Advertisement
০২ জুন ২০২৪

ডেঙ্গি না বুঝে পেটে ব্যথার ওষুধ, দিল্লিতে ফের শিশুমৃত্যু

ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার পর থেকে দিল্লির হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ভর্তি না নিয়ে তারা অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। সাত বছরের অবিনাশ রাউত ও ছ’বছরের আমন শর্মার মৃত্যু সেই ছবিটাই তুলে ধরেছিল। আর তিন বছরের নেহা মাথুরের মৃত্যু দেখিয়ে দিল হাসপাতালে ভর্তি হলেও সব সময় রোগ ধরা পড়ছে না। নেহার পাশাপাশি ওখলায় আরও একটি ন’বছরের শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে ডেঙ্গির বলি ১৬।

ডেঙ্গুর আতঙ্ক। রক্তপরীক্ষার ভিড় সরকারি ক্লিনিকে। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

ডেঙ্গুর আতঙ্ক। রক্তপরীক্ষার ভিড় সরকারি ক্লিনিকে। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:১১
Share: Save:

ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার পর থেকে দিল্লির হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ভর্তি না নিয়ে তারা অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। সাত বছরের অবিনাশ রাউত ও ছ’বছরের আমন শর্মার মৃত্যু সেই ছবিটাই তুলে ধরেছিল। আর তিন বছরের নেহা মাথুরের মৃত্যু দেখিয়ে দিল হাসপাতালে ভর্তি হলেও সব সময় রোগ ধরা পড়ছে না। নেহার পাশাপাশি ওখলায় আরও একটি ন’বছরের শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে ডেঙ্গির বলি ১৬।

যে হারে দিল্লিতে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, তাতে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। ডেঙ্গি দমন ও তার মোকাবিলায় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র, দিল্লি সরকার ও পুরসভাগুলিকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পরেই আজ সন্ধ্যায় তিন পুরসভা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠান সিসৌদিয়া।

জ্বর, পেটে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে সোমবার রাতে দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তিন বছরের নেহাকে। সেখানে তাকে গ্যাস্ট্রিকের জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। পর দিন অবস্থার অবনতি হওয়ায় অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েটিকে। সেখানেও পেটে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখে নেহাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির সাকেত হাসপাতালে। সেখানেই বুধবার রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নেহা।

মৃত্যুর পরে নেহার রক্তপরীক্ষার যে রিপোর্ট বাড়ির লোকের হাতে পৌঁছেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গি হয়েছিল তার। অথচ একটি হাসপাতালও তা ধরতে পারেনি। তাকে দেওয়া হয়েছিল পেট ব্যথা কমানোর ইঞ্জেকশন। ঠিক সময়ে ওষুধ না পড়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জীবাণু। চিকিৎসকদের নজরের আড়ালে কমে গিয়েছে প্লেটলেটের সংখ্যা। যার মূল্য তিন বছরের নেহাকে দিতে হয়েছে নিজের জীবন দিয়ে।

নেহার বাড়ির লোকের অভিযোগ, জ্বর আসার পরেই স্থানীয় একটি ক্লিনিক থেকে প্রথম বার রক্তপরীক্ষা করা হলে রোগ ধরা পড়েনি। এর পরে দু’টি হাসপাতাল পেটের রোগের চিকিৎসা করেছে। বাড়ির লোকের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও আর রক্তপরীক্ষা করানো হয়নি। স্রেফ জানিয়েছে, গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যা, ভয়ের কিছু নেই। তৃতীয় হাসপাতাল রক্তপরীক্ষা করালেও তত ক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ডেঙ্গি রোগীদের ভর্তি নিয়ে গিয়ে নাজেহাল দিল্লির হাসপাতালগুলিও। বেড নেই, অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে চিকিৎসক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরও, উঠছে অভিযোগ। হাসপাতালের এক একটি বেডে গাদাগাদি করে থাকছেন দু’-তিন জন রোগী। কেজরীবালের নির্দেশে জনকপুরী, অশোক বিহার এবং তাহিরপুর এলাকার তিনটি হাসপাতালের জন্য অতিরিক্ত ৬০০টি বেডের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যার সুরাহা কত দূর হবে, সেই প্রশ্ন থাকছেই।

পরিস্থিতির সুযোগে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। ডেঙ্গির দমনে দিল্লি সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আজ পথে নামে কংগ্রেস। বিজেপিও ডেঙ্গির দায় চাপিয়েছে কেজরীবাল সরকারের উপর। কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের দাবি, ‘‘কেবল হাসপাতালে শয্যা বাড়িয়ে দায় সারতে চাইছে কেজরীবাল সরকার। সময়ে সক্রিয় হলে অকালে এই শিশুরা মারা যেত না। সরকার নিজের সাফল্যের কথা ঘটা করে প্রচার না করে ডেঙ্গি আটকাতে কী করা উচিত তা প্রচার করলে দিল্লিবাসীর লাভ হত।’’ কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ এ দিন আপ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ২০১০-এ যখন কমনওয়েলথ গেমস চলছিল তখন ডেঙ্গি ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ইউপিএ সরকার সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল। একটি প্রোটোকল তৈরি করা হয়েছিল, যা গত পাঁচ বছর ধরে মেনে চলা হয়েছে। তাই কখনও সমস্যা হয়নি। বর্তমান সরকার যদি সেই প্রোটোকল মেনে চলে, তা হলে সমস্যা মিটতে পারে।

তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার আপ সরকার ঘোষণা করেছে, দিল্লি জুড়ে জ্বরের জন্য ক্লিনিক খোলা হবে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি সেখানে থাকবেন ১২০০ স্বেচ্ছাসেবক। আপাতত ৩০টি ক্লিনিক খোলা হচ্ছে। দ্রুত সংখ্যাটিকে ৬০ থেকে ৭০-এ নিয়ে যাওয়া হবে বলে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান আপের দিল্লি শাখার সচিব দিলীপ পাণ্ডে। তিনি আরও বলেন, পুরসভায় যে ম্যালেরিয়া ইনস্পেক্টররা রয়েছেন তাঁরা কাজে গাফিলতি করছেন। তাঁরা নিজেদের কাজ ঠিক করে করলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছতই না। বিজেপি শাসিত পুরসভাগুলির ব্যর্থতার জন্যেই যে দিল্লিতে ডেঙ্গি এ ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটাই দাবি তাঁর। পাণ্ডে আরও অভিযোগ করেছেন, ‘উঁচু মহলের’ নির্দেশ পাননি বলেই তাঁদের বসে থাকতে হয়েছে।

ডেঙ্গি প্রসঙ্গে নানা বিতর্কের মধ্যে আজ সরব হয়েছেন রামদেব। তাঁর বক্তব্য, গুলঞ্চ, পেঁপে পাতা, অ্যালোভেরা ও বেদানার রস খেলে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE