Advertisement
E-Paper

আমার ঘরের চাবি

দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান সঙ্গীতশিল্পী সৌম্যজিৎ দাস। তাঁর অন্দরমহলে একই সুরে বাঁধা পড়ে বিশ্বের আনাচকানাচ থেকে আনা সব মুহূর্তেরা।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৩
নীল আর সাদার আভিজাত্য।

নীল আর সাদার আভিজাত্য।

যাঁর প্রাণের সুর বাঁধা পড়ে আছে খোদ রবিঠাকুরের দুয়ারে, তাঁর রুচি আর সৌন্দর্যবোধে যে আলাদা ছোঁয়া থাকবে, এ তো প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই প্রত্যাশাও ছাপিয়ে যায় কসবায় টেগোর পার্কের ভিতরে সঙ্গীতশিল্পী সৌম্যজিৎ দাসের বাড়িতে ঢুকলেই।

একই ফ্ল্যাটবাড়ির দু’টি তলা নিয়ে থাকেন শিল্পী। কিন্তু বাঁধা গতের ছোট টুবিএইচকে মোটেও পছন্দ নয় তাঁর। ‘‘দুই তলাতেই দুটো করে ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম আর ছোট লিভিং কাম ডাইনিং স্পেস ছিল। কিন্তু ছোট খুপরির বদলে একটা করে ঘর পুরো ভেঙে দিয়েছিলাম। অবশ্য ভিতের কথাটাও মাথায় রাখতে হয়েছে,’’ বলছিলেন সৌম্যজিৎ। ছকবাঁধা ফ্ল্যাটের মডেল অনুযায়ী অবাঞ্ছিত দেওয়াল, বেসিন সরিয়ে দিয়েছেন। ফলে এক কোণে বেডরুম, কিচেন, রান্নাঘর থাকলেও বাকিটা পুরো ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। এক তলায় মূল সদর দরজার বাঁ হাতে বিশাল পেন্টিং রেখে ভিতরে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। সাদা আর ধূসর নীলের এ রকম মনোরম মেলবন্ধনও হয়!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সুরের মূর্ছনায়

ডান হাতে কাঠের সুবিশাল ডাইনিং টেবল। ছ’জনের বসার ব্যবস্থা, কালো কাঠের চেয়ারেও আভিজাত্যের ছোঁয়া। মেঝেয় পা রাখতেই ডুবে গেল পারস্যের মোলায়েম গালিচায়। তার সুতোর সূক্ষ্ম কাজে তাক লেগে যায় বইকি! ডাইনিং কাম ড্রয়িংয়ের ভিতরে একটি দেওয়াল জুড়ে শুধুই বই। দেওয়ালে গাঁথা বুকশেলফের রংও নীল, তবে এ বার ভিন্ন শেড। বইয়ের ফাঁক থেকেই ইতিউতি উঁকি মারছে কাঠের মোরগ, পোর্সেলিনের মূর্তি। রয়েছে শেক্সপিয়র সমগ্রের বিশেষ সংখ্যা। শতাব্দীপ্রাচীন সেই বইয়ের পাতা হলদেটে, কিন্তু ভালবাসায় মোড়া। শেলফের মাঝেই আলোর ব্যবস্থা, যাতে বই খোঁজা সহজ হয়। ‘‘আসলে সিলিংয়ের আলোর চাইতে, শেলফের সঙ্গেই আলো থাকলে বই খুঁজতে সুবিধে হয়,’’ বক্তব্য তাঁর। দরকার শুধু পছন্দসই বই বার করে সামনের নরম সোফায় ডুবে যাওয়া। আর আছে ‘অরফ্যান’। শেলফের পাশে রাখা অনাথ শিশুর আর্তিময় করুণ মুখের ফরাসি মার্বেলের মূর্তি দেখলে ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।

সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই অন্য গল্প। তার অন্দরে সাদার আধিক্য, যেন মোমের মতো ভালবাসা চুঁইয়ে পড়ছে। এখানেও একটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। তৈরি হয়েছে শিল্পীর রেওয়াজের জায়গা। এক কোনায় বড় যত্নে রাখা পিয়ানো। তার সামনের দেওয়ালে হরেক পেন্টিং, কোথাও সিল্কের উপরে বোনা, কোথাও তুলির টান। রয়েছে পুরনো ঘড়িও। রেওয়াজের জায়গায় রয়েছে বসার ব্যবস্থা। দেওয়াল জুড়ে শিল্পীর অসংখ্য মুহূর্ত ফ্রেমে বন্দি। চোখ আটকে গেল ছোট এক কোনায়। সাদা ফ্রেমে বন্দি রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রজাপতি। সৌম্যজিৎ বললেন গল্পটা, ‘‘পেরুর বাটারফ্লাই পার্ক থেকে এনেছি এটা। রঙিন মৃত প্রজাপতিদের এ ভাবে ফ্রেমে বাঁধিয়ে সংরক্ষণ করে ওখানে।’’ আড্ডার মাঝেই সেখানে উড়ে এসে বসল আর এক প্রজাপতি। যদিও কাচের ব্যবধান, তবু তারা মিলিয়ে দিল জীবন-মরণ, দেশের বিভেদরেখা। তারই নীচে ফরাসি ঘড়ি। বিদেশ থেকে আনা বহু পুরনো সেই ঘড়ি আজও সময়ের কাঁটা মিলিয়ে যাচ্ছে।

সবুজ ছোঁয়া

রেওয়াজ-ঘরের একটি বড় অংশ জুড়ে পেল্লায় কাচের দরজা। ঠেলে বাইরে বেরোতেই একফালি বারান্দা। জায়গা অল্প, কিন্তু আয়নার কেরামতিতে দৃষ্টিবিভ্রম হয়। রয়েছে কাস্ট আয়রনের সাদা চেয়ার, ঘরের রঙের সঙ্গেই মানিয়ে। আর সবুজের পরশ। যে দিকেই চোখ যায় স্নেহসবুজ ছোঁয়া। দোতলার বেডরুমটিও খুব বড় নয়, কিন্তু রয়েছে উষ্ণতার আঁচ। পুরনো ভারী কাঠের খাট, পেঁচানো ছত্রী। দু’দিকের জানালা দিয়ে এলোমেলো হাওয়ার অবাধ যাতায়াত। দেওয়ালে তাঞ্জোর পেন্টিংয়ের সরস্বতী। বেডরুমে উজ্জ্বল রং বলতে রঙিন ফুল।

বেরিয়ে আসতেই চোখ আটকে যায় লাল দরজায়। ঠিক যেমনটা ইউরোপের টেলিফোন বুথ। ‘‘দরজাগুলো রাস্তার ধার থেকে কিনে এনে রং করিয়েছি। আর পাশের ওয়াল প্লেটগুলো জার্মানি, ভেনিস, জাপান... যখ‌ন যেখানে গিয়ে চোখ আটকে গিয়েছে, নিয়ে এসেছি,’’ বললেন সৌম্যজিৎ।

দরজা খুলে ঢুকতেই অন্য জগৎ। যদিও তা বাথরুম, কিন্তু বিদেশি রঙিন ওয়ালপেপারে মোড়া দেওয়াল নজর কাড়ে। তার দোসর নরম আলো। এক পাশে রাখা বই। একান্তে পাতা ওল্টালেই হল।

আর আছে শিল্পীর প্রাণের বিগ্রহ। তা দেখেই আত্মার শান্তি। সেখানে আলো ছড়াচ্ছে ইটালি থেকে আনা ব্রোঞ্জের ঝাড়বাতি। ঠাকুরের কাছেই রাখা তানপুরা।

কনসার্টের জন্য সৌরেন্দ্রর সঙ্গে পৃথিবীর নানা দেশে নিত্য যাতায়াত সৌম্যজিতের। প্রত্যেক বারই দেশে ফেরেন প্রায় শূন্য পকেট, মুঠোভরা স্মৃতি আর তোরঙ্গভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে। ‘‘আসলে যেখানে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই সাজাই। অতিরিক্ত সাজালে সাজানোর আনন্দ আর সৌন্দর্য দুটোই মাটি,’’ হেসে বললেন শিল্পী।

দেশ-বিদেশ সেঁচে আনা সব অমূল্যরতন সাজিয়েছেন তিনি পরিমিতি বজায় রেখে। সৌম্যজিৎ জীবনের ধ্রুবতারা মেনেছেন যে সঙ্গীতকে, সেই সুরের মূর্ছনাতেই বাঁধা আছে তার ভাল-বাসা।

ছবি: দেবর্ষি সরকার

Home Decor Home Decor Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy