Advertisement
০৯ মে ২০২৪
CORONAVIRUS

পাওয়া গেল করোনার ওষুধ? মার্কিন বিজ্ঞানীর দাবিতে আশার আলো

‘‘ওই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও শিকার হতে হয়নি,” বলছেন বিজ্ঞানীরা।

করোনা সংক্রমণ রুখতে রেমডেসিভির সফল হয়েছে, দাবি মার্কিন বিজ্ঞানীর। -ফাইল ছবি।

করোনা সংক্রমণ রুখতে রেমডেসিভির সফল হয়েছে, দাবি মার্কিন বিজ্ঞানীর। -ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ১০:৩৯
Share: Save:

করোনা-চিকিৎসায় আশার আলো। আক্রান্তের শরীরে করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখে সংক্রমণ ঠেকানোর মতো ‘অ্যান্টি ভাইরাল’ ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। বুধবার এমনটাই দাবি করেছেন আমেরিকার প্রথম সারির মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাওসি। ‘রেমডেসিভির’ নামের ওই ওষুধের কথা জানার পর বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসক মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে। তাদের মতে, এত দিন করোনা-চিকিৎসা আঁধারে পথ হাতড়াচ্ছিল। এ বার ‘অ্যান্টি ভাইরাল’ আবিষ্কার হওয়ায় সেই অন্ধকারে তারার দেখা দিল। চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, করোনার ঘরে ঢুকে তাকে মারতে সক্ষম হবে এই ‘রেমডেসিভির’।

ফাওসি আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর প্রধানও বটে। ‘রেমডেসিভির’-এর কথা জানিয়ে তিনি বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে ফাওসি বলেন, “আমরা বহু পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে।’’ তিনি জানিয়েছেন, এই ওষুধ কতটা কার্যকরী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ৬৮টি জায়গায় ১ হাজার ৬৩ জন করোনা রোগীর উপর তা প্রয়োগ করে ট্রায়াল চালানো হয়। “দেখা গিয়েছে, করোনা রোগীদের শরীরে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রুখে দিতে পারে রেমডেসিভির। আর ওই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও শিকার হতে হয়নি,” বলেন ফাওসি।

আক্রান্তের শরীরে কী ভাবে কাজ করবে ‘রেমডেসিভির’?

চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানাচ্ছেন, যে কোনও অ্যান্টি ভাইরালের কাজই হচ্ছে শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসকে ধ্বংস করা এবং তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে করোনা-আক্রান্তের শরীরে ওই মারণ ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখে সংক্রমণ ঠেকাবে রেমডেসিভির। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কোনও ভাইরাস মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে তার ভিতর বংশবৃদ্ধি চালিয়ে সেই কোষটিকে ধ্বংস করে। তার পর সে আক্রমণ চালায় পাশের কোষে। এ ভাবেই একের পর এক কোষ ধ্বংস করে সে। আর মারণ ভাইরাস নিয়ে যায় মৃত্যুর পথে। কিন্তু অ্যান্টি ভাইরালের কাজ হল, আক্রান্ত কোষে ঢুকে আগেই ওই ভাইরাসকে ধ্বংস করা। তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। ফলে ভাইরাসটি আর অন্য কোষকে আক্রমণ করতে পারবে না। এতে সংক্রমণ রুখে দেওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আসলে করোনার ঘরে ঢুকে তাকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে এই অ্যান্টি ভাইরাল।’’

আরও পড়ুন: করোনার টিকা তৈরিতে এগিয়ে অক্সফোর্ড, পরীক্ষায় সফল হলে বাজারে আসতে পারে সেপ্টেম্বরে

ইতিমধ্যেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩২ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষের। কিন্তু তেমন ভাবে কোনও অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকেরা পথ হাতড়েছেন অন্ধকারে। ‘রেমডেসিভির’ সেই অন্ধকার পথেই আশার আলোর ঝলক দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ রাজেশ টি গাঁধীর কথায়, ‘‘আপনাকে তো এই যুদ্ধের সময় দরজার বাইরে পা-টা রাখতে হবে। এবং এটা নিশ্চিত, প্রথম হলেও এটা অত্যন্ত ভাল একটি পদক্ষেপ।’’ রাজেশ হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলেরও অধ্যাপক। অ্যান্টি ভাইরাল আবিষ্কার হওয়ায় তিনি ভীষণই উত্তেজিত। বলছেন, ‘‘প্রথম দিকের ফলাফলগুলো এতটাই চিকিৎসার অনুকূলে যে, এই অ্যান্টি ভাইরাল সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট আশাবাদী। করোনা-চিকিৎসায় আজ আমরা যে অবস্থানে রয়েছি, এই অ্যান্টি ভাইরাল তার থেকে আরও অনেক বেশি বুঝতে সাহায্য করবে।’’

তবে সকলেই যে এই এই অ্যান্টি ভাইরাল নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত, তেমনটা নয়। এরিক টপল ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোল্লায় ‘স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রানজিশনাল ইনস্টিটিউট’-এর ডিরেক্টর। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনও ব্রেক থ্রু ওষুধ নয়। সবটা মিলিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। আমি তো বিভ্রান্ত হয়ে রয়েছি এখনও।’’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তবে এটা ঠিক, শুরুর শুরু হিসেবে এটা দুর্দান্ত। এবং নিরাপদ।’’

কী ভাবে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে?

আরও পড়ুন: কাঁপুনি, মাথার যন্ত্রণা? এ গুলোও করোনার উপসর্গ হতে পারে, বলছে মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা

অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘এটা একটা ইনজেকশন, শিরায় দিতে হয়। সব মিলিয়ে পাঁচ দিন। প্রথম দিন ২০০ মিলিগ্রাম এবং পরের চার দিন ১০০ মিলিগ্রাম করে।’’ কিন্তু আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর এই গবেষণা তো কোনও জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। বিষয়টিকে তেমন ভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ অভিজিৎবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘এখন একটা যুদ্ধ চলছে। এই সময়ে জার্নালে প্রকাশ হওয়াটা জরুরি, নাকি মানুষের প্রাণ বাঁচানো? প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, এই অ্যান্টি ভাইরাল সংক্রমণ রুখতে সাহায্য করছে। করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধি ধ্বংস করতে পারছে। এটাই এখন অনেক। এত দিন তো অন্ধকারে সবটা হাতড়াচ্ছিলাম। এখন একটা তারা দেখা তো দিয়েছে। হ্যাঁ, একটা তারা দিয়ে হয়তো আকাশ ভরানো যাবে না, কিন্তু আলোর রেখাটা তো মিলল।’’

তবে ফাউসি জানিয়েছেন, এই ওষুধ আপাতত হাসপাতালে ভর্তি যে সমস্ত করোনা-আক্রান্ত লড়াই করছেন, তাঁদের উপরেই প্রয়োগ করা ভাল। যাঁদের সামান্য উপসর্গ বা করোনাকে যুঝে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের উপর প্রয়োগ এই মুহূর্তে না করলেও চলবে। কারণ, ‘রেমডেসিভির’ এখনও সহজলভ্য নয়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE