদের প্রতি রাজনৈতিক হিংসা এটা।’’
ভুল ভাঙল তখনই। নাটক নয়, বাস্তব বিক্ষোভ। সিজার, ব্রুটাস সবাই তখন কিছুটা অপ্রস্তুত। শুক্রবারের সন্ধ্যায় মহা হুল্লোড় পড়েছে নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের মুক্তমঞ্চে। লরা লুমার নামে ওই মহিলাকে তখন প্রবল দুয়ো দিচ্ছেন দর্শকেরা। বলছেন নেমে যেতে। নাছোড় লরাকে শেষ পর্যন্ত কয়েক জন রক্ষী বার করে নিয়ে গেলেন মঞ্চ থেকে। তখন আবার দর্শকাসনের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছেন তাঁর এক সহচর— জ্যাক পোজোবিয়েক। গত বছরেই ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে শিশু-পাচার চক্রের ভুয়ো অভিযোগ রটানোর ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর। লরার কাণ্ডকারখানা এত ক্ষণ ভিডিওয় ধরে রাখছিলেন তিনিই।
সেই জ্যাক এ বার চিৎকার জুড়লেন, ‘‘তোমরা সবাই জোসেফ গোয়েবলসের মতো নাৎসি! তোমরা জঙ্গিদের উৎসাহ দাও। তোমাদের হাতে স্টিভ স্কালিসের রক্ত লেগে!’’ স্টিভ স্কালিস হলেন সেই রিপাবলিকান সদস্য, ক’দিন আগেই যিনি বেসবল মাঠে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়েছেন। রক্ষীরা বার করে দেওয়ার আগে ভিডিওটা টুইটারে পোস্ট করে জ্যাক লিখে দিলেন, ‘‘জুলিয়াস সিজার বন্ধ।’’
নাটক অবশ্য শুরু হল মিনিটখানেকের মধ্যেই। আর কোনও বিপত্তিও হল না। নাটক শেষে পরিচালক অস্কার ইউস্টিস বললেন, ‘‘সকলের বাক্স্বাধীনতা থাকুক। কিন্তু শো যেন বন্ধ না হয়।’’ নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত ‘শেক্সপিয়ার ইন দ্য পার্ক’ সিরিজের এই নাটক নিয়ে বিতর্ক অবশ্য চলছিল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। বর্তমান মার্কিন সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি চ্যানেল সেটির তীব্র সমালোচনা করার পরে দু’টো স্পনসরও হারাতে হয়েছে তাদের।
আসলে এই নাটকের সিজারের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় বেশিই মিল। শুধু চেহারা বা পোশাক নয়, নাটকের ফাঁকে ফাঁকে প্রায়ই উঠে আসছে এমন সব রসিকতা যা দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না, লক্ষ্যটা মার্কিন প্রেসিডেন্টই। স্বাভাবিক ভাবেই ট্রাম্প-সদৃশ রোমান সম্রাট যখন মঞ্চে খুন হচ্ছেন, তখন সেটা ‘প্রেসিডেন্ট খুন’ হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন সমর্থকেরা। প্রযোজনার দায়িত্বে থাকা পাবলিক থিয়েটারের মুখপাত্র অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের এই নাটক কারও প্রতি হিংসার দিকেই ইঙ্গিত করছে না। বরং উল্টো কথাটা বলছে। অগণতান্ত্রিক পথে যারা গণতন্ত্রকে বাঁচাতে যায়, তাদের চরম মূল্য দিতে হয়। যাকে বাঁচাতে চেয়েছিল, তাকেই এরা খুন করে ফেলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy