Advertisement
১১ মে ২০২৪

রাস্তায় ছড়িয়ে দেহ, হাসপাতালেও মৃত্যুফাঁদ

বেডগুলো সব ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। রোগী নেই বললেই চলে। নতুন করে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হতেও আসছেন না। আসবেনই বা কোন ভরসায়! ইবোলার ছোবল থেকে যে রক্ষা পাননি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। বরং বহিরাগত কেউ শহরে এলেই স্থানীয় লোকজন সতর্ক করে দিচ্ছেন, “ও দিকে হাসপাতাল, যাবেন না।” হাসপাতাল তো নয় যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’। সে প্রসঙ্গ উঠতেই এক স্বাস্থ্যকর্মী বলে উঠলেন, “ওর দেওয়ালে হাত দিলেও বিপদ! জীবাণু রয়েছে সেখানেও!”

সংবাদ সংস্থা
কেনেমা (সিয়েরা লিয়ন) শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

বেডগুলো সব ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। রোগী নেই বললেই চলে। নতুন করে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হতেও আসছেন না। আসবেনই বা কোন ভরসায়! ইবোলার ছোবল থেকে যে রক্ষা পাননি ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও।

বরং বহিরাগত কেউ শহরে এলেই স্থানীয় লোকজন সতর্ক করে দিচ্ছেন, “ও দিকে হাসপাতাল, যাবেন না।” হাসপাতাল তো নয় যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’। সে প্রসঙ্গ উঠতেই এক স্বাস্থ্যকর্মী বলে উঠলেন, “ওর দেওয়ালে হাত দিলেও বিপদ! জীবাণু রয়েছে সেখানেও!”

সিয়েরা লিয়নের অন্যতম বড় শহর কেনেমার ছবিটা এ রকমই। শহর, লাগোয়া গ্রামগুলোয় লোকজন বাড়িতেই প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। যে ক’জন আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, একে একে মৃত্যুর খবর আসছে তাঁদেরও।

মৃতদের কবর দেওয়ার জন্য যে দল গড়া হয়েছে, তার গুরুদায়িত্বে স্বাস্থ্যকর্মী অ্যালবার্ট জে মাট্টিয়া। বললেন, “গ্রামগঞ্জে পাঁচ-ছ’জন করে মারা যাচ্ছেন প্রতি দিনই। আর তাঁদের দেহগুলো রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন পরিজনেরা। ও ভাবেই আরও রোগ ছড়াচ্ছে।” পরিত্যক্ত দেহগুলো কবর দিতে হচ্ছে অ্যালবার্টের দলকেই। বললেন, “খুব বিপজ্জনক...। সামান্য ভুলচুক হলেই মৃত্যু।”

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

গত মার্চ মাসে ইভিডি (ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ) ছড়ানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু সিয়েরা লিয়নেই মারা গিয়েছেন ২৮০ জন। আফ্রিকার চার দেশে (গিনি, সিয়েরা লিয়ন, লাইবেরিয়া ও নাইজিরিয়া) আক্রান্ত ১৭১১ জন। তার মধ্যে এই দেশেই সংক্রমণ ঘটেছে ৬৯১ জনের দেহে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা এখন রোগ প্রতিরোধের উপরেই জোর দিচ্ছেন। আরও বেশি করে তৈরি করা হচ্ছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। সে সঙ্গে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বিপজ্জনক এলাকাগুলোকে।

কিন্তু মুখে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন উঠছেই। হাসপাতালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আইসোলেশন চেম্বারের তাঁবু খাটাতে হচ্ছে হাসপাতালের পিছনের মাঠে। এ দিকে ডাক্তার-নার্স নেই। গত ক’মাসে অন্তত ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন কেনেমায়।

একই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন লাইবেরিয়ায় ইউনিসেফের প্রতিনিধি ফাজলুল হক-ও। জানালেন, সে দেশেও বন্ধ বহু হাসপাতাল। ৬৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত। বাকিরা সংক্রমণের ভয়েই হাসপাতালে পা বাড়াচ্ছেন না। গত এক সপ্তাহে লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়াতে ৬ জন ডাক্তার ও ২৩ স্বাস্থ্যকর্মী নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ইভিডি-তে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশের সরকার। কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে লাইবেরিয়ার কিছু এলাকা। এখানেও রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে মৃতদেহ। শেষকৃত্য করারও লোক মিলছে না।

স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসেবে আফ্রিকায় কাজ করতে এসেছেন অ্যালেক্স মোয়েন। তাঁর কথায়, “ভয়ানক জায়গা। দিনে ৫০ বার হাত ধুতে হচ্ছে। চিকিৎসার ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই।” ভিনদেশি কাউকে দেখলেই সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, “কেন এসেছেন! ফিরে যান। কিছু না কিছু ভুল করে বসবেনই। সংক্রমণ অবধারিত। আর মৃত্যুও।”

ভারতে কন্ট্রোল রুম

দেশে এখনও কেউ আক্রান্ত না হলেও ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ প্রতিরোধে দিল্লিতে কন্ট্রোল রুম চালু করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই তিনটি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেই ইবোলা ভাইরাস ও রোগ সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানা যাবে: ২৩০৬৩২০৫, ২৩০৬১৪৬৯ এবং ২৩০৬১৩০২।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE