Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতভর নাটক শেষে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড

গত কাল রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় জুড়ে খোলা ছিল পার্লামেন্ট। সাসপেন্ড করার মুহূর্ত যত এগিয়েছে, এমপি-রা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ স্লোগানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

সাইলেন্সড: স্পিকারের শূন্য আসনে প্রতিবাদ-পোস্টার ব্রিটিশ এমপি-দের। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

সাইলেন্সড: স্পিকারের শূন্য আসনে প্রতিবাদ-পোস্টার ব্রিটিশ এমপি-দের। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১২
Share: Save:

সিদ্ধান্ত কার্যকর হল গত কাল গভীর রাতে। আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। শুধু বন্ধ হওয়া নয়, হাউস অব কমন্সে গত কাল যা যা ঘটল, গত এক শতকে সে দৃশ্য পার্লামেন্টে চাক্ষুষ করেনি কেউ!

গত কাল রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় জুড়ে খোলা ছিল পার্লামেন্ট। সাসপেন্ড করার মুহূর্ত যত এগিয়েছে, এমপি-রা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ স্লোগানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কোনওটিতে লেখা ‘সাইলেন্সড’, আর কোনওটিতে আবার লেখা ‘শেম অন ইউ’। স্পিকার যাতে চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে না চলে যান, বিরোধীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তার জন্য। কিছুতেই কিছু হয়নি।

এমনিতে রানির বক্তৃতার আগে কিছু দিন পার্লামেন্ট বন্ধ থাকে। কিন্তু এ বার যে ভাবে ব্রেক্সিট বিতর্কের জেরে পার্লামেন্ট দীর্ঘ সময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে, সেটা নজিরবিহীন।

তবে ষষ্ঠ বারের জন্য ফের ভোটে হেরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এর মধ্যে মোট ছ’টি বিল পার্লামেন্টে এসেছে। ছ’টিতেই হারলেন বরিস। ১৫ অক্টোবর দ্রুত নির্বাচন করানোর জন্য কাল ভোটাভুটি হলেও হালে পানি পেলেন না বরিস। ২৯৩ জন এমপি তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু দ্রুত ভোট করানোর জন্য পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। যা থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন বরিস। তাতেও না দমে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমার হাত বেঁধে রাখার জন্য এই পার্লামেন্ট যত কৌশলই আবিষ্কার করুক না কেন, জাতীয় স্বার্থে চুক্তি আমি করবই। এই সরকার ব্রেক্সিটে কোনও দেরি করবে না।’’ তবে আগামী কয়েক দিনে ব্রাসেলসে তিনি কী করে উঠতে পারেন, সে দিকেই এখন তাকিয়ে গোটা ব্রিটেন।

সাধারণ নির্বাচন দ্রুত করানো নিয়ে ভোটাভুটিই গত কাল পার্লামেন্টের শেষ বেলার কাজের মধ্যে ছিল। মাঝরাত পেরোনোর পরে স্পিকার জন বার্কো উঠে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার বার্তা দিতে এমপি-দের নিয়ে এগোতে চাইছিলেন হাউস অব লর্ডসের দিকে। তখনই বিরোধীরা বার্কোর পথ আটকান। বিরোধী এমপি-রা দ্রুত ভোটে সায় দিতে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট রুখে দেওয়ার দিকেই। সেই আইন যাতে দ্রুত প্রয়োগ করা যায়, সেটাই দেখেছেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত রাত দু’টো নাগাদ প্রায় ফাঁকা হাউস অব লর্ডসে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করা হয়। আপাতত পাঁচ সপ্তাহ পার্লামেন্ট থেকে দূরেই থাকবেন এমপি-রা। ১৪ অক্টোবর রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের বক্তৃতা। তখন আবার ফিরবেন তাঁরা।

শুধু পার্লামেন্ট সাসপেন্ড নয়, শেষ বেলায় স্পিকার জন বার্কো তাঁর ইস্তফার কথাও ঘোষণা করেন। তিনি বলেছেন, ৩১ অক্টোবরই সরে দাঁড়াতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ওই দিনই ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার দিন ধার্য হয়েছে। বার্কোকে নিয়ে এমনিতেই ক্ষুব্ধ কনজ়ারভেটিভ পার্টি। কারণ তিনি এমপি-দের ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্কের সুযোগ করে দিয়েছেন। অল্প সময়ে মধ্যে বিতর্ক ও বিল পেশ ও আইন পাশেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তকে বলেছেন, ‘সাংবিধানিক ক্ষোভ।’

২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পরে বার্কো বলেছিলেন, ন’বছরের বেশি পদে থাকবেন না। ব্রিটেন গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সায় দেওয়ার পরেও থেকে যান তিনি। বার্কো তখন বলেছিলেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী হাউস অব কমন্সের উত্তপ্ত আবহাওয়া সামলাতে অভিজ্ঞ স্পিকার থাকা প্রয়োজন। তবে কনজ়ারভেটিভ দলের আবার অভিযোগ ছিল, তিনি নিরপেক্ষ নন। তাঁর প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে ব্রেক্সিট-বিরোধী পক্ষের দিকে। গত কাল বার্কো ইস্তফার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে বিরোধীরা তাঁর প্রশংসায় সরব হন। তাঁরা বলেন, বার্কো এমন এক জন স্পিকার, যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

UK Parliament Brexit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE