কয়েকটি ট্রায়ালে শ্বাসনালীর কিছু সংক্রমণে কাজ দিয়েছে যক্ষ্মার টিকা বা বিসিজি। ফাইল ছবি
মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনার পোস্ট ডক্টরেট শিল্পক চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে আইআইসিবি-র একজন বিজ্ঞানী। দীর্ঘদিন কাজ করছেন ইমিউনোমেটাবলিজম ও টি সেল বায়োলজি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘বিসিজি ভ্যাকসিন তো নিজেই একধরনের মাইকো ব্যাক্টিরিয়া,কার্যকরী ক্ষমতার কারণে ইমিউন রেসপন্সের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এটি।’’ শিল্পকবাবু বলেন, ‘‘বিসিজি ভ্যাকসিনেশন কিন্তু আগে কয়েকটি ট্রায়ালে শ্বাসনালীর কিছু সংক্রমণ, ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ কয়েকটি ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিরোধে কাজ করেছে। কোভিড-১৯ একটি আরএনএ ভাইরাস, তাই ভাবা হচ্ছে কাজ করতে পারে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকায় এ নিয়ে কাজ হয়েছে।’’
বিসিজি ভ্যাকসিনেশন কী ভাবে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করবে?এটি তো ব্যাক্টিরিয়া।
শিল্পকবাবু বলেন,ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশন জার্নালে এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি স্টাডির রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে। হেপাটাইটিসের উপরেও বিসিজি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে। ইতিবাচক ফল মেলার কারণেই কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনা-আবহে দাঁতের চিকিৎসায় অবহেলা করছেন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
যদিও সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বিসিজি ভ্যাকসিনে কোভি়ড-১৯ সংক্রমণের প্রতিরোধের বিষয়টিতে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিতে একেবারেই নারাজ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে বলছেন তিনি। মেডিসিনের চিকিৎসক রাজর্ষি সেনগুপ্ত বলেন, বিসিজি টিকার সঙ্গে কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনও প্রমাণই মেলেনি। সরাসরি কোনও বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে টি লিম্ফোসাইটজনিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে‘সেলুলয়েড ইমিউনিটি’ বাড়লে অন্য রোগ প্রতিরোধও সহজ হবে। করোনার ক্ষেত্রেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা। ইটালির কিছু ক্ষেত্রে বিসিজি দেওয়া হয় না। সে ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণের তীব্রতা অনেকটাই বেশি। কিন্তু বিসিজি দিলেই করোনা ভয়ঙ্কর হবে না, এ রকম কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। এই সিদ্ধান্তে আসতে গেলে নানা বয়সের বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ‘কো মর্বিড ফ্যাক্টর’-সহ পরীক্ষামূলক ট্রায়াল প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
টিবির ভ্যাকসিন দেওয়া থাকলেই যে করোনা হবে না, এ কথা একেবারেই ঠিক নয়, এমনটাই জানালেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজির বিভাগীয় প্রধান রিনারানি রায়। ‘পার্সোনালাইজড মেডিসিন’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ভাইরাসটি ক্রমাগত মিউটেট করে বদলে যাচ্ছে। বদলাচ্ছে উপসর্গও। প্রতিটি মানুষের জিনগত গঠন আলাদা। সে ক্ষেত্রে এটি মাথায় রাখা জরুরি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিসিজি দেওয়া থাকলে হয়তো প্রতিরোধ শক্তি বেড়েছে। কিন্তু একই কথা সবার ক্ষেত্রে কখনওই খাটতে পারে না। ঠিক যেমন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিসিজি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে তা মানুষকে করোনা থেকে বাঁচাবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। অস্ট্রেলিয়াতে ট্রায়াল হলেও প্রমাণিত হয়নি। নিশ্চিতভাবে বলার সময় এখনও আসেনি। তাই বিসিজি দেওয়া আছে বলে প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব না দিলে, বিপদ আরও বাড়বে।’’