Advertisement
E-Paper

শূন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক, থ্যালাসেমিয়া ইউনিট চালুর প্রস্তাব আশিসের

কিডনিতে পাথর এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম আছে। শুক্রবার বর্ধমানের এক চিকিৎসক তাই মাড়গ্রাম থানার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা উলসী মালকে পরামর্শ দিয়েছিলেন রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য, দু’বোতল রক্তের প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রামপুরহাট হাসপাতালে উলসীদেবীকে ভর্তি করেছিলেন স্বামী দুলাল মাল।

রামপুরহাট ব্লাড ব্যাঙ্কে তালা বন্ধ। রোগীদের অভিযোগ, নিত্য দিন দুপুর ২টোর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। —নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট ব্লাড ব্যাঙ্কে তালা বন্ধ। রোগীদের অভিযোগ, নিত্য দিন দুপুর ২টোর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০১:২১
Share
Save

কিডনিতে পাথর এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম আছে। শুক্রবার বর্ধমানের এক চিকিৎসক তাই মাড়গ্রাম থানার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা উলসী মালকে পরামর্শ দিয়েছিলেন রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য, দু’বোতল রক্তের প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রামপুরহাট হাসপাতালে উলসীদেবীকে ভর্তি করেছিলেন স্বামী দুলাল মাল। কিন্তু, ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, ‘রক্তদাতা নিয়ে এসে, নির্ধারিত টাকা জমা দিলেই রক্ত মিলবে।’ কার্যত রক্তদাতা না মেলায় আতান্তরে পড়েন উলসীদেবীর পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘রক্তের দরকার, কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।’’

এ শুধু উলসীদেবী, দুলাল মালের অভিজ্ঞতা নয়। রামপুরহাট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গত দশ দিন ধরেই চলছে রক্তের আকাল। ভুগতে হচ্ছে রক্তাল্পতা-সহ রক্তের প্রয়োজনে ভর্তি হওয়া প্রায় সমস্ত রোগীদের। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে বোর্ডে- এ, বি, ও, এবি পজিটিভ ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত ইংরেজি হরফে ‘নিল’ বলে লিখে দেওয়া হয়েছে।

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর থ্যালাসেমিয়া রোগী থেকে নার্সিং হোম, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য রামপুরহাট হাসপাতালে মাসে ৪০০ বোতল রক্ত দরকার। কিন্তু গত ১ জুলাই নলহাটি থানার তেজহাটিতে ক্যাম্প করে মাত্র ২৫ বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ রামপুরহাট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের খাতা অনুযায়ী ২২৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্ত দিতে হয়। তাই জুলাই মাসে সংগ্রহিত ২৫ বোতল রক্ত ২৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিতে হয়েছে। তারপর এখনও পর্যন্ত আর শিবির হয়নি।

গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১৩টি ক্যাম্পের মাধ্যমে ৮২২ বোতল রক্ত সংগ্রহ হয়। সেই সমস্ত সংগ্রহীত রক্তের মধ্যে হাসপাতাল কতৃপক্ষ এলাকায় রোড ট্রাফিক অ্যাক্সিডেন্টের জন্য জরুরি প্রয়োজনের জন্য প্রতিটি গ্রুপের গড়ে তিন বোতল মজুত রাখতে হয় ব্লাড ব্যঙ্কের কর্মীদের। এ দিকে রক্তের আকালের জেরে জরুরি প্রয়োজনের জন্য মজুত রক্তও আর মজুত রাখা যাবে না বলে হাসপাতাল সুপার সুবোধ মণ্ডল জানিয়েছেন। সুপার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে যতক্ষণ রক্ত মজুত থাকবে রোগীদের সেই রক্ত দিতে হবে।’’

ফলে বিপাকে পড়েছেন রক্তের চাহিদা নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয়েরা। যেমন উলসীদেবীর স্বামী পড়শি একজনের মাধ্যমে দুটো ‘বি পজিটিভ’ গ্রুপের কার্ড নিয়ে স্ত্রীকে রক্ত দিতে এসেছিলেন বুধবার। কিন্তু চাইলেন কি রক্ত মিলবে? এর পর চিকিৎসকের নির্দেশ মতো কার্ড দেখিয়ে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের খোঁজ করতেই সেখান থেকে দুলালবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয় রক্ত নেই। রক্তদাতা নিয়ে আসতে হবে। তাতেও ১০৫০ টাকা লাগবে। তার পরে রক্ত পাওয়া যাবে। দুলালবাবু ও তাঁর পড়শি আকাশ থেকে পড়েন। সেই মুহূর্তে রক্তদাতা জোগাড় করা তাঁদের কাছে খুবই কঠিন। কারণ হাসপাতাল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তাঁদের বাড়ি। তার মধ্যে ১০ কিমি হাঁটা পথ আছে। বিপাকে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে কী করবেন ভাবতে থাকেন দুলালবাবু।

এ দিকে রক্ত সঙ্কটের খবর পেয়ে এ দিনই দুপুরে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যোগ দিতে এসে মন্ত্রী তথা জেলা স্বাস্থ্য কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় রামপুরহাট ব্লাডব্যাঙ্কের রক্ত সঙ্কট কেন হল সে ব্যপারে খোঁজ নেন। সেখানে দেখা যায় রামপুরহাট ব্লাড ব্যঙ্ক থেকে রামপুরহাট মহকুমা সহ লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবং মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্ত বেশি দিতে হচ্ছে।

ব্লাড ব্যাঙ্কের খাতায় দেখা যায়, রামপুরহাট থানার বেলে গ্রামের ১২ বছরের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কিশোর বিক্রম গঙ্গোপাধ্যায়কে মার্চ মাসে এক মাসের মধ্যেই পাঁচবার রক্ত দিতে হয়েছে। জুন মাসে নলহাটি থানার বুজুং গ্রামে সাত বছরের বালিকা অর্পিতা মালকে চার বার রক্ত দিতে হয়েছে।

ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা এর পরে মন্ত্রীকে জানান, সিউড়িতে থ্যালাসেমিয়ার ইউনিট আছে সেখানে চিকিৎসকদের না দেখিয়ে কেবল মাত্র রক্তের প্রয়োজনে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীরা রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে রক্ত নিয়ে চলে যাচ্ছে। অথচ সিউড়িতে স্পেশালিস্ট চিকিৎসককে দেখালে ওষুধ নেওয়ার পর ঘন ঘন রক্তের প্রয়োজন হয় না। আশিসবাবু এর পরে সুপারকে প্রস্তাব দেন, রক্ত সঙ্কটের জন্য সিউড়িতে থ্যালাসেমিয়া ইউনিট কার্ড নিয়ে এলে তারপরে রামপুরহাটে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের রক্ত দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে রামপুরহাট হাসপাতালে একটি থ্যালাসেমিয়া ইউনিট খোলার ব্যাপারে প্রস্তাব নেওয়া হয়। মন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে তিনি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

হাসপাতাল সুপার বলেন, রক্ত সঙ্কটের জন্য জরুরি ক্যম্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছে আগামী ১৫ অগস্ট একটি মাত্র ক্যম্প করার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। তবে কি রক্ত সঙ্কট চলবেই? উত্তরের অপেক্ষায় মুমূর্ষু রোগী ও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তেরা।

Rampurhat hospital Blood Birbhum trinamool ashis banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}