দীর্ঘ দিন পর কাছাড় জেলায় ক্যানসার রোগীর সংখ্যা কমল। ‘ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম’-এর বিপোর্টে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
কাছাড়ে ওই ক্যানসার প্রকল্পের কাজ করছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ২০০৭ সাল থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন। প্রতি বারই দেখা যাচ্ছিল, ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।
ব্যতিক্রম সর্বশেষ রিপোর্টটি।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিপোর্টে প্রকাশ, গত দু’বছরে জেলায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭২ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৬৬ জন। মহিলার সংখ্যা ১ হাজার ২০৬। তার আগের দু’বছরে নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৪১। তার আগের পর্যায়ে ওই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৩৯। দু’বছর আগে ৩০২ জন রোগী বেড়েছিল। এ বার কমল ৬৯ জন।
রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কাছাড়ে পুরুষদের ক্যানসার বেশি হয় খাদ্যনালীতে, এরপরই গলা ও খাদ্যনালীর সংযোগস্থলে। মহিলাদের স্তন ও জরায়ুমুখে। অর্থাৎ পুরুষদের ক্যানসারের মূল কারণ বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুটখা। শতাংশের হিসেবে তা মোট রোগীর ৫২.৩৬ শতাংশ। মহিলাদের মধ্যে তামাকজাত কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪.৯৬ শতাংশ।
তবে মৃতের সংখ্যা হিসেব কষলে চিত্রটি বদলে যায়। গত দু’বছরে ক্যানসার যে সব পুরুষের প্রাণ কেড়েছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই ছিল ফুসফুসে সংক্রমণ। এর পর খাদ্যনালী। সব চেয়ে বেশি মহিলার মৃত্যু হয়েছে গল ব্লাডারে ক্যানসারে। স্তনে সংক্রমণের ঘটনা দ্বিতীয় স্থানে।
কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালের নির্দেশক রবি কান্নান বলেন, ‘‘মহিলাদের স্তন ক্যানসার বিয়ের বয়স, জীবনযাত্রার মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।’’ তিনি জানান, এখানকার মহিলারা বিড়ি-সিগারেট খান না বটে, কিন্তু পানে চুন-জর্দা নেন। সঙ্গে গুটখাও। পুরুষরা পান-বিড়ি-সিগারেট-খৈনি-গুটখা কিছুই বাদ দেন না। তাঁর কথায়, ‘‘তামাক এড়াতে পারলে এই অঞ্চলের ক্যানসার ৭০ শতাংশ কমে যেত।’’
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমীক্ষায় যে আগের তুলনায় ৬৯ জন ক্যানসার রোগী কাছাড়ে কমেছে, তাকে কাছাড় ক্যানসার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ।
এপিডেমিওলজি ও টিউমার রেজিস্ট্র বিভাগের মুখ্য আধিকারিক অমিত দাস বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ শুধু কাছাড় জেলা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। আমাদের কাছে রয়েছে গোটা উপত্যকার চিত্র।’’ তিনি শুধু বরাকের রোগীদের বছর ভিত্তিক তুলনা দেখিয়ে জানান, প্রতি বছর এখানে রোগী বাড়ছে। কাছাড় ক্যানসার হাসপাতালে গত চার বছরে বরাক উপত্যকার মোট রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ১৬৯, ১ হাজার ২৯৬, ১ হাজার ৩৫১ এবং ১ হাজার ৩৯৮ জন। তবে, এ নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের সচেতনতা বাড়ছে বলে মনে করেন ক্যানসার হাসপাতালের প্রশাসনিক অফিসার কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতালের নির্দেশক রবি কান্নানের নেতৃত্বে তাঁরা প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজ, গ্রাম-শহরে সচেতনতা শিবির করছেন। তার সুফলও মিলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy