Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘শুরুতে ধরা পড়লে সেরে যায় অবসাদও’

প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক অবসাদের লক্ষণ, প্রকারভেদ এবং চিকিৎসা বিষয়ে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিকে সৌমিত্র কুণ্ডুকে জানালেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান নির্মল বেরাপ্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক অবসাদের লক্ষণ, প্রকারভেদ এবং চিকিৎসা বিষয়ে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিকে সৌমিত্র কুণ্ডুকে জানালেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান নির্মল বেরা

নির্মল বেরা।

নির্মল বেরা।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

প্রশ্ন: বিষাদ কী কেন হয়?

উত্তর: অন্যান্য রোগের মতো বিষাদ বা ডিপ্রেশনও একটা রোগ। এটা মনের অসুখ। কোনও একটা কারণে হয়, তা নয়। অনেক কারণ থাকে। জেনেটিক ফ্যাক্টরের জন্যও ঘটে। বাবা-মায়ের থাকলে সন্তানের হতে পারে। শতকরা চার-পাঁচ জন এ রোগে ভোগেন।

প্রশ্ন: এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, শারীরবৃত্তিয় ব্যাপার রয়েছে?

উত্তর: পিছনে বায়োকেমিক্যাল ফ্যাক্টর রয়েছে। মস্তিষ্কে বিভিন্ন রাসায়নিক রয়েছে। তার মধ্যে সেরটনিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক রয়েছে। যার ভারসাম্য নষ্ট হলে বিষাদ দেখা দেয়। বিষাদে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে সামাজিক কারণ, ট্রেস রিলেটেড ফ্যাক্টর, আর্থিক পরিস্থিতি, শারীরিক অবস্থা। সামাজিক কারণের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়, পরিচিতদের সঙ্গে মেলামেশা, কথাবার্তা-সহ নানা বিষয় থেকে বিষাদ আসতে পারে। কোনও কিছু নিয়ে মানসিক চাপে থাকা। কাজের চাপ। অফিসের কাজকর্ম হতে পারে বা অন্য কিছু। আবার, আর্থিক পরিস্থিতি ভাল না-থাকলে মানসিক বিষাদ দুর্দশা থকে গ্রাস করতে পারে। দুরারোগ্য রোগ বা দীর্ঘদিন ধরে রোগভোগ থেকেও বিষাদ জন্ম নিতে পারে। বিভিন্ন বায়োক্যামিক্যাল ফ্যাক্টর মিলেমিশে বিষাদ হয়।

প্রশ্ন: বিষাদ-অবসাদে আক্রান্ত কী ভাবে বোঝা যাবে?

উত্তর: কতগুলো বিষয় রয়েছে। ন’টা উপসর্গ রয়েছে। যাকে সিজেক্যাপসডি (এসআইজিইসিএপিএসডি) বলে। এটা ভাঙলে কতগুলো শব্দ পাওয়া যায়। এস: স্লিপ। অর্থাৎ, ঘুম কম হলে। আই: ইন্টারেস্ট বা আগ্রহ, উৎসাহ হারানো। জি: গিল্ট। অপরাধী মনে করা নিজেকে। ই: এনার্জি। দুর্বল বোধ হয়। সি: কনসেনট্রেশন। মনঃসংযোগ কমে যায়। এ: অ্যাপেটাইট। খিদে কমে যায়। পি: সাইকোমোটর। মানসিক এবং শারীরিক চঞ্চলতা বেড়ে যায়। এস: সুইসাইড। আত্মহত্যার প্রবণতা। ডি: ডিপ্রেশন। বিষাদ। এই ন’টি বিষয়ের মধ্যে তিন থেকে পাঁচটি হতে থাকলে চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারে বলা হয় বিষাদ রোগ হয়েছে। আবার শেষের দু’টো উপসর্গ সক্রিয় হলেও বুঝতে হবে ওই রোগ হয়েছে।

প্রশ্ন: এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কেমন?

উত্তর: বিভিন্ন রোগ থেকে কর্মক্ষমতা হারানো, কাজকর্ম করতে না পারার পরিস্থিতি হয়। যেমন হাত-পা ভেঙে গেলে। ডিসএবিলিটি থেকে কর্মক্ষমতা হারানো যে সব রোগ থেকে ঘটছে, তার মধ্যে চতুর্থ হচ্ছে ডিপ্রেশন। বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থার অনুমান, ২০২০ সালে বিশ্বের সব চেয়ে বেশি রোগের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে আসবে বিষাদ। হৃদ্‌রোগের পরেই। ২০৩০ সালে এক নম্বর হয়ে যাবে এই বিষাদ রোগ। শিলিগুড়ির ক্ষেত্রেই যদি পরীক্ষা করা যায়, দেখা যাবে, শতকরা ১৫ শতাংশ মানুষ বিষাদগ্রস্ত।

প্রশ্ন: পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই কি এই প্রবণতা সমান?

উত্তর: মেয়েদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি। ছেলেদের মধ্যে ১৫-১৮ শতাংশ। মেয়েদের বাচ্চা প্রতিপালন থেকে জীবনে নানা চাপের মুখে পড়তে হয়। দেখা যাচ্ছে, ২২-৩৫ বছরের মধ্যে অবসাদ শুরু হচ্ছে আজকাল। ষাট বছরের বেশি বয়সে ডিপ্রেশন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ে। স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলেও বাড়ে।

প্রশ্ন: এ রোগ চিকিৎসায় সারে?

উত্তর: হ্যাঁ। এই রোগ চিকিৎসায় ভাল হয়। শুরুতে ধরা গেলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করালে সেরে যায়।

প্রশ্ন: কী ধরনের চিকিৎসা করা হয়?

উত্তর: কতগুলো ভাগ আছে। ওষুধ, কাউন্সেলিং, যোগ–ধ্যান-ব্যায়াম।

আরও পড়ুন: যাপনে বাড়ছে মানসিক চাপ, লাফিয়ে বাড়ছে অবসাদও

প্রশ্ন: বিষাদ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে জীবনযাত্রা পরিবর্তন জরুরি?

উত্তর: অবশ্যই জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। ধূমপান, মদ্যপান এসব বন্ধ করা জরুরি। ঘর যেন অন্ধকার না হয়। ঘরে উজ্জ্বল আলো থাকা দরকার। সামাজিক মেলামেশা করা দরকার। ঘুম আসে, এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন, পুদিনা, দুধ, লেটুস শাক, আলু, অ্যালমন্ড, সিম, বিন বরবটি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Depression Treatment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE