Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Women

International Women’s Day 2022: পেট্রোল-ডিজেল নিয়েই নিত্য সংসার! মহিলাচালিত পেট্রোল পাম্পে হাজির আনন্দবাজার অনলাইন

এ দেশে মহিলা গাড়িচালক দেখা যায় বহু শহরেই। কিন্তু পেট্রল পাম্প মানেই যেন পুরুষকর্মী। তাই ছকভাঙা পেট্রোল পাম্পে ঢুঁ মারা গেল নারী দিবসে।

গোটা একটা পেট্রোল পাম্প চলছে রমণীর গুণে।

গোটা একটা পেট্রোল পাম্প চলছে রমণীর গুণে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রিচা রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৭:১২
Share: Save:

এ যেন স্রোতের বিপরীতে নৌকা বওয়া। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ফোঁকর গলে এক টুকরো আলো। বাইপাসের উপর দিয়ে অবিরাম বাস-গাড়ির আনাগোনা। পারদ চড়ছে। বাড়ছে সূর্যের তাপের তীব্রতা। গরমের ভাব পড়তেই সব কাজেই যেন একটা গতির অভাব। অথচ সুপ্রিয়া, অদিতি, পূর্ণিমাদের দম ফেলার সময় নেই একটুও। গোটা একটা পেট্রোল পাম্প চলছে রমণীর গুণে।

ট্যাক্সি, মোটরবাইক, মারুতি, ট্রাক ঢুকছে একের পর এক। ক্রেতার চাহিদা মতো গাড়ির ফাঁকা ট্যাঙ্কে পেট্রোল-ডিজেল ভরে দিচ্ছেন। টাকা গুনে নিচ্ছেন। হিসাব রাখছেন। কাজে কোথাও কোনও এতটুকু ফাঁকি নেই। খামতি নেই। সবটাই খুব গোছানো। নিপুণ।

সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গড়িয়ার কাছে বাইপাস সংলগ্ন এই পেট্রোল পাম্পের মহিলা কর্মীর সংখ্যা মোট ১২ জন। সকলের একসঙ্গে ডিউটি থাকে না। পালা করে করে থাকে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিশ্রামের জন্য আলাদা ঘর আছে, তবে ফুরসত নেই।

ক্যানিং থেকে আসা এই পাম্পের ১০ বছরের পুরনো কর্মী পূর্ণিমা দাস বললেন, ‘‘এখন গাড়ির চাপ তবুও খানিক কম। ব্যস্ততা ছিল কোভিডের সময়ে। তখন আমরা ৮-৯ ঘণ্টাও কাজ করতাম। গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্সের লাইন পড়ে যেত বড় রাস্তা পর্যন্ত। তখন তো খাওয়ারও সময় থাকত না।’’

নারী হওয়ার দৌলতে প্রতি মাসেই কয়েকটি দিন কাটে অস্বস্তিতে। এ দেশের বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রেই মহিলাদের ঋতুস্রাবকালীন কোন ছুটি থাকে না। ঋতুস্রাব উপেক্ষা করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলারা কাজ করে থাকেন। তেমনই ঋতুস্রাবের শারীরিক কষ্টকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে কাজ করে যান পাম্পের ১২জন মহিলা কর্মচারী।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কষ্ট হয় না?

পাম্পের আরেক কর্মী রিঙ্কু টাকার হিসাব মেলাতে মেলাতে বলেন, ‘‘কষ্ট তো হয়। শুধু তো বাইরের কাজ নয়। বাড়িতেও রান্নাবান্না সেরে, সব কাজ গুছিয়ে তারপর কাজে আসা। তবে আমরা জানি যে আমাদের খেটে খেতে হবে। তাই শরীরের কষ্টকে অত পাত্তা দিই না। মনের জোরে সব কাজ করি।’’

মনের জোরের আঁচ পাওয়া গেল পাম্পের কর্মী অদিতির কথায়ও, ‘‘অনেক সময় কিছু কিছু গাড়ি চালকদের থেকে অশ্লীল বাক্য, কটূক্তি উড়ে আসে। কাস্টমার বলে প্রথমে ছেড়ে দিই। তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরা এক জোট হয়ে রুখে দাঁড়াই।’’

অদিতির কথার রেশ ধরেই সুপ্রিয়া জানালেন, ‘‘মাঝে মাঝে কিছু বলতে ভয়ও লাগে। রাতে একা বাড়ি ফিরি। কখন কী হয়ে যায়! দিনকাল তো ভাল নয়।’’

দিনকাল আদৌ নারীর পক্ষে কখনও ছিল কি? না হলে একুশ শতকে নারী-ক্ষমতায়নের যুগেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো রিঙ্কু, পূর্ণিমা, অদিতি, সাধনাদের নিরাপত্তার দায় নেয় না কেউ!

আজ, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস। নারীদের জন্য বরাদ্দ এই ‘বিশেষ’ দিনটি কী ভাবে উদ্‌যাপিত হয় মহিলা পরিচালিত এই পেট্রোল পাম্পটিতে? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল পাম্পের মালিক স্বয়ং সোনালি সিংহ রায়ের কাছ থেকে। সোনালি বললেন, ‘‘যেখানে আমরা সম অধিকার আদায়ের লড়াইতে নেমেছি, সেখানে কেন আলাদা করে নারী দিবস পালন করব? আমার মেয়েরা প্রতিদিন যেমন কাজ করে এ দিনও কাজ করবে। ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পাম্পের দায়িত্ব মেয়েদের হাতে থাকলেও রাতে ওঁদের রাখতে ভয় করে। তখন ছেলেরা সামলায়। তবে যে দিন থেকে রাতেও মেয়েরা আমার পাম্পের দায়িত্ব নির্ভয়ে সামলাতে পারবে সে দিনই হবে নারী দিবস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Female pump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE