Advertisement
১৯ মে ২০২৪

হাসপাতাল বাঁচানোর দাবিতে গণ-অনশন হল গোবরডাঙায়

মৃতপ্রায় গ্রামীণ হাসপাতালকে চাঙ্গা করার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া থেকে শুরু করে অবরোধ-বিক্ষোভ সবই করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় এ বার অনশনের সিদ্ধান্ত নিলেন গোবরডাঙার বাসিন্দারা।

অনশন চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

অনশন চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

মৃতপ্রায় গ্রামীণ হাসপাতালকে চাঙ্গা করার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া থেকে শুরু করে অবরোধ-বিক্ষোভ সবই করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় এ বার অনশনের সিদ্ধান্ত নিলেন গোবরডাঙার বাসিন্দারা।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে গোবরডাঙা স্টেশনে গণঅবস্থান ও অনশন শুরু করেন বাসিন্দারা। অনশন চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। উদ্যোক্তা ‘গোবরডাঙা পুরউন্নয়ন পরিষদ’। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এতে সামিল হয়েছেন। পুরউন্নয়ন পরিষদের সম্পাদক প্রবীর মজুমদার বলেন, ‘‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমাদের অনশনে প্রায় চারশো মানুষ সামিল হয়েছেন। আমাদের দাবি, হাসপাতালের ইন্ডোর বিভাগ দ্রুত চালু করতে হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত ও চিকিৎসা পরিষেবার মান বাড়াতে হবে।’’

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার এই গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে কার্যত কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। বহু দিন আগেই হাসপাতালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রোগী ভর্তি। শুধুমাত্র দিনের বেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগে রোগীরা ডাক্তার দেখাতে পারেন। এখান থেকে পরিষেবা না পেয়ে এলাকার মানুষজনকে ছুটতে হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার দূরে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বা ৩৮ কিলোমিটার দূরে বারাসত জেলা হাসাপাতালে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, নামেই হাসপাতাল। এমন হাসপাতাল না থাকাই ভাল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অপারেশন থিয়েটার থাকলেও এখানে অস্ত্রোপচার হয় না। আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি এমনকী এক্সরেও হয় না। নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে রোগী দেখাতে এলে পাঁচ টাকা করে এবং তার পরে এলে রোগী প্রতি দিতে হয় দশ টাকা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, অথচ দুপুর তিনটের পরে বহির্বিভাগে চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। মেলে না বিনামূল্যে ওষুধপত্রও।

১৪ বছর আগে হাসপাতালটি ছিল উপসহায়ক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়। অথচ এই হাসপাতালের উপরে গোবরডাঙা ছাড়াও স্বরূপনগর, গাইঘাটা ও হাবরা ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ নির্ভরশীল।

গোবরডাঙা গ্রামীণ এই হাসপাতালটি জেলা পরিষদের অধীন। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৪ সালে রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ননী ভট্টচার্য এখানে একটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য আরও পাঁচ বিঘা জমি লাগবে বলেও তখন ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে জমি কিনে স্বাস্থ্য দফতরকে দেওয়া হয়। অর্থ অনুমোদনও হয়। ওই টাকায় হাসপাতালের ভবন-সহ নানা পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্থ দে এখানে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল তৈরি নিয়ে আপত্তি তোলেন। ২০০০ সালের আগে স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করে। বলা হয়েছিল, জেলা পরিষদকে এক বছরের জন্য হাসপাতালটি দেওয়া হল। পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদ তাদের অধীনে এই হাসপাতালটি রাখতে চাইলে আবেদন করতে পারবে। অভিযোগ, পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদ ওই আবেদন করেনি। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে জেলা পরিষদ স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ওই হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে পারবে না। তাদের সেই পরিকাঠামো নেই। এ দিকে স্বাস্থ্য দফতরও হাসপাতালটি নিজেদের হাতে নিতে গড়িমসি করছে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’

এলাকাবাসীর ক্ষোভ, বাম আমলেও হাসপাতালের উন্নতি হয়নি। তৃণমূলের প্রথম পাঁচ বছর প্রায় শেষের মুখে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য গোবরডাঙায় একটি সভা করতে এসে হাসপাতালটি যাতে স্বাস্থ্য দফতর নিজেদের অধীনে নেয়, সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপরেও কাজ এগোয়নি।

গোবরডাঙার পুরপ্রধান তৃণমূলের সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালটি এখন মৃতপ্রায়। আমরা চাই ২০০০ সালের আগে যেমন দশটি শয্যা ছিল তেমন হাসপাতাল চালু হোক। আমাদের ৩০ শয্যার হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। লেবার রুম ও ডায়েরিয়া হলে ভর্তির ব্যবস্থা থাকবে, ছোটখাটো আঘাতে জখম মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা হলেই হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানানো হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে হাসপাতালটি চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে, তা বহু দিন আগেই চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। তারা যেন হাসপাতালটির দায়িত্ব নেয়।’’

এ দিনের অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা বাপি ভট্টচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’ কী বলছেন স্বাস্থ্য কর্তারা? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ওই হাসপাতালটি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক করেছেন। সেখানে ঠিক হয়েছে, হাসপাতালের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর, হিসেব-নিকাশ করা হবে। এই হাসপাতালে যাঁরা কর্মরত তাঁদের বেতনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারপর স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করবে তারা হাসপাতালটি নিজেদের অধীনে নেবে কিনা।

সব মিলিয়ে খুব একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। সব শুনে তাঁরা আন্দোলন চলিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE