Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
COVID-`19

Covid Hero: বাবাকে হারিয়ে সহনাগরিকদের বাঁচানোর লড়াই স্কুলপড়ুয়া স্তুতির

এ ভাবে ব্যস্ত থাকলে মনও শান্ত থাকছে তার। না হলেই যে বাবার কথা মনে পড়ছে! আর কান্না পাচ্ছে!

করোনা  আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর সময় থেকে নিরন্তর চলছে বছর পনেরোর স্তুতি অভলানির লড়াই।

করোনা আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর সময় থেকে নিরন্তর চলছে বছর পনেরোর স্তুতি অভলানির লড়াই। ফাইল চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৯:২২
Share: Save:

নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি। তাই বলে আর কেউ যেন বাবা-মাকে না হারান। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর সময় থেকে নিরন্তর চলছে বছর পনেরোর স্তুতি অভলানির লড়াই। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাত-দিন এক করে চলছে তার কাজ। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাই তার ভরসা। একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রী শুধু কলকাতার মানুষকে সাহায্য করছে, এমন নয়। দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু, নয়়ডা থেকে মুর্শিদাবাদ— যার যেখানে হাসপাতালে শয্যার সন্ধান চাই, এনে দিচ্ছে সে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ, আক্রান্ত পরিবারে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে। নেটমাধ্যমে মুখ গুঁজে বসে থাকার জন্য বকুনি খেতে হয় ওর বয়সি অনেককে। সেই মাধ্যম ব্যবহার করেই এখন খারাপ সময়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে স্তুতি।

থিয়েটার রোডে বাড়ি। দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে কলা বিভাগে পড়াশোনা। আর তার সঙ্গে চলছে জনসেবা। আদতে গুজরাতের বাসিন্দা স্তুতিরা। তবে তার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা এখানেই। এই শহরেই বাবার ব্যবসা ছিল। এখন তা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন মা। স্তুতি এই বয়সেই টের পেতে বাধ্য হচ্ছে, একজনের মৃত্যু কী ভাবে ওলট-পালট করে দিতে পারে গোটা পরিবারকে। তার বক্তব্য, ‘‘করোনা আমার মতো বহু পরিবারের ক্ষতি করেছে। আমি তবু কয়েকজন ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীকে চিনি। পরিবারের সূত্রেই। সেই যোগাযোগ ব্যবহার করে অন্যের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’’ এ ভাবে ব্যস্ত থাকলে মনও শান্ত থাকছে তার। না হলেই যে বাবার কথা মনে পড়ছে! আর কান্না পাচ্ছে!

চোখে জল আনার সময় নয় এখন, গলায় জোর এনে জানায় একাদশ শ্রেণি। মা-ও নিজেকে ব্যস্ত রাখে। বাবার ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। মায়ের ভাল লাগে, মেয়ে অনেক মানুষের কথা ভাবছে জেনে। যে এত জনের কথা চিন্তা করে, সে যে ঠিক লেখাপড়াও করে নেবে, সেই ভরসা রাখেন মা। তাই মেয়ে ভোর ৬টা থেকে রাত ২টো পর্যন্ত নেটমাধ্যম আর ফোন ঘাঁটলে মায়ের চিন্তা হয় না।

‘কোভিড সহযোগ’ নামে এক হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে রাজ্য ও দেশের অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে স্তুতি। জানাচ্ছে, সেই গ্রুপে সকলেই তার থেকে বয়সে বড়। ইনস্টাগ্রামের কতটা দৌড়, তা তাঁদের অনেকের জানা নেই। তাঁদের নেটমাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ খুঁজে বার করতে সাহায্য করে স্তুতি। বলছে, ‘‘আমাদের মতো কাজ অনেকেই করছেন। কিন্তু বড়রা ইনস্টাগ্রাম, টুইটার অতটা সামলাতে পারেন না। আমরা ছোটরা ভাল বুঝি। তাই অনায়াসে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলি।’’ নেটমাধ্যম ব্যবহার করার সেই দক্ষতাই কাজে লাগাচ্ছে সদ্য পিতৃহারা এই মেয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE