Advertisement
০৯ মে ২০২৪

সরাসরি সম্প্রচার, ঝটপট জনসংযোগ

দর্শকদের দেখা যাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু তাদের উপস্থিতি বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। কমেন্ট-বক্সে একের পর এক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে মন্তব্যগুলো।

সাম্য কার্ফা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

দর্শকদের দেখা যাচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু তাদের উপস্থিতি বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। কমেন্ট-বক্সে একের পর এক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে মন্তব্যগুলো।

কেমন আছেন দাদা?

আপনার আগামী ছবি নিয়ে প্লিজ কিছু বলুন!

রোববার কী প্ল্যান?

আপনার কোনও ছবি মিস করি না দাদা!

‘দাদা’ হাসিমুখে প্রায় প্রত্যেকের প্রশ্নের জবাব দিয়ে চলেছেন। এক বারে এত জন ভক্তের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে আগে কোনও দিন কথা বলেননি। তাই ফেসবুকের এই নয়া প্রযুক্তি নিয়ে বেশ উত্তেজিত তিনিও।

ফেসবুক লাইভ বা টুইটারের পেরিস্কোপ! এক বোতামেই বাজিমাত!

নেট দুনিয়ায় ভিডিও চ্যাট এমনিতে নতুন কিছু নয়। স্কাইপ, ইমো, গুগল হ্যাংআউট, ফেসটাইম— নানা অ্যাপের মধ্যে দিয়েই ‘ভিডিও কল’ করা যায়। সুদূর আমেরিকা যুক্ত হয় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। বা লন্ডনের পুজো দেখা যায় দেশপ্রিয় পার্কে বসে।

তবে এত দিন এই যোগ স্থাপনটা হতো দু’টো যন্ত্রের মধ্যে। এখানেই ফেসবুক লাইভ বা পেরিস্কোপ কিছুটা আলাদা। এখানে প্রায় দরবারি ভঙ্গিতে একাধারে অনেকের সঙ্গে সংযোগ হয়। যিনি কথা বলছেন, তিনি তাঁর মোবাইলে বা নোটবুকে অনলাইন। অন্যরা (যাঁরা তাঁকে দেখছেন) নিজেদের মোবাইল বা নোটবুক থেকে তাঁর সঙ্গে চ্যাটে কথোপকথন করছেন। এর ফলেই প্রচার আর জনসংযোগের সংজ্ঞায় বড়সড় বদল ঘটে যাচ্ছে।

পেরিস্কোপে এই পরিষেবা অবশ্য এক বছরের পুরনো। কিন্তু টুইটারে আমজনতার অংশগ্রহণ অনেক কম। গুগলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-র দ্বিতীয় ভাগে প্রতি মাসে গড়ে ফেসবুকে ‘অ্যাক্টিভ ইউজার’-এর সংখ্যা ১৭১ কোটি। ‘অ্যাক্টিভ ইউজার’ মানে যারা বিগত ৩০ দিনে টানা ফেসবুক ব্যবহার করছেন। আর টুইটারের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ৩১ কোটি ৩০ লক্ষ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ফেসবুকের কোনও প্রযুক্তি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় অনেক বেশি মানুষের কাছে।

তা ছাড়া পেরিস্কোপের ভিডিও এক দিনের বেশি থাকে না। নিজে থেকেই মুছে যায়। কিন্তু ফেসবুক-লাইভের ভিডিও থাকে আজীবন। এটাও একটা সুবিধের দিক বলে জানাচ্ছেন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। মানে, সেলিব্রিটি যখন লাইভ ছিলেন তখন যদি কেউ সেটা মিস করে থাকেন, তা হলে পরেও তিনি সহজেই লাইভ ভিডিওটি দেখতে পাবেন।

বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ শৌভিক মিশ্রের মতে, এই ব্যাপারটাকেই কাজে লাগিয়ে বিপণনের জগতে তৈরি হচ্ছে নতুন পথ। বদলে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনের ফর্মুলা। ‘‘ফেসবুক লাইভের সবচেয়ে সুবিধা হল কোনও ইভেন্ট, যেমন কোনও কিছুর লঞ্চ ইত্যাদি সহজেই কম খরচে লাইভ দেখানো যাবে। ভাবুন তো অন্য সরাসরি সম্প্রচারের খরচ কতটা!’’

ছবি বা গানের প্রচারেও আজকাল ফেসবুক লাইভই বেছে নেওয়া হচ্ছে। ‘পিঙ্ক’ ছবির প্রচারে গোটা টিমের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ‘শঙ্খচিল’–এর প্রচারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বা ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবির জন্য স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও এসেছিলেন ফেসবুক লাইভে। আবার, সম্প্রতি পায়ে চোট পেয়েছেন সোনু নিগম। সে কথাটাই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। রাজনীতিকদেরও পছন্দ ফেসবুক লাইভ। নববর্ষের আগে লাইভ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার সিঙ্গুর দিবসের অনুষ্ঠান টিভি সম্প্রচারের পাশাপাশি মমতার ফেসবুক পেজেও লাইভ দেখানো হয়েছে।

যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত মানুষকে ক্রমশ অতিরিক্ত আত্মপ্রেম আর আত্মকেন্দ্রিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও একটা অভিযোগ আছে। এই ‘লাইভ’ হিড়িক সেটাকে আরও চাগিয়ে তুলবে না তো? মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কোনও ভাল জিনিস সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ায় ক্ষতি নেই! কিন্তু সমস্যাটা হল তার অতিরিক্ত ব্যবহার। অনুত্তমা বলছেন, “অন্যের মূল্যায়ন যদি আমাদের বেঁচে থাকার মাপকাঠি হয়ে যায়, তা হলে কিন্তু মুশকিল। ওই ভিডিওয় লাইক পড়ল আর এতে কেন পড়ল না, সব সময় এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে থাকলে বিপদ!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE