Advertisement
E-Paper

বেড়েছে সচেতনতা কমেছে ম্যালেরিয়া

এক সময়ে ম্যালেরিয়া মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। সচেতনতা ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা কারণে আজ ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এসেছে। জানাচ্ছেন চিকিৎসক গীষ্পতি চক্রবর্তী জ্বর যদি কাঁপুনি দিয়ে আসে তা হলেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, সাধারণ জ্বর হলে কাঁপুনি হবে না। কিন্তু কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হলেই দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। 

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৩
রোগী দেখছেন চিকিৎসক। ছবি: উদিত সিংহ

রোগী দেখছেন চিকিৎসক। ছবি: উদিত সিংহ

প্রশ্ন: বর্ষার মরসুম চলছে, এখন কি ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার আশঙ্কা বেশি হয়?

উওর: ম্যালেরিয়া রোগটি সারা বছরই হতে পারে। তবে হ্যাঁ, বর্ষাকালে যে হেতু মশার উপদ্রব বাড়ে, সে ক্ষেত্রে বলা যায়, এই সময় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

প্রশ্ন: কেউ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সেটা কী ভাবে ধরা যাবে?

উওর: ম্যালেরিয়া রোগ ধরা পরার আলাদা কোন লক্ষণ নেই। এই রোগের প্রথম উপসর্গ হল জ্বর। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। কখনও জ্বর কমে যাবে কখনও আবার তীব্র জ্বর আসবে। সেই রকম হলে সন্দেহ করা হয় আক্রান্তের ম্যালেরিয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: এ রকম জ্বর হওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে কী করা যেতে পারে?

উওর: জ্বর হলে কোন প্রাথমিক প্রতিষেধকের উপরে ভরসা না রেখে আগে চিকিৎসকের কাছে যান। তার পরে রক্ত পরীক্ষা করালে তবেই ম্যালেরিয়া ধরা পরবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা হবে।

প্রশ্ন: শিশুদের ক্ষেত্রেও কী একই ভাবে এই রোগ ধরা যাবে?

উওর: শিশু থেকে বড়— সবার ক্ষেত্রে জ্বরই এই রোগের প্রধান উপসর্গ।

প্রশ্ন: জ্বর আসার কত দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে?

উত্তর: জ্বর যদি কাঁপুনি দিয়ে আসে তা হলেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, সাধারণ জ্বর হলে কাঁপুনি হবে না। কিন্তু কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হলেই দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।

প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষাটি করানো যেতে পারে?

উত্তর: এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরামর্শ করানোই উচিত। তা হলে রোগ ধরা পরার সুনিশ্চিত হওয়া যাবে।

প্রশ্ন: ম্যালেরিয়া মানেই কী মৃত্যু?

উওর: পরজীবীর প্রকৃতি অনুসারে ম্যালেরিয়া সাধারণত দুই প্রকার। এক প্রকার ম্যালেরিয়া হল ভাইভ্যাক্স আর দ্বিতীয়টি হল ফ্যালসিপেরাম। এর মধ্যে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া বিপজ্জনক। এই প্রকারের ম্যালেরিয়া থেকেই মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন: ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা কী ভাবে করা হয়?

উওর: ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া যদি ধরা পরে তা হলে চিকিৎসকের অধীনে থাকলেই তিনি ঠিক ভাবে রোগীকে সুস্থ করে তুলবেন। তবুও সাধারণত ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া ক্ষেত্রে আর্টেমিসিনিন, প্রাইমাকুইন ইত্যাদি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

প্রশ্ন: ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি কী রকম?

উওর: ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া ক্ষেত্রে ক্লোরোক্লুইন ও প্রাইমাকুইন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে কখনই এই ধরনের ওষুধ নিজে নিজে প্রয়োগ করা উচিত নয়। ডাক্তারের পরামর্শ মতোই ওষুধ খাওয়া উচিত।

প্রশ্ন: ম্যালেরিয়ায় শরীরের কোন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে কি?

উত্তর: ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া বিপজ্জনক। এই ম্যালেরিয়া হলে শরীরের নানা অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় ম্যালেরিয়ার ফলে মস্তিষ্কে সমস্যা হয়েছে।

প্রশ্ন: রোগী বেঁচে গেলেও তার দীর্ঘস্থায়ী কোনও ক্ষতি হতে পারে কি?

উত্তর: যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা হয় তা হলে ম্যালেরিয়া রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়। কোনও সমস্যা দেখা যায় না। তবে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘদিন দুর্বলতা থেকে যায়। অনেক সময় অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা যায়। তবে বর্তমান চিকিৎসায় চিরস্থায়ী কোন ক্ষতি হয় না। তেমন ক্ষতির আশঙ্কা খুব কম থাকে।

প্রশ্ন: শহরের মানুষদের ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো বা রক্তপরীক্ষা করা অনেকটাই সহজ, কিন্তু গ্রামের মানুষদের ক্ষেত্রে কাজটা এতটা সহজ নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে কোন উপায়?

উওর: গ্রামের মানুষদের জ্বর হলে তাঁরা আশা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কারণ, ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধে আশা কর্মীদেরও কাজে লাগানো হচ্ছে।

প্রশ্ন: ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে তো জানা গেল, কিন্তু কী ভাবে এই রোগ এড়ানো যাবে?

উওর: ম্যালেরিয়া রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে মশা। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়েই ম্যালেরিয়ার জীবানু সংক্রমিত হয়। ফলে আগে মশা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।

প্রশ্ন: শিশুদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া নিয়ে কী ভাবে সচেতন হতে হবে?

উওর: শিশুদের ক্ষেত্রেও একই। মশা থেকে তাদের আরও বেশি করে রক্ষা করতে হবে। কারণ, বড়দের ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরা সচেতন হতে পারেন। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, কারণ, তারা নিজেরা সে ভাবে সচেতন হতে পারে না।

প্রশ্ন: শিশুদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি?

উওর: শিশুদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা রয়েছে। এই পদ্ধতির নাম কেমো প্রোফাইল অ্যাক্সিস। এই চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পর্যটকদের জন্য করা হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ যদি ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় যান তা হলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ করার ওষুধ আগে থেকেই দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: মশা রোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে?

উত্তর: মশার বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। এটাই প্রথম ও প্রাথমিক শর্ত। এর জন্য বাড়ির কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলের টব, টায়ার, ভাঙা পাত্রে জমা জলে এই রোগের মশা তাদের বংশবৃদ্ধি করে। সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাতে, দিনে শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

প্রশ্ন: অন্য কোনও ভাবে মশা রুখে দেওয়ার উপায় আছে কি?

উত্তর: ডিডিটি-র মতো কীটনাশক ঘরে স্প্রে করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সরকারি বা এমনকি বেসরকারি ভাবেও মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন: সরকারি ভাবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: সরকারি স্তরে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই রকম ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক হচ্ছে গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য এবং দ্বিতীয় হচ্ছে শহরের জন্য। স্প্রে-সহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জলাশয়ে গাম্বুসিয়া মাছ ছাড়া হচ্ছে। যে মাছ মশার লার্ভা খেয়ে বেঁচে থাকে। সরকার ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া-সহ মশাবাহিত সব রোগ নিয়েই সচেতন করছে। ১৯৫৩ সাল থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ে নিরন্তর কাজ হয়ে চলেছে। ২০১০ সালের পর থেকে ম্যালেরিয়ায় আধুনিক চিকিৎসার ব্যবহার শুরু হয়। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে।

প্রশ্ন: দুই বর্ধমানে ম্যালেরিয়ার হাল কেমন?

উত্তর: আগের মতো অবস্থা আর নেই। এখন মানুষ সচেতন, সরকার সচেতন। চিকিৎসা অনেক উন্নত। ফলে আগের থেকে এই রোগ অনেকটাই কমে এসেছে। এই মরসুমে হাতে গোনা কিছু রোগী আমি পেয়েছি। ম্যালেরিয়া বর্ধমানে বড় আকার ধারণ করেনি।

প্রশ্ন: আক্রান্ত রোগীদে বয়স কেমন পাচ্ছেন?

উত্তর: শুনতে অবাক লাগলেও প্রাপ্ত বয়স্করাই আমার কাছে বেশি এসেছেন এই রোগ নিয়ে।

প্রশ্ন: তাঁরা সচেতন হননি বলেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন?

উত্তর: সেটা বলা যাবে না। কারণ, অনেক সময় আমরা ঘরে সচতন হই, কিন্তু বাইরে গিয়ে আক্রান্ত হই। কারণ, অফিসে বা কাজের জায়গায় যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে তাঁরা মশার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না।

প্রশ্ন: এই সমস্যা থেকে কী ভাবে নিস্তার পাওয়া যাবে?

উত্তর: অফিস বা বহুতলের ছাদগুলি বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহার করা হয় না। ফলে সেখানে অনেক সময় মশার বংশবৃদ্ধি হয়। এ দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অফিসে স্প্রে করার বিষয়েও নজর রাখতে হবে।

সাক্ষাৎকার: সুপ্রকাশ চৌধুরী

Mosquito Malaria Doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy