বিপজ্জনক: ভিড় করে ঠাকুর দেখার এমন ছবিই চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। ফাইল চিত্র
এক জন ‘সুপার স্প্রেডার’ একসঙ্গে কত জনকে সংক্রমিত করতে পারেন, তা নির্ধারণ কি সম্ভব? দুর্গাপুজোর আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল গবেষক এবং চিকিৎসক মহলে। কারণ, ‘নিয়ন্ত্রিত’ পুজো-দর্শনের কথা বলা হলেও অষ্টমীর সন্ধ্যা থেকেই বহু মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। সামগ্রিক উৎসব পর্ব শেষ হতে এখনও অনেকটাই বাকি, এমন পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নের গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
চলতি মাসেই ‘সুপার স্প্রেডারদের’ নিয়ে ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র (সিডিডিইপি) তরফে একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিয়ে করা ওই সমীক্ষাকে দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর অন্যতম বড় বাস্তবসম্মত সমীক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওই সমীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা-লেখালিখি হলেও পুজো মরসুমে তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা।
এক জন ‘সুপার স্প্রেডার’ কত জনকে সংক্রমিত করতে পারেন, সেটা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব কি না, তা জানতে চাওয়া হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা তথা সিডিডিইপি-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ‘‘সংক্রমণ ছড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এক জন সুপার স্প্রেডার একসঙ্গে অনেককে সংক্রমিত করতে পারেন। কত জনকে তিনি সংক্রমিত করতে পারবেন, তা নির্ভর করছে কত জন তাঁর সংস্পর্শে আসছেন তার উপরে।’’
সিডিডিইপি-র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাত্র আট শতাংশ আক্রান্তের মাধ্যমে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মানুষ নতুন ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে ৭০.২ শতাংশ আক্রান্তের মাধ্যমে নতুন করে কেউ সংক্রমিত হননি। এক গবেষকের কথায়, ‘‘সমীক্ষাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চর্চা হয়েছে। কিন্তু পুজো পরিস্থিতিতে এই সমীক্ষা আলাদা মাত্রা পেয়েছে। কারণ, এত কম আক্রান্ত যদি এত বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে পারেন, তা হলে ভিড়ে কী হতে পারে, তা অনুমেয়।’’
আরও পড়ুন: ভিড়ের দায় কার, ঠেলাঠেলি পুজো শেষেও
ফলে সেখানে ভিড় বেশি না কম, সেই বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। এমনিতেই মাস্ক না পরা, হাত না ধোয়া, দূরত্ব-বিধি বজায় না রাখার যাবতীয়
নিয়মভঙ্গের দৃশ্য পুজোর আগে ও পুজোয় দেখা গিয়েছে। কানপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’-র ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্সের অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ধরা যাক, কোনও সংক্রমিত শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর মাধ্যমে পরিজনদেরই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু তিনি যদি এমন জায়গায় ক্লাস নেন, যেখানে ১০০ জন পড়ুয়া থাকছেন, সে ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার অনেক বেশি হবে।’’
আরও পড়ুন: টিকিটের দাম কমলেও পুজোয় আসন খালি বিমানে
তবে কে ‘সুপার স্প্রেডার’ আর কে নন, তা আগাম বলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-বিধি মানাই একমাত্র হাতিয়ার। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সিডিডিইপি-র কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের এই স্পষ্ট ধারণার পরেও উৎসব মরসুমে নিয়ম না মানলে পরিস্থিতি দুর্বিষহ হতে চলেছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিন্তু সেই পরিস্থিতির চাপ নিতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy