দক্ষিণ চিন সাগরের লড়াইতে ভারতকে দরকার আমেরিকার। নয়াদিল্লিকে সক্রিয় ভাবে পাশে না পেলে এশীয় জলসীমায় চিনের সঙ্গে এঁটে ওঠা মুশকিল। তাই ভারতকে স্বস্তিতে রাখতে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াল ওয়াশিংটন ডিসি। ভারতের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে আচমকা পাকিস্তান ঘোষণা করল, জামাত-উদ-দাওয়া নিষিদ্ধ। বিধিনিষেধ আরোপ হল হাফিজ সঈদের গতিবিধিতেও।
নওয়াজ শরিফের সরকার দিন কয়েক আগেই পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে জামাত-উদ-দাওয়াকে। ভারত সরকার বহু দিন ধরেই বলছিল জামাত-উদ-দাওয়া লস্কর-ই-তৈবার শাখা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সঈদ মুম্বই হামলার মূল চক্রী বলেও বার বার অভিযোগ করেছে ভারত। কিন্তু, পাকিস্তান কোনও কথায় কান দেয়নি। হাফিজ এবং তার সংগঠনের কার্যকলাপ নির্বিঘ্নেই চলতে দিয়েছে পাক সরকার। রাষ্ট্রপুঞ্জও জামাত-উদ-দাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছে। কাজ হয়নি তাতেও। বারাক ওবামা সম্প্রতি আসরে নামেন। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে শেষ বৈঠকে তিনি জামাত-উদ-দাওয়া নিয়ে চাপ বাড়ান ইসলামাবাদের উপর। তাতেও হেলদোল ছিল না নওয়াজের। দক্ষিণ চিন সাগরে মার্কিন-চিন দ্বৈরথ যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্ম দিতেই পাকিস্তান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিল জামাত-উদ-দাওয়াকে। ইসলামাবাদ স্পষ্ট ঘোষণা করল, জামাত-উদ-দাওয়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার শাখা। তাই এই সংগঠনকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। সংগঠনের প্রধান হাফিজ সঈদের গতিবিধির উপরও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাক সরকারের নির্দেশ, পাকিস্তানের সরকারি, বেসরকারি টিভি চ্যানেল বা রেডিওতে হাফিজ সঈদের কোনও বক্তব্য সম্প্রচার করা যাবে না।
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ ভারতের পক্ষে নিশ্চয়ই স্বস্তির। কিন্তু, এশিয়ার জলভাগে যখন বিশ্বযুদ্ধের সমীকরণ কষার পরিস্থিতি, তখন মিত্র দেশ চিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে ভারতকে কেন স্বস্তি দিলেন নওয়াজ শরিফ? দক্ষিণ চিন সাগর এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশকে সঙ্গে নিয়ে যখন চিনকে ঘিরছে আমেরিকা, তখন তো বেজিং-এর একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য মিত্র হওয়ার কথা ইসলামাবাদের। প্রতিরক্ষা বিশারদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেজিং চেয়েছিল, নিয়ন্ত্রণ রেখায় সমস্যা আরও বাড়িয়ে পাকিস্তান আপাতত জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তেই ব্যস্ত রাখুক ভারতকে। কিন্তু সেই ছক বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওয়াশিংটন বা নয়াদিল্লির। বিশ্লেষকরা বলছেন, চিনকে জব্দ করতে হলে যে ভারতের সাহায্য অপরিহার্য তা প্রেসিডেন্ট ওবামা ভালই জানেন। সেই কথা মাথায় রেখেই নাকি কূটনৈতিক স্তরে আচমকা চাপ বাড়ানো হয়েছে পাকিস্তানের উপর। খুব গোপনে এবং দ্রুত আমেরিকা সেই কাজ সেরে ফেলেছে বলে একটি মহলের দাবি। তার জেরেই পাকিস্তান কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে জঙ্গি নেতা হাফিজ ও তার সংগঠনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, লক্ষ্যনীয় ভাবে গত কয়েকদিনে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-পাক গোলগুলি বিনিময়ও অনেকটা স্তিমিত।
বিশ্লেষকদের কথায়, পর পর এমন সব ঘটনা মোটেই কাকতালীয় নয়। সূত্রের খবর, নওয়াজকে ওবামার সাফ বার্তা, চিনের বিরোধিতা করতে না পারলেও কোনও ভাবেই তাদের সাহায্য করা যাবে না। আর তাই বন্ধ রাখতে হবে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ। মার্কিন সাহায্য দেশের অর্থনীতির পক্ষে অপরিহার্য হওয়ায় নওয়াজও নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন আমেরিকার কঠিন চাপের কাছে।
পরিস্থিতি আপাতত বেশ খানিকটা মসৃণ ভারতের পক্ষে। পশ্চিম সীমান্তে সমস্যা খানিকটা কম। এ বার কি তা হলে দক্ষিণ চিন সাগরে বা তিব্বত সীমান্তে চিনের অস্বস্তি বাড়ানোয় মন দিতে চলেছে ভারত? উত্তর দেবে সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy