Advertisement
E-Paper

পার্থেনিয়ামের বিষ থাবা বসাচ্ছে চাষে

এ বার কৃষি জমিতেও থাবা বসাতে শুরু করেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। রাস্তার দু’পাশে বা রেললাইনের ধারে সাধারণত এদের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু পার্থেনিয়ামের ভয়াবহতা নিয়ে কার্যত অসচেতনতার জেরেই মালদহের চাঁচলে ওই উদ্ভিদ কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ-সহ তা রোধে অবিলম্বে সচেতনতার প্রচার শুরু না হলে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১১

এ বার কৃষি জমিতেও থাবা বসাতে শুরু করেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম। রাস্তার দু’পাশে বা রেললাইনের ধারে সাধারণত এদের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু পার্থেনিয়ামের ভয়াবহতা নিয়ে কার্যত অসচেতনতার জেরেই মালদহের চাঁচলে ওই উদ্ভিদ কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ-সহ তা রোধে অবিলম্বে সচেতনতার প্রচার শুরু না হলে পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। সচেতনতার অভাবে চাষিরা অন্যান্য আগাছার মতো ওই উদ্ভিদ উপড়ে ফেলছেন। কিন্তু তাতে অন্য জমিও আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। সচেতনতার প্রসারের পাশাপাশি কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে পার্থেনিয়াম একেবারেই নির্মূল করা সম্ভব বলে দাবি পরিবেশ আন্দোলনকারীদের।

জেলা কৃষি দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা অনন্তদেব মাইতি বলেন, ‘‘সাধারণত উঁচু জমিতেই পার্থেনিয়াম গাছ হয়। ধান, গমও উঁচু জমিতেই চাষ হয়। ফলে আগাছা হিসেবে ধান খেতে পার্থেনিয়াম শুধু ক্ষতিকারকই নয় ধানের বৃদ্ধিকেও তা ব্যাহত করবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘লবণ জল বা ইউরিয়া সার গুলে স্প্রে করলে এ ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায়। চাষিদের সচেতন করতে কৃষি দফতরের তরফে প্রচার চালানো হবে।’’

চাঁচল ১ ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘শুধু কৃষিক্ষেত্রেই নয়। পার্থেনিয়ামের খারাপ প্রভাব পরিবেশ দূষিত করে। খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে প্রশাসনের তরফেও ওই গাছ উচ্ছেদ করতে প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’

কিন্তু কী এই পার্থেনিয়াম‌? কী ধরনের প্রভাব এ ঠিক ফেলে পরিবেশে?

পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, অত্যন্ত দূষক উদ্ভিদ বলে পরিচিত পার্থেনিয়ামের রেণু অতি সূক্ষ ও হালকা হওয়ায় তা সহজেই বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে পারে। যা সহজেই হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগ সৃষ্টি করে। এমনকী এই উদ্ভিদের উপক্ষার পার্থেনিন ত্বকের র্যাশ থেকে শুরু করে ক্যান্সার কোষ তৈরির সহায়ক। পার্থেনিয়ামের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের সংযোজন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী কালে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও সংকট তৈরি হবে।

চাঁচলের খরবা-সহ বেশ কিছু এলাকায় এর মধ্যেই কৃষিজমি আক্রান্ত হয়েছে পার্থেনিয়ামে। পরিবেশ আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, আক্রান্ত জমির ধান থেকে তৈরি চারা অন্য খেতকেও আক্রমণ করবে। পাশাপাশি ওই জমিতে কাজ করায় চাষিদেরও নানা শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে পারে। চাঁচলের কাজলাদহ এলাকার চাষি রফিকুল ইসলাম, মহম্মদ হেলালরা বলেন, ‘‘ধানের জমি থেকে ওই আগাছা তুলে ফেলছি। কিন্তু ফের তা জন্মাচ্ছে। ওই গাছ যে ক্ষতিকর তা আমাদের কেউ জানায়নি।’’

চাঁচল শহর ও লাগোয়া এলাকায় কয়েক বছর আগেও ব্যাপক ভাবে পার্থেনিয়ামের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন স্কুলের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক তথা পরিবেশ আন্দোলনকারী কমলকৃষ্ণ দাস। তাঁরা অনেকটাই সফলও হয়েছেন। কিন্তু এ বার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কমলবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু পার্থেনিয়াম গাছ তুলে ফেললে হিতে বিপরীত হবে। তবে কিছু নিয়ম মেনে তা করলে পার্থেনিয়াম সমূলে দূর করা সম্ভব।’’

কী সেই পদ্ধতি? হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরে প্রথমে গাছ তুলে তা গর্তে ফেলতে হবে। গাছ তোলার পর জমিতে নুন গোলা জল দিয়ে কালকাসুন্দি ও গাঁদা ফুলের গাছ পুঁতে দিলে পার্থেনিয়াম নির্মূল করা সম্ভব। কেননা ওই গাছ দু’টি যেখানে থাকে সেখানে পার্থেনিয়াম গজায় না।

পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত কাজ করেন চাঁচলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক আব্দুর রশিদ। তিনিও বলেন, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে দ্রুত সচেতনতার উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।’’

Environmental activist Parthenium malda farmer Bapi Majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy