Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অটিজম নিয়ে অন্ধকার কাটুক, পা মেলাল শিশুরা

অটিস্টিক শিশুদের হাতে লেখা পোস্টারেই তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হল নতুন এক জগতের। সমদর্শী, তাতাই, ঋতিকা, রুদ্রপ্রীত, ইশান, ঐশিকাদের তৈরি রঙিন পোস্টারগুলির কোনওটিতে লেখা ‘আমি গান গাই, লেখাপড়া করি। আমি থেমে নেই। আমার অটিজম আছে’।

আমি আমার মতো: হাতে পোস্টার নিয়ে অটিস্টিক শিশুরা। রবিবার, গরফার অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র

আমি আমার মতো: হাতে পোস্টার নিয়ে অটিস্টিক শিশুরা। রবিবার, গরফার অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

আরাত্রিকা, আয়ুষি ও সৃষ্টির উদ্বোধনী নাচ-গান শেষ হতেই জোরে হাততালি দিয়ে ওঠেন রিনা, সোনালিরা। অটিজম কী, তাঁরা তা জানেন না। কিন্তু সৃষ্টিরা তাঁদেরই নাতি-নাতনিদের মতো। তাই রবিবার সকালে প্রাতর্ভ্রমণ সেরেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বাবা-মায়েদের সঙ্গে গরফার বাসিন্দারা যোগ দিয়েছিলেন অটিজম নিয়ে সচেতনতামূলক এক অনুষ্ঠানে।

অটিস্টিক শিশুদের হাতে লেখা পোস্টারেই তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হল নতুন এক জগতের। সমদর্শী, তাতাই, ঋতিকা, রুদ্রপ্রীত, ইশান, ঐশিকাদের তৈরি রঙিন পোস্টারগুলির কোনওটিতে লেখা ‘আমি গান গাই, লেখাপড়া করি। আমি থেমে নেই। আমার অটিজম আছে’। কোনওটিতে আবার লেখা ‘আমি তোমাদের সব কথা বুঝি। কিন্তু কী ভাবে তোমাদের সঙ্গে কথা বলব, বুঝতে পারি না। আমার অটিজম আছে’। ওদের জীবন কেমন, তা এ ভাবেই বোঝাল ওরা। সে সব দেখেশুনে স্থানীয় বাসিন্দা দীপক সেন বলেন, ‘‘এমনও সমস্যা হয়, জানতাম না। প্রতিবন্ধকতা বোঝার পাশাপাশি আজ ওদের নাচ-গান-আঁকা দেখে আমরা মুগ্ধ। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মূলস্রোতে আনতে আমাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।’’

এ দিন গরফা অঞ্চলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবার এবং শিক্ষকদের নিয়ে একটি পদযাত্রার আয়োজনও করে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। নিজেদের সমস্যার কথা লিখে পদযাত্রায় পা মেলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। শেষে কথামৃত উদ্যানের অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার বয়স্ক বাসিন্দা ও অটো এবং রিকশাচালকেরা। সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁদের সঙ্গে আমাদের নিত্য যোগাযোগ, বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা কী, তা তাঁদেরই আগে বোঝানো দরকার। সে জন্যই আজকের এই উদ্যোগ।’’ অদিতির কাছে অটিস্টিক মানুষদের প্রতিবন্ধকতার কথা শুনে কেঁদে ফেলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃত্তিকা রায়। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়ে ভাবি নিশ্চয়ই বাবা-মায়ের কোনও ত্রুটি বা

তাঁদের অবহেলার জন্যই বাচ্চার এমন অবস্থা। আজ জানলাম, এতে কারও দোষ নেই। বরং কোনও শিশুর আচরণ অন্য রকম দেখলে পরস্পরকে দোষারোপ না করে আগে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’’

অচেনা জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটল এলাকার অটো ও রিকশাচালকদেরও। স্থানীয় রিকশাচালক কমলেশ মণ্ডল অনুতাপ করে বলেন, ‘‘রিকশায় শিশুদের লাফালাফিতে রেগে গিয়ে ওদের বাবা-মায়েদের অনেক সময়ে বাজে কথা বলেছি। আজ বুঝতে পারলাম, ওঁদের কোনও দোষ নেই। এর পরে রিকশায় ওঠার সময়ে বাচ্চার অসুবিধার কথা বললে আমরা সতর্ক থাকব।’’ অটোচালক প্রবীর মাজি আবার বললেন, ‘‘এমন সমস্যা তো আমাদের বাচ্চাদেরও হতে পারে। এখানে এসে জানলাম আমরা ওদের কী ভাবে সাহায্য করতে পারি। পরিচিতদের মধ্যে এমন কাউকে দেখলে সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করব।’’

অনুষ্ঠানের আগে শনিবার বিকেল থেকে অটোয় চেপে এলাকায় অটিজম নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন শালিনী চক্রবর্তী, মধুমিতা গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মায়েরা। রবিবার মধুমিতা বলেন, ‘‘লিফলেট নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে খুব সঙ্কোচে কড়া নেড়েছিলাম। এক সময়ে এঁরাই বলেছিলেন আমার ছেলে পাগল। ওকে যেন ঘরে বন্ধ করে রাখি। আজ তাঁরাই বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান অটিজম কি তা বুঝতে।’’ এই আচরণ পেয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন মায়েরা। তাঁদের বিশ্বাস, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে অজানার অন্ধকার এ ভাবেই একটু একটু করে ফিকে হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Child Autism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE