Advertisement
E-Paper

রক্তশূন্যতায় ভুগছে দুই জেলার হাসপাতাল

গরম পড়তেই বাড়ছে রক্তের সঙ্কট। তমলুকের শিমুলিয়া গ্রামের জাহানারা বেগমের জন্য রক্তের সুপারিশ করেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিন দিন ধরে জেলা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে অপেক্ষা করেও রক্ত জোগাড় করতে পারেনি স্বামী হারুন অল রশিদ। একই সমস্যায় নন্দীগ্রামের সরবেড়িয়া গ্রামের মিনুয়ারা বিবির পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:৩৯
নেই-এর তালিকা। তমলুক জেলা হাসপাতাল ও মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নেই-এর তালিকা। তমলুক জেলা হাসপাতাল ও মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গরম পড়তেই বাড়ছে রক্তের সঙ্কট।

তমলুকের শিমুলিয়া গ্রামের জাহানারা বেগমের জন্য রক্তের সুপারিশ করেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিন দিন ধরে জেলা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে অপেক্ষা করেও রক্ত জোগাড় করতে পারেনি স্বামী হারুন অল রশিদ। একই সমস্যায় নন্দীগ্রামের সরবেড়িয়া গ্রামের মিনুয়ারা বিবির পরিবার। মিনুয়ারাও রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু তাঁর গ্রুপের রক্ত নেই জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে।

এমনই রক্তশূন্য হাল আর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন খোদ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাসও। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর গরমকালে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ কমে যায়। তবে জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে যতক্ষণ রক্ত থাকে তা রোগীদের দেওয়া হয়। শিবিরগুলিতে রক্তদাতার সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবে তীব্র সঙ্কট এখনই বলা যাবে না।’’

বুধবার জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাঙ্কে পজিটিভ গ্রুপের কোন রক্ত নেই। গোটা ব্যাঙ্কে মাত্র এক বোতল ‘এ’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত মজুত রয়েছে। রক্তের এই অভাবের কারণ নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার তপন সামন্ত বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালের সময় রক্তদান শিবিরের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। আর এইসময় যে সব রক্তদান শিবির হয় সেখানে রক্তাদাতার সংখ্যা কম থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবে রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ কমে যায়।’’ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক ৩৫৯ টি রক্তদান শিবিরে গিয়ে প্রায় ১৬ হাজার বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। চলতি বছরে ১ জুন পর্যন্ত ২১ টি শিবিরে যোগ দিয়ে ৬৬৫১ বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে সরাসরি রক্ত দিয়েছেন ৩৭৯ জন। চলতি বছরে গত পাঁচ মাসের হিসেব অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে রক্তদান শিবির হয়েছে ৫১ টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪০ টি, মার্চ মাসে ৫১ টি, এপ্রিল মাসে ৩৯ টি ও মে মাসে ৩০টি শিবির হয়েছে।

রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে জঙ্গলমহলেও। বুধবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত রয়েছে মাত্র ২৪ ইউনিট রক্ত। ‘এবি পজিটিভ’ গ্রুপের কোনও রক্ত নেই। মজুত যেটুকু রক্ত রয়েছে সেগুলির মধ্যে কিছু ইউনিট রক্তের এইচআইভি পরীক্ষা করানো হয় নি। কারণ, কয়েক দিন ধরে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ‘কিট’ ব্লাড ব্যাঙ্কে ছিল না। স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে বাঁকুড়ার রিজিওনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার (আরবিটিসি) থেকে এই ‘কিট’ আসে। হঠাত্‌ করে কিট অমিল হওয়ায় মজুত রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা সম্ভব হয় নি। অবশেষে বুধবার সেই ‘কিট’ এসে পৌঁছেছে। জেলা হাসপাতালে দৈনিক রক্তের চাহিদা ২০-৩০ ইউনিট। এ ছাড়া বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিও এই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই রক্ত কেনে। সব মিলিয়ে চাহিদাটা দৈনিক ৫০ ইউনিট রক্ত। এখন রক্তের অভাবে সমস্যায় পড়েছেন সকলেই। ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিত্‌সক আলো হাঁসদা বলেন, “প্রচণ্ড গরমের জন্য উদ্যোক্তারা রক্তদান শিবির বাতিল করে দিচ্ছেন। ৬ জুন আমরা নিজেরাই একটি রক্তদান শিবির করব বলে ঠিক করেছি।’’

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের চার ইউনিট রক্ত ছিল। অবস্থা এমনই, রোগীদের রক্তদাতা এনে রক্ত জোগাড় করার কথা বলা হয়েছে। কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কের বোর্ডে লিখে দেওয়া হয়েছে, এক বোতলও নেই। আবার আরও করুণ অবস্থা তো এগরা মহকুমা হাসপাতালের। সেখানে কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কই নেই।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ছবিটাও আলাদা কিছু নয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২৬০ বেডের ঘাটাল হাসপাতালে গড়ে ৪০-৫০ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকে। এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরই মহকুমা হাসপাতাল-সহ মহকুমার চল্লিশটি বেসরকারি নার্সিংহোমের রোগীরাও নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে চাহিদা গড়ে ৬০-৭০ ব্যাগ। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি, বেসরকারি নার্সিংহোমের রোগীরা তো দূর, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাই রক্ত পাচ্ছেন না।

বুধবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের বোর্ডে দেখা গেল, রক্ত রয়েছে মাত্র ৬৫ বোতল। তাও সব গ্রুপের রক্ত নেই। হাসপাতাল সুপার যুগল করের কথায়, “জেলার অন্য হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের রক্তের জোগানও আমাদেরই দিতে হয়। আমাদের হাসপাতালেই গড়ে দিনে ৫০-৬০ বোতল রক্তের প্রয়োজন হয়।’’ রক্তের এত আকাল হওয়ার কারণ কী? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘প্রচণ্ড গরমে রক্তদান শিবিরের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। কোথাও শিবির হলেও রক্তদাতার সংখ্যা সে ভাবে মিলছে না। তাই কিছুটা সমস্যা তো রয়েছেই।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “গ্রীষ্মে সাধারণত রক্তদান শিবির কম হয়। তবু আমরা রক্তদান শিবির করে এমন সংস্থাকে উত্‌সাহিত করার চেষ্টা করছি।’’

blood hospital blood bank jhargram midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy