E-Paper

নাকের রক্তক্ষরণে আতঙ্কিত হবেন না

শীত আসছে, এ সময়ে শরীরের ভিতরে শুষ্কতা বাড়তে থাকে। তাই নাক থেকে রক্তক্ষরণের সমস্যা থাকলে তাঁরা এখন থেকেই সাবধানে থাকুন।

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৪
An image of blood

—প্রতীকী চিত্র।

আচমকা শারীরিক কোনও সমস্যা হলে অনেকেই হকচকিয়ে যান, বুঝতে পারেন না তৎক্ষণাৎ কী করতে হবে। তেমনই এক সমস্যা নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা নোজ় ব্লিডিং। শরীরে তেমন কোনও সমস্যা নেই কিন্তু হঠাৎ নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। কারণ একটা নয়, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

কেন পড়ে নাক দিয়ে রক্ত

নাক থেকে রক্তক্ষরণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দু’বছর থেকে দশ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে এবং ৪৫ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে। এই সমস্যা কেন হয় তার উত্তরে ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘নসট্রিলস বা নাকের দুটো ছিদ্র দিয়ে রক্তক্ষরণের পিছনে আবহাওয়া, অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ ইত্যাদি একাধিক কারণ আছে। তবে সবচেয়ে বেশি হয় আবহাওয়ার জন্য। আমাদের নাসিকা ছিদ্রের ভিতরে খুব পাতলা স্বচ্ছ আবরণ বা মিউকাস মেমব্রেন থাকে। সেই আবরণের তলায় থাকে অসংখ্য রক্তনালিকা বা ব্লাড ভেসেলস, যেগুলো জলহাওয়ার সংস্পর্শে আসে। জলবায়ু যদি শুষ্ক হয় বা খুব গরম হয়, তা হলে সেই প্রতিক্রিয়ায় নাকের ভিতরের আবরণ শুকিয়ে যায়। তখন কড়কড় করে, অস্বস্তি হয়, অনেকে অবচেতন মনে নাকের ভিতরে আঙুল দিয়ে খোঁচাতে থাকে, বিশেষত শিশুরা। এই খোঁচানোর ফলে স্বচ্ছ আবরণ ছিঁড়ে গিয়ে রক্তনালিকা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এটাই হল সবচেয়ে বড় কারণ।’’

এ ছাড়া যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, অধিকাংশ সময় নাক দিয়ে জল পড়ে, নাক লাল হয়ে থাকে তাঁরা সেই অস্বস্তি থেকে চটজলদি মুক্তি পেতে নেজ়াল স্প্রে ব্যবহার করেন। দীর্ঘ দিন নেজ়াল স্প্রে ব্যবহার করলে মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যায় এবং এর জন্যও রক্তনালিকা ফেটে রক্তপাত হতে পারে। নাকের ভিতরে কোনও কারণে ইনফেকশন হলে তার জন্যও রক্তপাত হতে পারে। ‘‘যাঁদের রক্তচাপ বেশি, বিশেষত বয়স্কদের, তাঁদেরও এই সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপের জন্য যেমন স্ট্রোক হয় বা মাথার মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়, তেমন নাক দিয়েও রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু আগের তিনটে কারণের চেয়ে ব্লাডপ্রেশারের জন্য নাক থেকে রক্তক্ষরণের অনুপাত কম,” বললেন ডা. তালুকদার। আবহাওয়া, অ্যালার্জি, রক্তচাপ ইত্যাদির বাইরে আরও দু’-একটি কারণ আছে। দুর্ঘটনার জন্য নাকে আঘাত পেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। চোয়ালের দু’পাশে চোট লেগে সেখানে মিউকাস মেমব্রেন ছিঁড়ে গিয়ে নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও নাক থেকে রক্তপাত পড়তে পারে।

চিকিৎসা

বাড়ি বা পাবলিক প্লেসে যেখানেই এই সমস্যা হোক না কেন, ভয় না পেয়ে রক্ত বন্ধ করার জন্য তখনই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নোজ় ব্লিডিং বন্ধ করার বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন ডা. তালুকদার।

  • প্যানিক না করা: রক্তক্ষরণ দেখে আতঙ্কিত হবেন না। বিশেষত কোনও বাচ্চার এমন হলে অভিভাবকেরা ভয় পেলে বাচ্চাটিও ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলবে। এতে সমস্যা বাড়বে।
  • বসিয়ে রাখা: এই সময় শোয়ানো যাবে না, সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে যাতে রক্ত গলা দিয়ে ফুসফুসে বা শরীরের অন্য কোথাও চলে না যায়। ভাল হয় যদি চেয়ারে বসে সামনের টেবিলে দুটো হাতের উপরে মাথা নিচু করে রাখা যায়।
  • চেপে ধরা: বুড়ো আঙুল ও তর্জনী দিয়ে নাকের ছিদ্র দুটো চেপে ধরে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তখন নিঃশ্বাস নিতে হবে মুখ দিয়ে। ১০-১৫ মিনিট একটানা ধরে রাখা সম্ভব না হলে প্রতিবার অন্তত পাঁচ মিনিট একটানা চেপে ধরে রাখতেই হবে। এতে রক্তক্ষরণ কমবে।
  • হাঁচি-কাশি আটকানো: নাকের ছিদ্র চেপে ধরে রাখার সময় চেষ্টা করতে হবে হাঁচি, কাশির বেগ আটকানো, না হলে তার চাপে নাকের ভিতরের আবরণ আবার ছিঁড়ে যেতে পারে।
  • আইস প্যাক দেওয়া: কাপড়ে বরফ মুড়ে বা ঠান্ডা জলে তোয়ালে ভিজিয়ে নাকের উপরে, চারপাশে দেওয়া হলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে।

অনেক সময়ে নাকের উপরের দিকে রক্তক্ষরণ হয়। হাড় থাকার জন্য উপরের দিক চেপে ধরা যায় না। তখন রক্ত গলা দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বেরোতে পারে, তাতেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকেরা নাকের ভিতরে গজ গুঁজে দেবেন, এতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। অনেক সময় রক্তনালিকা সার্জারি করে রক্তপাত বন্ধ করা হয়।

আগাম সতর্কতা

  • নখ না থাকে: নাকের ভিতর শুকিয়ে গিয়ে সুড়সুড় করলে নাক খোঁচান অনেকেই। আঙুলে যদি নখ থাকে তা হলে নখের খোঁচায় আবরণটি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হবে। বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। কারণ তাদের চামড়া আরও পাতলা। তাই নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। নাকে হাত দেওয়ার বদঅভ্যেসও ছাড়তে হবে।
  • আর্দ্রতা বজায় রাখা: নাক শুষ্ক হতে দেওয়া যাবে না। যাঁদের এই সমস্যা আছে, তাঁরা শীতের শুরুতেই নাকের ভিতরের আবরণ আর্দ্র রাখার জন্য বারবার স্যালাইন ওয়াটার দিতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নেজ়াল স্প্রে ব্যবহার নয়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে বা জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় ও ধূমপান বন্ধ: ধূমপানের আগুন ও গরম ধোঁয়া নাকের আবরণের ক্ষতি করে। তেমন অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীর শুষ্ক করে দেয়। তাই এ ধরনের পানীয় ততটাই পান করুন, যতটা শরীর সইতে পারে। নোজ় ব্লিডিংয়ের সমস্যা থাকলে শরীর আর্দ্র রাখার জন্য ডায়েটেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল, আনাজপাতি, ডাল, জল রাখতে হবে। ‘‘নাক দিয়ে রক্ত পড়লে ভয় পাবেন না। কিন্তু এটাও ঠিক বারবার হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নাকে টিউমর বা ক্যানসার থেকেও রক্তপাত হতে পারে। তাই জটিল কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি,’’ বললেন ডা. তালুকদার।

শীত আসছে, ত্বক শুষ্ক হচ্ছে, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে।


(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blood Nose advice

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy