Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চোখ বাঁচিয়ে রং খেলুন

আজ দোল। রং খেলুন। কিন্তু সাবধান। চোখে রং ঢুকলে ভাল মতো ভুগতে হয়। পরামর্শ দিচ্ছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়এখন বাজারে বেশিরভাগই সিন্থেটিক রং। এগুলি চোখের পক্ষে মারাত্মক। আবীরেও সমস্যা হতে পারে। রং ঢুকলেই চোখে জ্বালা, যন্ত্রণা হতে পারে। চোখ কড়কড় করবে।

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

প্রশ্ন: রঙের উৎসবে একটা সাধারণ সমস্যা হল চোখের মধ্যে রং ঢুকে যাওয়া। এতে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: চোখ মানুষের শরীরের এমন এক অঙ্গ যেখানে কোনও কিছু ঢুকলেই সমস্যা হতে পারে। রং ঢুকলে তো বটেই। এখন বাজারে বেশিরভাগই সিন্থেটিক রং। এগুলি চোখের পক্ষে মারাত্মক। আবীরেও সমস্যা হতে পারে। রং ঢুকলেই চোখে জ্বালা, যন্ত্রণা হতে পারে। চোখ কড়কড় করবে। তাকাতে সমস্যা হবে। চোখ দিয়ে জল বের হতে পারে। পরে তা থেকে সংক্রমণ বা প্রদাহ হতে পারে।

প্রশ্ন: তা হলে কি চোখের জন্য রং খেলাটাই মাটি হয়ে যাবে?

উত্তর: না তা কেন! চোখকে নিরাপদে রেখে রঙের উৎসবে সামিল হওয়া যেতে পারে। চশমা বা গগলস জাতীয় কিছু পরা যেতে পারে। অন্য কেউ রঙ মাখাতে এলে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে, যাতে চোখের মধ্যে রং না ঢুকতে পারে।

প্রশ্ন: এর পরেও চোখে রং ঢুকলে কী করা উচিত?

উত্তর: চোখের মধ্যে রং ঢুকে গেলে বেশি না কচলিয়ে প্রথমেই পরিস্রুত পানীয় জলের ঝাপটা দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে দোকান থেকে সিরিঞ্জ কিনে সূচটা ফেলে দিয়ে পানীয় জল ভরে চোখের পাতা দু’টিকে ধরে ওয়াশ করা যেতে পারে। তবে কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চোখে কোনও ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। অনেকে দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিজেরাই ব্যবহার করেন— এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলিতে স্টেরয়েড থাকে।

প্রশ্ন: অনেক সময়ে তো হাতের কাছে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে?

উত্তর: পরিস্রুত পানীয় জল দিয়ে চোখে ঝাপটা দেওয়ার পরেও চোখে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে চোখের জন্য যে সব সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ রয়েছে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে স্টেরয়েড জাতীয় কোনও ড্রপ একেবারেই ব্যবহার করা উচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে ওষুধ কেনার সময়েই জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: এ সময়েই আরও একটি রোগ ব্যাপক ভাবে ছড়ায়। যাতে চোখ লাল হয়ে যায়। এটা কেন হয়?

উত্তর: এটা সাধারণত এক বিশেষ ধরনের ভাইরাস (অ্যাডেনো ভাইরাস) ঘটিত রোগ। এ জন্য রোগটি খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়েও পরে। সাধারণ ভাবে এটি ‘জয়বাংলা’ বা কনজাংটিভাইটিস নামে পরিচিত। এই রোগে ভাইরাসের সংক্রমণে চোখের কর্নিয়ায় ছোটো ছোটো ঘা হয়। চোখ লাল হয়, চোখ ফুলে যায়, চোখ থেকে জল পড়ে। এতে চোখে ব্যথা হয়। দৃষ্টিশক্তি সাময়িক ভাবে কমে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের জল বা পিচুটি কোনও ভাবে অন্য জনের চোখে গেলে এই রোগ ছড়িয়ে পরে। তবে আক্রান্ত চোখের দিকে তাকালে এই রোগ ছড়ায় বলে যে বিশ্বাস আছে তা ঠিক নয়।

প্রশ্ন: প্রতিকারের উপায় কী?

উত্তর: কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগটি নিরাময় হয়। তবে সম্পূর্ণ নিরাময় হতে এক থেকে তিন সপ্তাহও লাগতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোখের মধ্যে সাদা দাগ দেখা যায়। তবে তাও কিছুদিন পরে ভালো হয়ে যায়। চোখে এ ধরণের সংক্রমণ হলে চোখের মধ্যে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনও কারণে চোখে কোনও অসুবিধা হলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তবেই চোখে হাত দিতে হবে, অথবা পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করা যেতে পারে। সাবধানতা অবলম্বনই একমাত্র পথ। যেহেতু এটি ভাইরাসঘটিত তাই এক্ষেত্রেও সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করে কোনও উপকার হয় না। তবে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ একদম ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে সাময়িক স্বস্তি পেলেও পরবর্তী সময়ে চোখের ক্ষতি হতে পারে।

প্রশ্ন: গরমের শুরুতেই বাচ্চাদের চোখে পোস্তর দানার মত সাদাসাদা কিছু দেখা যায় এবং খুব চোখ চুলকায়। এর কারণ কী?

উত্তর: এটি একটি অ্যালার্জি জনিত রোগ। এর ফলে বাচ্চাদের চোখের পাতার ভিতরের দিকে পোস্তর দানার মত সাদাসাদা দাগ ছাড়াও চোখ লাল হয় এবং সন্ধ্যার সময়ে চোখ থেকে জল পরে। সাধারণত গরমে বা ধুলোবালির মধ্যে যাতায়াত করার জন্য এটা হয়। প্রতি বছর বসন্তে এবং গরমের শুরুতে এই রোগটি দেখা যায়। সাধারণত দুই থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত এই রোগ হয়। বর্তমানে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে আরও অল্প বয়স থেকেই এই রোগ দেখা যায়।

প্রশ্ন: এতে বাচ্চাদের দৃষ্টিশক্তির কি কোনও সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: না, এতে বাচ্চাদের দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা হয় না। তবে ব্যতিক্রমী উদাহরণও আছে। এই জাতীয় অ্যালার্জি-ঘটিত রোগের ফলে চোখে ছানি এবং গ্লুকোমা-র মতো রোগও দেখা গিয়েছে।

প্রশ্ন: এর প্রতিকার কী ভাবে হবে?

উত্তর: সাধারণত ধুলোবালি, ফুলের রেনু বা গরমে ঘামের জন্য এই রোগ হয়। তাই দূষণ এড়িয়ে চলায় একমাত্র পথ। নির্দিষ্ট বয়সের পরে এই রোগ আর হয় না। তত দিন কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা উচিত।

প্রশ্ন: আমরা সাধারণত দেখি খুব অল্প বয়স থেকেই বাচ্চারা মোবাইলে গেম খেলছে বা মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। এতে কি বাচ্চার দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ হতে পারে। অনেকটা সময় একটানা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের জল শুকিয়ে যেতে পারে। এতে চোখ লাল হবে, চুলকানি হবে। চোখ জ্বালা করবে। ঘনঘন চোখের পাতা ফেলবে। চোখে হাত যাবে। চোখে সংক্রমণ হতে পারে। চোখে জল শুকিয়ে গেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। ১৫-২০ মিনিট একটানা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে ঝাপসা দেখবে।

প্রশ্ন: একটি বাচ্চাকে কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত?

উত্তর: যদি দেখা যায় বাচ্চার চোখ দিয়ে জল পড়ছে, বাচ্চা আলোর দিকে তাকাতে পারছে না, দৃষ্টি স্বাভাবিক না লাগলে, বাচ্চাদের চোখে সাদা দাগ দেখা গেলে, জন্মের সময় বাচ্চার ওজন যদি ১.৭৫০ কিলোগ্রামের কম হয় বা যদি জন্মের পরে এক দিনের বেশি অক্সিজেন দিতে হয়, তবে অবশ্যই জন্মের এক মাসের মধ্যে একবার চোখ দেখিয়ে নেওয়া উচিত।

তা ছাড়া বাড়িতে বা বিদ্যালয়ে মজার ছলে বাচ্চার দৃষ্টি ঠিক আছে কি না তাও দেখে নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটা চোখ বন্ধ করে অন্যটা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কি না তা জিজ্ঞাসা করতে হয়। যে বস্তু বা লেখা অন্যরা দেখতে পাচ্ছে, তা যদি আপনার বাচ্চা দেখতে না পায় তা হলে জানতে হবে তার চোখে কোনো সমস্যা রয়েছে। সাধারণত ৫-৬ বছর বয়সে প্রত্যেক বাচ্চারই একবার চোখ দেখিয়ে নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: চোখের ছানি কী? এটা কী উদ্বেগের?

উত্তর: চোখের মধ্যে যে লেন্সটি রয়েছে তা স্বচ্ছ থাকে। সে দিকে যে আলো যায় তা রেটিনার উপরে ফোকাস হয় এবং আমরা কোন বস্তুকে দেখতে পাই। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই লেন্সটি অস্বচ্ছ হয়ে পরে। তখন আমরা কোনও বস্তুকে ঝাপসা দেখি। এটাকেই ছানি বলে।

ছানি সাধারণত বয়সকালে হয়। তবে এখন অল্প বয়স থেকেই ছানি হতে পারে। জন্মগত ছানিও হতে পারে। তবে ছানি অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যায়। এটি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

প্রশ্ন: চোখ সুস্থ রাখতে হলে কী করা উচিত?

উত্তর: সহজ উপায় হল ভিটামিন-এ রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে। যে কোনও হলুদ রঙের ফল নিয়মিত খাওয়া উচিত। চোখে হাত দেওয়া উচিত নয়। দিলেও পরিষ্কার করে নিতে হবে। পড়াশোনার সময় পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে। চোখে পোকা বা অন্য কিছু ঢুকলে ঠান্ডা পানীয় জলের ঝাপটা নিতে হবে। অন্য কোনও কিছু চোখে দেওয়া উচিত নয়।

এক টানা দীর্ঘক্ষণ ধরে কম্পিউটার বা টেলিভিশন বা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা উচিত নয়। মাঝেমধ্যে দূরের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের আরাম হয়। চোখ আমাদের অমূল্য সম্পদ। তাই চোখ সুস্থ রাখার জন্য আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

সাক্ষাৎকার: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

সাত দিনে সাত কাহনের বিভিন্ন বিভাগে ই-মেল বা চিঠি পাঠাতে:

ই-মেল: edit.southwestbengal@abp.in
চিঠি: আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১।
চিঠি বা ই-মেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম উল্লেখ করতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

colours Eyes Holi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE