Advertisement
E-Paper

জিয়নপাথর

দেখতে অবিকল নুড়িপাথরের মতো। শুধু স্পর্শ করলেই বুঝতে পারবেন যে, এগুলি আসলে গাছ। কী ভাবে যত্ন নেবেন, জেনে নিন পাতার বর্ণও সবুজ, হলুদ, মেটে, বেগুনি ইত্যাদি। যত্নআত্তির বাহুল্যও তেমন নেই বলে অন্দরসজ্জায় চাহিদা বাড়ছে এই জিয়নপাথরের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫৭

সুদূর আফ্রিকার রুক্ষ ভূমির বাসিন্দা এই লিথপস। একে লিভিং স্টোনও বলা হয়। মরুভূমি অঞ্চলের গাছ বলে সাকিউলেন্টের মতো এদের গঠন। পাতার মধ্যে অনেকটা পরিমাণে জল ধরে রাখতে পারে। হিংস্র পশুর হাত থেকে বাঁচতে এ রকম রংবেরঙের নুড়িসদৃশ ছদ্মবেশ ধারণ করে এই গাছ। অনেক সময়ে এরা নিজেদের গুটিয়ে একদম ছোট করে ফেলে। ফলে আশপাশের নুড়িপাথরের মধ্য থেকে এদের আলাদা করা যায় না। এই গাছে সাদা, হলদে, গোলাপি ফুল ধরে। পাতার বর্ণও সবুজ, হলুদ, মেটে, বেগুনি ইত্যাদি। যত্নআত্তির বাহুল্যও তেমন নেই বলে অন্দরসজ্জায় চাহিদা বাড়ছে এই জিয়নপাথরের।

আরও আলো, আরও আলো

সাধারণত রোদে থাকা এই গাছের স্বভাব। তাই আলোকোজ্জ্বল জায়গাই এদের জন্য উপযোগী। সকালের রোদে ৪-৫ ঘণ্টা রাখতে হবে। দুপুরে ছায়ায় রাখুন। আবার বিকেল চারটের পরে রোদে দিন। তবে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে দেখলে বেশি রোদ খাওয়াবেন না। গাছের রং নষ্ট হয়ে যায়। এই গাছ চড়া রোদে রাখাই ভাল। মরুভূমিতে এরা ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তবে খুব ঠান্ডায় পাতা ফেটে গাছ মরেও যেতে পারে। তাই শীতে গাছ রোদে রাখুন।

পাথুরে গাছে পাথুরে মাটি

এর জন্য এমন মাটি দরকার, যার জলনিকাশি খুব ভাল হবে। তাই নুড়িসমৃদ্ধ বালিমাটিতেই এই গাছ ভাল হয়। ৫০ শতাংশ কম্পোস্টের সঙ্গে ৫০ শতাংশ বালি, নুড়ি, লাভা রক, গ্রানাইট গুঁড়ো মিশিয়ে এই গাছের মাটি তৈরি করতে পারেন। গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে সঙ্গে সঙ্গে গাছের পট পাল্টে দিন। কারণ এতে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা নানা রকমের পোকামাকড় টেনে আনতে পারে গাছের দিকে। তাই গাছের গোড়া এবং শিকড়ের জায়গার মাটি শুকনো রাখতে হবে। এই মাটিতে সার দেওয়ার খুব দরকার নেই। তবে ফসফরাস থাকলে, তা গাছের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।

অতিরিক্ত জল নয়

মাসের পর মাস এরা পাতার মধ্যে জল সঞ্চয় করে রাখতে পারে। তাই গাছে অতিরিক্ত জল দেবেন না। আগে গাছের গোড়ার মাটি শুকনো কি না দেখে নিন, তার পর জল দিন। শীতকাল সাধারণত এই গাছের জন্য ডরম্যান্ট পিরিয়ড। এ সময়ে এরা ঘুমোয়। তাই খুব বেশি জল দেবেন না শীতকালে। গরমকালে যে পরিমাণ জল দেন, তার অর্ধেক জল দিলেই যথেষ্ট।

নতুন পাতার সময়ে

এই গাছে সব সময়ে একজোড়া পাতাই দেখা যায়। দূর থেকে তা মাঝে একটি দাগবিশিষ্ট নুড়ির মতো দেখতে লাগে। নতুন পাতা এই পুরনো পাতাজোড়ার মাঝখান থেকেই গজায়। নতুন পাতা উঁকি দিতে শুরু করলে, গাছে জল দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। পুরনো পাতা থেকে পুষ্টিরস সংগ্রহ করে নতুন পাতা বড় হয়ে ওঠে। পুরনো পাতাদ্বয় ক্রমশ শুকিয়ে ঝরে যায়। এর পরে আবার গাছে জল দেওয়া শুরু করুন। এই গাছে ফুল ধরার পরেই সাধারণত নতুন পাতা গজাতে দেখা যায়। তবে গাছের বয়স যদি কম হয়, সে ক্ষেত্রে ফুল না হলেও পুরনো পাতা শুকিয়ে নতুন পাতা গজাতে পারে।

লিথপসের কিছু সমস্যা

রোদ ও জলের অভাবে বা আধিক্যে এই গাছে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সুবিধে এই যে, গাছের সমস্যা কী, তা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারবেন। উপযুক্ত যত্ন নিলে তা সারিয়েও ফেলতে পারবেন।

• এটিয়োলেশন: পর্যাপ্ত রোদ না পেলে গাছের পাতা রোদের অভিমুখে বাড়তে থাকে। ফলে গাছের গঠন নষ্ট হয়ে পাতাগুলো লম্বা ও বাঁকা দেখায়। গাছ দেখেই বুঝতে পারবেন তার কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। পাতা উল্লম্ব আকার ধারণ করলে রোদে রাখার সময় বাড়িয়ে দিন। নতুন পাতা গজানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। নতুন পাতা দেখা দিলে রোদে দিন।

• শুষ্ক পত্র: অনেক সময়ে গাছের পাতার রং নষ্ট হয়ে তা কিশমিশের মতো বর্ণ ধারণ করে। তার মানে গাছের জলের দরকার। নিয়মিত জল দিলেই গাছের পাতা ফুলেফেঁপে উঠবে এবং হৃতবর্ণ ফিরে পাবে।

• স্পাইডার মাইটস: গাছের পাতা ফাটলে, নতুন পাতা গজানোর সময়ে পুরনো পাতা ও নতুন পাতার সংযোগস্থলে এই ধরনের পোকা ধরতে পারে। গাছের সারফেসে সাদা স্পট দেখা গেলে বুঝবেন এই ধরনের পোকা লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগ করুন এবং উপযুক্ত যত্ন নিন।

লিথপসের যত্ন বলতে প্রচুর জল, সার দেওয়ার দরকার নেই। এই গাছকে নজরে নজরে রাখা দরকার। গাছের চেহারায় কিছু পার্থক্য চোখে পড়লেই সাবধান হন। এ গাছ নিজেই জানান দেয় তার কী দরকার। সেই মতো ব্যবস্থা নিলেই বহু দিন ভাল থাকে এই জিয়নপাথর। যার সৌন্দর্যে সেজে উঠবে আপনার সাধের অন্দরমহলও।

Lithpos Tree Home Decor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy