কোভিড আক্রান্তদের বিপদে ছুটে যাচ্ছেন কোচবিহারের বিপুল পাল।
বহুবার টাকা-পয়সা জোগাড় করে দোকানেও ঘুরে এসেছেন। কিন্তু সাধের মোটরসাইকেল এখনও কিনে ওঠা হয়নি। অগত্যা সাইকেলই ভরসা। আর সেই সাইকেল নিয়েই মানুষের বিপদ-আপদে ছুটে যাচ্ছেন কোচবিহারের বিপুল পাল। কোভিড রোগীর বাড়িতে ওষুধ পৌঁছনো থেকে শুরু করে হাসপাতালে ভর্তি করানো, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছেন বিপুল।
গত বছর স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের হাতে শুকনো খাবার, বইখাতা, পেন-পেন্সিল এবং স্যানিটাইজার তুলে দিয়েছিলেন বিপুল ও তাঁর সঙ্গীরা। এ বছর আর অর্থের ব্যবস্থা হয়নি। কিন্তু তাতেও দমে যাননি বিপুল। পাড়ার মধ্যেই কোভিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কাউকে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছেন, কারও জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দিচ্ছেন, আবার কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে সাহায্য করছেন। যখন যাঁরা ডাকছেন, পৌঁছে যাচ্ছেন বিপুল।
বর্তমানে কোচবিহার পরিবহণে কর্মরত বিপুল। কর্মসূত্রে এর আগে তিনি কলকাতা এবং বহরমপুরেও ছিলেন। তবে ছোটবেলা কেটেছে গ্রামেই। বিপদের সময়ে সকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমন পরিবেশেই বড় হয়েছেন তিনি। মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা তাঁর বহুদিনের। গত বছর নিজেও কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীও। তিনি বাড়িতে সেরে উঠলেও স্ত্রী ২১ দিন কোভিড-হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাই এই অসুখ খুব কাছ থেকে দেখেছেন বিপুল। কোন পরিস্থিতিতে কী করণীয়, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হয়ে গিয়েছে। তাই যাঁদের তা নেই, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত বিপুল।
‘‘অনেকেই করোনা নিয়ে খুব ঘাবড়ে থাকেন। তাঁদের আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করি যে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে ভয়ের কোনও কারণ নেই। আবার অনেকে বড্ড অবহেলা করছেন রোগটা। সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন না। তখন ফোনে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যেতে পারে, সে তথ্যও দিয়ে দিচ্ছি,’’ বললেন বিপুল।
প্রথমে চিকিৎসায় অবহেলা করায় মৃত্যুও দেখেছেন বিপুল। কোনও মতেই তা যেন আবার না ঘটে, সে দিকে নজর দিয়েছেন তিনি। পাড়ায় কেউ জ্বর বা কাশির মতো অভিযোগ করলে তিনি কোভিড-পরীক্ষা করানোয় জোর দিচ্ছেন। তাঁরা কিছু না জানালে, নিজেই যোগাযোগ করে খোঁজ নিচ্ছেন।
যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, তাঁদের চিকিৎসার খরচ কমানোর ব্যবস্থা করছেন। কোথায় সেই রোগীদের ভর্তি করানো যায়, কী ভাবে তাঁদের অন্যান্য সাহায্য করা যায়, খেয়াল রাখছেন বিপুল। তবে তাঁর একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়। বিষ্ণু মণ্ডল, পঙ্কজ মাহাতো, সোমনাথ ভট্টাচার্য এবং গৌতম কুণ্ডুর মতো কয়েকজন বন্ধুকে পাশে পেয়েছেন বলেই সবটা সম্ভব হচ্ছে বলে জানালেন বিপুল। যেখানে তাঁর সাইকেল দ্রুত পৌঁছতে পারছে না, সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন বন্ধুরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy