কুয়াশা ঘেরা সকালে। বুধবার, বেলেঘাটা বাইপাসে। ছবি— সুদীপ্ত ভৌমিক
গত কয়েক বছর ধরেই তীব্র গরমে কার্যত ভাজাভাজা হয়েছে কলকাতা। এ বার শীতকালেও কলকাতার ‘উষ্ণতা’ কমেনি! উল্টে বেড়েছে নানা ধরনের পরজীবীঘটিত রোগের উপদ্রব। পরিবেশবিদেরা বলছেন, এ সবই জলবায়ু বদলের উপসর্গ। উপকূলবর্তী শহর হওয়ার জন্য কলকাতার কপালে এমনটা ভবিতব্য বলেও আশঙ্কা তাঁদের।
জলবায়ু বদলের ফলে কলকাতার কপালে আর কী কী বিপদ জুটতে পারে, তা খুঁজতেই এ বার একটি কেন্দ্র খোলা হল কলকাতা পুরসভায়। যার নাম হয়েছে ‘কলকাতা ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল’। এর সঙ্গে জনগণকে জুড়তে আনা হচ্ছে একটি ওয়েব পোর্টাল এবং মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপও।
পুরকর্তারা জানান, দেশে এমন উদ্যোগ প্রথম। বুধবার বণিকসভা ‘বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ এবং কলকাতার ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের যৌথ অনুষ্ঠানে এই শাখা ও অ্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনার স্কট ফারসেডন-উড জানান, দু’বছর ধরে পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা সমীক্ষা করে দূষণের উৎস চিহ্নিত করেছেন। কী ভাবে তা কমানো যায়, সে উপায় বের করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘উদ্বোধন হলেও অ্যাপটি মানুষের কাছে পৌঁছতে আরও মাসখানেক লাগবে। এর মাধ্যমে কলকাতার পরিবেশগত ও জলবায়ুগত তথ্য সরাসরি মানুষ জানতে পারবেন। প্রয়োজনে সতর্ক হতে পারবেন তাঁরা।’’
পরিবেশবিদেরা বলেন, জলবায়ু বদলের পিছনে মূল কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন। যার জন্য দায়ী পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ। এই দূষণের নিরিখে কলকাতা কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে। বছর কয়েক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছিল, বায়ুদূষণে দেশের মহানগরীর মধ্যে কলকাতার স্থান দ্বিতীয়। ফলে এ রাজ্যে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, কলকাতার এই বায়ুদূষণের পিছনে গাড়ির ধোঁয়া যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী খোলা জায়গায় কয়লা এবং কঠিন বর্জ্য পোড়ানোও। এ দিন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘শীতকালে কলকাতার বহু জায়গায় বর্জ্য পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হলেও পুরো সাফল্য মেলেনি।’’
এ দিন পুরসভার নতুন কেন্দ্র, অ্যাপ বার করার পরে পরিবেশবিদদের অনেকেই তাই বলছেন, এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু শুধু দূষণ মেপে আর জনগণকে জানিয়ে এর সমাধান করা যাবে না। বরং দূষণ কমানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চাই।
পরিবেশবিদেরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের জমানায় কলকাতা পুর এলাকার জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা হলেও তাতে পরিবেশগত দিক ছিল না। পরবর্তী কালে ১৯৯০-২০১০ সালের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হলে তাতে পরিবেশগত দিকটি ঢোকানো হয়। তারও পরে ক্যালকাটা এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সে সব মেনে কাজ কতটা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে পরিবেশবিদদের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy