Advertisement
১১ মে ২০২৪

এ বার মালদহেও মিলল জাপানি এনসেফ্যালাইটিস

জ্বরের উপসর্গ আগেই দেখা যাচ্ছিল। এ বার পরীক্ষাতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনের রক্তে মিলল জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ আঁটলেও রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি মেনেছেন। শনিবার তিনি বলেন, “মালদহ মেডিক্যালে যাঁদের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

জ্বরের উপসর্গ আগেই দেখা যাচ্ছিল। এ বার পরীক্ষাতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনের রক্তে মিলল জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ আঁটলেও রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি মেনেছেন। শনিবার তিনি বলেন, “মালদহ মেডিক্যালে যাঁদের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে।”

মালদহে জ্বর ছড়ানোর কথা শুক্রবারই স্বীকার করেছিলেন সুশান্তবাবু। জীবাণু-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ছিল, জ্বরের কারণ জানা না গেলে এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ওই জ্বর দ্রুত অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, মালদহে জ্বর যে অনেকটাই ছড়িয়েছে, তা ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে তাদের কাছে।

মালদহ মেডিক্যালে যে দু’জন রোগীর রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে তাঁরা কালিয়াচক ৩ নম্বর এবং চাঁচল ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। ওই জায়গাগুলিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বিশেষ দল পাঠিয়ে এলাকায় জ্বরে আক্রান্তের তালিকা তৈরি করার কাজ শুরু করেছে। হাসপাতালেও জ্বর নিয়ে প্রচুর রোগী প্রতিদিনই আসছেন। এ দিনও তাঁদের মধ্য থেকে অন্তত ২৫ জনকে ভর্তি করানো হয়। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যায় রক্ত পরীক্ষার ‘কিট’ না থাকায় রিপোর্ট পেতে অন্তত চার দিন সময় লাগছে। তাতে অনেক রোগীর পরিজনেরাই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। পক্ষান্তরে চিকিৎসকদের একাংশ মনেকরেছেন, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার দরুণ রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে।

মালদহ মেডিক্যালের একটি সূত্র জানিয়েছে, জ্বর নিয়ে সেখানে অন্তত ৪০ জন ভর্তি রয়েছেন। গত ৫ অগস্ট মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ ৩০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে। ওই বিভাগের চিকিৎসকেরাই শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজ কতৃর্পক্ষকে রিপোর্ট পাঠিয়ে জানান, দু’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। অথচ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিয়ে রাখঢাক করছেন।

হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ বলেন, “আমাদের এখানে ভর্তি রোগীর রক্তে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে বলে আমার জানা নেই।” জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীও বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। জেলার সাংসদ মৌসম বেনজির নূর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলেও তাঁকেও কিছু বলা হয়নি বলে অভিযোগ। মৌসমের ক্ষোভ, “অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কিছুই বলছেন না।” জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীরও দাবি, মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি রোগীর রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে বলে জানেন না। তিনি বলেন, “যদি তেমন রোগীর সন্ধান মেলে, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জ্বরাক্রান্ত-এলাকা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে মৃত্যুও। ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম’-এ এ দিন সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। মৃত জ্যোতিষ পলসাইয়ের বাড়ি ফাঁসিদেওয়ার বিধাননগর এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ দিন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৩ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ছিলেন। শুক্রবার এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে রামঝোরা চা বাগানের এক মহিলা শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়। তাঁর নাম বাটুলি ছেত্রী (৫০)। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। শুক্রবার বীরপাড়া হাসপাতালে মারা যান। তাঁর রক্তের নমুনা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। তবে এ দিন পর্যন্ত তার রিপোর্ট মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

encephalitis malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE