Advertisement
০৫ মে ২০২৪
আজ উত্তরের জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি

রবিবার ছুটির দিনে দেখা মেলেনি বহু চিকিত্‌সকের

এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। চিকিত্‌সক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সমস্ত ধরনের ছুটি বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। অথচ রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় হাসপাতালে চিকিত্‌সকদের একাংশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। এ ছবি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। অথচ গত ৭ জুলাই থেকে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালেই ৫৯ জন মারা গিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩১
Share: Save:

এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। চিকিত্‌সক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সমস্ত ধরনের ছুটি বাতিল করার কথাও বলা হয়েছে। অথচ রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় হাসপাতালে চিকিত্‌সকদের একাংশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। এ ছবি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। অথচ গত ৭ জুলাই থেকে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালেই ৫৯ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে এ দিন সকাল থেকে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সুপারের দফতরেও দিনভর তালা ঝোলানো ছিল বলে অভিযোগ। বিকেলের পর ঘণ্টা খানেকের জন্য সুপার হাসপাতালে এসে ওয়ার্ডগুলি চটজলদি পরিদর্শন করে চলে যান। সেই খবর পৌঁছেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর কাছেও। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় বলেই এ দিন চিকিত্‌সকরা জানিয়েছেন। তবে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার বলে কোনও ব্যাপার নেই। হাসপাতালে চিকিত্‌সকদের একাংশের না থাকার ব্যাপারে যে প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলব।”

হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্র সরকার জানান, ওয়ার্ডে চিকিত্‌সকরা থাকছেন। এই রোগে আলাদা করে কোনও চিকিত্‌সার ব্যাপার নেই। শ্বাসকষ্ট, রক্ত চাপের সমস্যার মতো যে সব উপসর্গ দেখা দিচ্ছে সে ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “সমস্ত ওয়ার্ডেই নজরদারি রয়েছে। আমি নিজে এ দিন বিকেলে ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে খোঁজ নিয়েছি।”

অথচ রোগীদের আত্মীয় পরিজনের অভিযোগ, দিনভর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই কোনও চিকিত্‌সক ছিলেন না। কোনও ওয়ার্ডে এক জন চিকিত্‌সক রোগীদের একাংশকে দেখলেও সবাইকে দেখতে পারেননি। নার্সদের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে রোগীদের। রোগীর পরিবারের লোকেরা জানান, সকালের দিকে হাতেগোনা কয়েকজন চিকিত্‌সক কিছুক্ষণের জন্য মেডিসিন বিভাগের পুরুষ এবং মহিলাদের ওয়ার্ডগুলিতে গেলেও কয়েক জন রোগী দেখে অল্প সময় পরেই তাঁরা চলে যান। অন্য দিন তিন-চার জন করে চিকিত্‌সক এবং জুনিয়র ডাক্তারেরা থাকেন, এ দিন তাঁদের দেখা যায়নি। বিকেলের পর সুপার এলে তাঁর দফতর কিছুক্ষণের জন্য খোলা হয়। ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে তিনি চলে যাওয়ার পর ফের তাঁর দফতরে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। পুরুষ মেডিসিন দু’ নম্বর বিভাগে এক জন মহিলা ডাক্তার কিছুক্ষণ ছিলেন। সন্ধ্যার পর এমএম-১ ওয়ার্ডে আর কোনও চিকিত্‌সকের দেখা মেলেনি। মহিলাদের ওয়ার্ডেও কখনও কখনও একজন চিকিত্‌সকের দেখা মিলেছে।

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ আরও বেশ কয়েকজন শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসেন। এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে আরও আট জন রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে অশোকবাবু এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকারের গাফিলতির কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর দায় স্বাস্থ্য দফতরকেই নিতে হবে। তাঁরা শুধু গালভরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অথচ রবিবার বলে হাসপাতালে চিকিত্‌সকদের একাংশের দেখা নেই। এ সব ছোট করে দেখলে হবে না। এতগুলি মানুষ মারা গেলেন অথচ এখনও তাদের টনক নড়েনি।”

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের আত্মীয় মাটিগাড়ার বাসিন্দা সঞ্জিত শাহ, কোচবিহারের বাসিন্দা প্রভারানি সেন, মেটেলির ইনডং বাগানের ঈশ্বর ওরাওঁদের, রবিবার সারাদিনই রোগীদের দেখতে চিকিত্‌সক আসেননি। প্রভারানি দেবী বলেন, “ছেলে অসুস্থ হয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ভর্তি। শনিবার পর্যন্ত ডাক্তাররা একাধিক বার এসে দেখে গিয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও চিকিত্‌সক আসেননি। চিন্তায় রয়েছি। চিকিত্‌সক দেখে গেলে মনে জোর পেতাম।” মেঝেতে শয্যায় শুয়ে ছটপট করছেন লাকি ওরাওঁ। চিকিত্‌সক না যাওয়ায় তাঁর পরিবারের লোক চিন্তায়। শুধু এনসেফ্যালাইটিসের রোগীরাই নয়। চিকিত্‌সকরা না-আসায় ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীরাও সমস্যায় পড়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিনও এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগী সেখানে ভর্তি হয়েছেন। জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসেছেন তাঁদের অনেকেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্‌সকদের বক্তব্য, জেলাগুলিতে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত জোর দেওয়া উচিত। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। বর্ষা থাকা পর্যন্ত রোগ সংক্রমণ থাকবে বলেই তাঁদের ধারণা।

তা ছাড়া হাসপাতালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগ নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত ‘কিট’ নেই বলেও জানা গিয়েছে। হাসপাতালের একটি সূত্রই জানিয়েছে, সম্প্রতি যে দুই বাক্স ‘কিট’ মিলেছিল তাও শেষের পথে। আরও পাঁচ বাক্স কিট চাওয়া হয়েছে। তবে তা এখনও আসেনি। দ্রুত কিট না এলে ওই রোগ নির্ণয় করতে সময় মতো পরীক্ষা করানো নিয়েও সমস্যা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

red alert north bengal encephalities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE