Advertisement
E-Paper

মোবাইল-টিভির আশ্রয়ে নয়, মাঠঘাটে দৌড়ে বাড়ুক শিশুরা 

হু-র ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মোবাইল, টেলিভিশনে কার্টুন দেখা বা কম্পিউটারে ভিডিয়ো গেম্‌স খেলা উচিত নয়। শিশুর বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে হলে, মোবাইল, টেলিভিশনের পর্দায় সময় কাটানোর সীমা এক ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া উচিত।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০১:৪৩
ময়দানে খেলছে শিশুরা। ফাইল চিত্র

ময়দানে খেলছে শিশুরা। ফাইল চিত্র

দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল। তারই ফল হিসেবে মোবাইল, টেলিভিশনের আসক্তি থেকে শৈশব রক্ষায় নির্দেশিকা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। শিশুরা যাতে মাঠঘাটে খেলা করে বড় হয়, সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।

হু-র ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মোবাইল, টেলিভিশনে কার্টুন দেখা বা কম্পিউটারে ভিডিয়ো গেম্‌স খেলা উচিত নয়। শিশুর বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে হলে, মোবাইল, টেলিভিশনের পর্দায় সময় কাটানোর সীমা এক ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া উচিত। এক ঘণ্টার কম হলে আরও ভাল। ওই নির্দেশিকা আরও বলছে, সব সময়ে প্র্যাম, বিছানা বা পরিজনেদের কোলে করে ঘোরানো ঠিক নয় শিশুদের। বাড়ির মেঝেতে খেলতে দেওয়া দরকার। তিন-চার বছরের শিশুদের অন্তত তিন ঘণ্টা মাঠঘাট, পার্কে ছুটে বেড়ানো জরুরি বলে মত হু-র বিশেষজ্ঞদের। শিশুদের পরিমাণ মতো ঘুম নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশিকার তাৎপর্য ব্যাখ্যায় শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানান, মস্তিষ্কের বিকাশে শিশুর পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যে অভ্যাসগুলি গড়ে ওঠে, তার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাবা-মা দু’জনেই কাজে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বাড়িতে তাকে রাখার জন্য আয়া শিশুর সামনে মোবাইল বা টিভি চালিয়ে দিচ্ছেন! ৬-৭ মাস বয়স থেকে শিশুর মোবাইল নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, এমন ঘটনাও পেয়েছি। এ ধরনের শিশুদের মনঃসংযোগে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে অধিকাংশ মায়েরা অনুযোগ করেন। সমস্যার সমাধানে অনেকে সন্তানের সামনে মোবাইল অথবা টেলিভিশনে কার্টুন চালিয়ে দেন। চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন বলেন, ‘‘বাবা-মা বোঝেনই না সন্তানের কতটা ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল দেখে ‘এ ফর অ্যাপেল’ শিখছে। তাতে শিশুর সৃষ্টিশীলতা কমছে। মোবাইল, টিভিতে আসক্তি থেকে সামাজিক মেলামেশায় অভ্যস্ত হচ্ছে না। শিশু দেরিতে কথা বলতে শিখছে। ছোটরা যদি ঘরে হামাগুড়ি না দেয়, তা হলে হাঁটা শিখবে কী ভাবে?’’ ছোটবেলায় পরিশ্রম করার অভ্যাস তৈরি না হওয়ায় শিশুদের মধ্যে মোটাত্বের প্রবণতা বাড়ছে। যার জেরে বড় হয়ে টাইপ টু ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হার্টের সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক সুমন্ত্র সরকার বলেন, ‘‘সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে বিভিন্ন বয়সের অনুপাতে হু যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তা প্রত্যেক অভিভাবকের মেনে চলা উচিত।’’

মোবাইল-টেলিভিশনে আসক্তি শৈশবের উপরে কী প্রভাব ফেলছে, তা পেডিয়াট্রিক সার্জেন্ট অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘যে বয়সে যত ওজন হওয়া উচিত, তার তুলনায় অনেক বেশি ওজনের বাচ্চা দেখি। সেখান থেকে বিভিন্ন রকম রোগের যোগসূত্র রয়েছে। ছোট ছোট শিশুরা পিঠে, গাঁটে, মাথা ব্যথার সমস্যা নিয়ে আসে। প্রাথমিক ভাবে মাথা ব্যথার সমস্যা অবজ্ঞা করা হলে, পরে তা মাইগ্রেনে পরিণত হতে পারে।’’ হু-র নির্দেশিকার সুরেই তিনি বলেন, ‘‘শিশুদের সাঁতার, দৌড়, ক্রিকেট, ফুটবলের মতো খেলায় যোগ দেওয়া উচিত। ছড়া বলা, গান করা, অন্য শিশুদের সঙ্গে মেশা খুব দরকার।’’

এ প্রশ্নে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান শিশুদের চক্ষু চিকিৎসক ঈপ্সিতা বসু। তিনি জানান, এক বার বছর পাঁচেকের এক শিশুর

অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে স্কুলে বোর্ড দেখতে পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে। ওই শিশুকে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার চোখে সমস্যা নেই। তা হলে? চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পরে বুঝলাম, গ্যাজেটে ছেলে অনেক বেশি সময় কাটায়। মনঃসংযোগে যার প্রভাব পড়েছে। ফলে মনে হচ্ছে, ব্ল্যাকবোর্ড দেখতে পাচ্ছে না। আসল কারণ কিন্তু তা নয়।’’ খুব বেশি মোবাইল আসক্তি থেকে রোদে দেখতে অসুবিধা হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। হু-র চিকিৎসক ফিয়োনা বুল বলেন, ‘‘এই পরামর্শগুলি মেনে চললে শৈশবে মোটা হয়ে যাওয়া ও তা থেকে পরে যে রোগগুলি হয়, তা ঠেকানো সম্ভব।’’

Playground Children Mobile Television
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy