Advertisement
১১ মে ২০২৪
lockdown

ক্যানসার চিকিৎসায় ফলো আপ বন্ধ করলে বিপদে পড়বেন

করোনার জন্য ক্যানসারের চিকিৎসায় কি কোনও বদল এসেছে?

ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ফাঁক পড়লে লকডাউনেই ধেয়ে আসতে পারে বিপদ। ছবি: শাটারস্টক।

ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ফাঁক পড়লে লকডাউনেই ধেয়ে আসতে পারে বিপদ। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ১৬:২৪
Share: Save:

নিতান্ত দরকার না হলে ডাক্তারের কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছেন সকলেই। এর ফলে আচমকা চরম বিপদে পড়ছেন ক্যানসারের রোগীরা, সবিস্তার জানালেন সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট শুভদীপ চক্রবর্তী।

ক্যানসারের ফলো আপ চিকিৎসা কি করাতেই হবে?

যাঁদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, কোনও উপসর্গ নেই, তাঁদের যদি লকডাউনের মধ্যে ফলো আপ করানোর দিন পড়ে, তাঁরা টেলিফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। কয়েক দিন অপেক্ষা করে ফলো আপ করালে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এর মধ্যে যদি কোনও ছোটখাটো উপসর্গ দেখা দেয়, কিংবা জ্বর, সর্দি হয়, সামান্য মনে করে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় ছোটখাটো উপসর্গ দিয়ে রোগ ফিরে আসার ইঙ্গিত থাকে।

অনেকের সদ্য ক্যানসার ধরা পড়েছিল, সার্জারির আগেই লকডাউনের মধ্যে পড়ে যান। তাঁদের কি অপেক্ষা করা উচিত?

এ ক্ষেত্রে ক্যানসার যুক্ত টিউমারকে ছোট করে নিতে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের সাহয্য নেওয়া হয়। এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নিয়ে সার্জারি করিয়ে চিকিৎসা সম্পুর্ণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। আরও একটা কথা বলা দরকার। অনেক সময় সর্দি-কাশি-জ্বর হলে কোভিড-৯-এর উপসর্গ ভেবে পরীক্ষা করে কোনও জীবাণু না পেয়ে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ফুসফুসের ক্যানসার হলেও এই একই উপসর্গ দেখা যায়। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। যে কোনও ক্যানসার সারভাইভারের জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

আরও পড়ুন: করোনা ঠেকাতে ফুসফুসের যত্ন নিন, খাবার পাতে থাকুক এ সব

করোনার জন্য ক্যানসারের চিকিৎসায় কি কোনও বদল এসেছে?

ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯ মহামারির মতো অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। সীমিত জ্ঞানের কারণে স্ট্যান্ডার্ড নির্দেশিকা পরিবর্তিত হচ্ছে, ফলস্বরূপ ক্যানসারের চিকিত্সায় কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর চিকিত্সায় প্রতি দিন কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ক্যানসারের চিকিত্সায় ভাল ফল পেতে আমাদের প্রোটোকলগুলি সংশোধন করছি।

ক্যানসারে আক্রান্তদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে কি বিপদ বাড়ে?

এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে ক্যানসার আক্রান্তদের করোনার সংক্রমণ হলে তাঁদের মৃত্যুর হার ২০ শতাংশেরও বেশি। তাই ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে বা যাঁরা এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের বাড়তি সাবধান হওয়া দরকার। বাড়ির অন্য সদস্যরা বাইরে গেলে স্নান না করে ক্যানসারের রোগীর ঘরে যাবেন না, বাইরে থেকে আনা ব্যাগ বা অন্য সামগ্রী রোগীর ঘরে আনবেন না। ঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, ঘরে যেন আলো-বাতাস থাকে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। জ্বর-সর্দি ছাড়াও ক্লান্তি বোধ, স্বাদ ও গন্ধের বোধ কমে যাওয়া, পেশিতে ব্যথা অনেক সময় করোনার উপসর্গ হতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেও সাবধান হতে হবে।

কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে ক্যানসারের জন্য প্রয়োজনীয় সার্জারি করানো উচিত।

কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে কি ক্যানসারের চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হয়?

করোনার চিকিৎসার পাশাপাশি জরুরিভিত্তিক ক্যানসার চিকিৎসা করা দরকার।

জরুরি ভিত্তিতে ক্যানসার সার্জারি এই পরিস্থিতিতে কি করা হচ্ছে?

মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে কিছু সমস্যা থাকলেও ক্যানসারের জন্যে ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রয়োজন হলেই নানান সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে রোগীর সার্জারি করা হচ্ছে। তবে সার্জারির ক্ষেত্রে একটি নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার কোভিড-১৯ নেগেটিভ হলে তখনই সার্জারি করা হয়, নইলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়।

আরও পড়ুন: মৃতদেহ থেকে কি কোভিড সংক্রমণ ছড়ায়?

করোনার কারণে ক্যানসারের চিকিৎসার সুযোগ কি কমে গিয়েছে?

হ্যাঁ, অনেকটাই কমে গিয়েছে। প্রথমত, দূরের রোগীরা গাড়ির অভাবে হাসপাতালে পৌঁছতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, অতিমারির কারণে মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে অন্যান্য চিকিৎসা সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। এর ফলে অনেক ক্যানসার আক্রান্ত সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অসুখের স্টেজ বেড়ে যাচ্ছে, আবার অনেকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে হাসপাতালে আসছেন বলে চিকিৎসার সুযোগই পাওয়া যাচ্ছে না।

করোনার কারণে ইদানীং ক্যানসার রোগীদের পাশাপাশি কাছের মানুষজনের মনেও খুব চাপ পড়ছে। এদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ঘরবন্দি থাকার জন্য অনেক মানুষের মনেই চাপ পড়ছে। ক্যানসার থাকলে এমনিতেই মানসিক স্ট্রেস থাকে, তার ওপর কোভিড-১৯-এর ভয়। তাই কোনও রকম ছোটখাটো উপসর্গ হলেই ক্যানসার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, বাড়িতে বসে থাকলে চরম বিপদে পড়বেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে রক্তের চাহিদা তুঙ্গে উঠবে, রক্তদানের ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। হাসপাতালগুলির উপরেও বাড়তি চাপ পড়বে। তার জন্য চিকিৎসক-সহ সহায়ক কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। করোনার সময় বাড়িতে থাকুন আর পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রোজকার ওষুধ খেতে ভুললে চলবে না। নিয়ম করে প্রাণায়াম ও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। মন ভাল রাখতে টেলিফোনে বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে গল্প করুন, মজার বই পড়ুন, আর সারা ক্ষণ করোনার খবর দেখবেন না।

সাক্ষাৎকার: সুমা বন্দ্য়োপাধ্যায়

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lockdown Cancer Covid-19 Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE