সচিবকে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত সদ্যোজাতের বাবা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
শিশু মৃত্যুকে ঘিরে বিক্ষোভের আঁচ পেলেন স্বাস্থ্য দফতরের সচিবও। যে বিক্ষোভে সামিল শাসকদলের কাউন্সিলেরারও!
মঙ্গলবার শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতাল। বুধবার ওই হাসপাতালের পাশেই নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা। এই খবর পেয়ে সেখানেই ছুটে যান মৃত শিশুর মা, বাবা, পরিবারের সদস্য এবং এলাকার বাসিন্দারা। আসেন বিষ্ণুপুর পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজীবকান্তি রায়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ হাসপাতাল গেটে ঢোকার সময় শিশু মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়ে কে ঘিরে ধরেন তাঁরা। শুরু হয়ে যায় ঠেলাঠেলি। ছুটে আসেন সচিবের সঙ্গে থাকা অন্যান্য আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীরা। তাঁরাই তাঁকে হাসপাতালের ভেতরে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু, সচিবের পায়ে পড়ে আবেদন জানাতে থাকেন মৃত শিশুটির বাবা পরিতোষ চন্দ্র। ঠেলাঠেলিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মৃত শিশুর মা সুমিত্রা দেবী। তাঁকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অবস্থায় হাসপাতালে ঢুকে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন সচিব। তখনও হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ চলে। বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন আইসি বিষ্ণুপুর স্বপন দত্ত।
কী হয়েছিল মঙ্গলবার?
সুমিত্রাদেবীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় রবিবার ভোরে তাঁঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার কিছুক্ষণ পরেই ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরিতোষবাবুর অভিযোগ, জন্মের পর থেকেই বাচ্চাটির খিঁচুনি হচ্ছিল। ডাক্তার ও নার্সদের সে কথা জানিয়েছিলেন। তবু তাঁরা সোমবার বিকেলে তাঁর স্ত্রী ও বাচ্চাকে ছুটি দিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় সদ্যোজাত শিশুটি মারা যায়। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের লোকজন। সকলের বক্তব্য, হাসপাতাল এত তাড়াহুড়ো করে মা ও শিশুকে ছেড়ে না দিলে হয়তো সদ্যোজাতের প্রাণ বাঁচত। তাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। মহকুমাশাসক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেন হাসপাতাল কতর্পক্ষকে।
কিন্তু, পুত্রসন্তানকে হারিয়ে বাবা ও মায়ের ক্ষোভ কী পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বুধবার টের পেয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সচিবও। তাই হয়তো সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ হাসপাতাল সুপার এবং জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে থেকে বেরিয়ে অসুস্থ সুমিত্রাদেবীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন সচিব। পরিতোষবাবুকে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল দেখতে যাওয়ার মুখে ফের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা যায় আরও এক তৃণমূল কাউন্সিলর উদয় ভকতকেও। মঙ্গলবার থেকে মৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গে থাকা কাউন্সিলর দিব্যেন্দুবাবু বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরের উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ঢালছেন। আর কিছু ডাক্তার নিজের কাজ না করে বাইরে প্র্যাকটিস জমিয়ে হাসপাতালের রোগীদের না দেখে মেরে ফেলছেন। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। আমরা তার প্রতিবাদেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছি।’’ সচিব বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। পরে সচিব বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব। এখানে এর বেশি বলার নেই।’’ বিষ্ণুপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিক অরবিন্দ সরকার বৈঠক শেষে আশ্বাস দেন, ওই শিশু মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে। এই নিয়ে একটি কমিটি গড়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, সুপার স্পেশালিটি হাস্পাতালটি শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হবে। সে কারণেই এ দিনের পরিদর্শন ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy