Advertisement
E-Paper

বাড়িতে ফাইন ডাইনিং

বাড়ির সুচারু পরিবেশনে আপনার অতিথিও পেতে পারেন রেস্তরাঁসুলভ মেজাজ। প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতিরদিন বদলেছে। খাবারের মেনুও বদলেছে। কাঁসার বাসনের জায়গায় এসেছে চিনামাটির বাসন, পাথরের গ্লাসের পরিবর্তে কাচের, মাটিতে পিঁড়ের বদলে ডাইনিং টেবল... আরও কত কী!

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১

বাঙালির সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার যোগাযোগ চিরন্তন। আর সেখানে যদি বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ব্যাপার হয়, তা হলে আড়ম্বর দ্বিগুণ। আলমারি থেকে বেরোবে পাঁজা-পাঁজা বাসন, হেঁশেলে কড়াই-খুন্তি, শিলনোড়ার আওয়াজে সে দিন ঘুম ভাঙবে সকাল সকাল। তবে না বোঝা যাবে, বাড়িতে অতিথি আসছেন! পাতের পাশে পঞ্চব্যঞ্জনে খাবার সাজিয়ে না দিলে শান্তি নেই মা-কাকিমাদের।

দিন বদলেছে। খাবারের মেনুও বদলেছে। কাঁসার বাসনের জায়গায় এসেছে চিনামাটির বাসন, পাথরের গ্লাসের পরিবর্তে কাচের, মাটিতে পিঁড়ের বদলে ডাইনিং টেবল... আরও কত কী! এ বার আর এক ধাপ এগোনোর পালা। এখন অনেকেই অতিথিদের নিমন্ত্রণ করে ফাইন ডাইনিং রেস্তরাঁয় ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাড়িতেই যদি সেই অ্যাম্বিয়েন্স তৈরি করা যায়! চেষ্টা করে দেখা যাক...

ফাইন ডাইনিং কী?

শিকড় খুঁজতে চলে যেতে হবে ফরাসি বিপ্লবের সময়ে। রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গেই খাওয়াদাওয়ার জগতেও এল বিপ্লব। সে সময়ে অনেক সম্ভ্রান্ত বাড়ির হেঁশেল থেকে েবরিয়ে এসে কিছু শেফ আ লা কার্টে মেনু ও গুরমে (gourmet) ফুড নিয়ে প্রাইভেট ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। সেখানে ডাইনিং টেব‌লের সাজ থেকে শুরু করে খাবারের মেনু ও প্রেজ়েন্টেশন... সবেতেই থাকত ‘আ টাচ অব ক্লাস’। জন্ম হয় ফাইন ডাইনিং রেস্তরাঁর। ক্রমে তা শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে বিভিন্ন দেশে। কলকাতার নানা স্পেশ্যালিটি রেস্তরাঁ চেনের কর্ণধার অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘ফ্রান্সেই এর গোড়াপত্তন। বারোটি কোর্স সার্ভ করা হত ফ্রান্সে। ফলে পুরো ডিনার শেষ হতে সময় লাগত প্রায় দু’-আড়াই ঘণ্টা। গেস্টের রিল্যাক্সেশনের জন্য মাঝে ‘সরবে’ থাকত প্যালেট ক্লেনজ়‌ার হিসেবে। ‘ফাইন ডাইনিং’ কথার মধ্যেই এর অর্থ প্রচ্ছন্ন। রেসিপি থেকে শুরু করে পরিবেশনের মান ধরে রাখাই আসল। ক্রকারি, কাটলারি, অ্যাম্বিয়েন্স... সব কিছু হবে খুব ভাল মানের ও সুন্দর করে গোছানো।’’

• এর অনেক এটিকেটও থাকে। এই ধরনের রেস্তরাঁয় এক জন অতিথির জন্য ২০টি ডিনারওয়্যার পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।

• টেবিলে প্লেট ও কাটলারি অ্যারেঞ্জমেন্টও হয় নিয়ম মেনে। গ্লাস রাখা হয় ডিনার প্লেটের ডান দিকে। জলের গ্লাস এবং অন্যান্য পানীয়ের গ্লাসও রাখা হয় কোনাকুনি বা চৌকো ভাবে।

• সাধারণত ফাইভ কোর্সে পুরো ডিনার সার্ভ করা হয়। তার মধ্যে থাকে অ্যাপেটাইজ়ার, সুপ, স্যালাড, অন্ত্রে এবং ডেজ়ার্ট।

• গেস্টের বাঁ দিক থেকেই সব সময়ে সার্ভ করা হয়।

• এটিকেট অনুযায়ী একসঙ্গে অনেকে খেতে বসলে, একটি কোর্স চলাকালীন এক জনের খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও তাকে অপেক্ষা করতে হবে অন্যদের জন্য।

• গ্লাস এবং কাটলারি ধরার সময়ে মনে রাখতে হবে, তার পিছনের দিকটা ধরাই দস্তুর। বিশেষত ওয়াইন গ্লাসের স্টেম ধরা নিয়ম।

বাড়ির চৌহদ্দিতে ফাইন ডাইনিং

বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের জন্যও আয়োজন করতে পারেন ফাইন ডাইনিংয়ের। তবে সে ক্ষেত্রে এত এটিকেট বা নিয়ম মেনে চলা তো সম্ভব নয়। বাঙালি বাড়ির খাবারের তালিকা অনুযায়ী আমরা কী ভাবে তা ফাইন ডাইনিংয়ে পরিণত করতে পারি, সেটাই এ বার জানার পালা।

• টেবিল সাজানো দিয়ে শুরু করতে হবে। কাঠের কাজ করা বা মার্বেলের টেবিলে কভার না পাতলেও চলবে। টেবিলে খুঁত থাকলে উপরে সুন্দর নকশা করা একটা টেবলক্লথ পেতে দিতে পারেন। তার উপরে পাততে পারেন সুন্দর টেবল ম্যাট।

• এ বার আসা যাক বাসনপত্রে। ভাল ক্রকারি আর কাটলারিই কিন্তু বাজিমাত করবে ফাইন ডাইনিংয়ে। ভাল কাচের, সেরামিকের বা চিনামাটির ক্রকারি সেট বাছুন। সঙ্গে রাখুন রুপোর কাটলারি। এতেই কিন্তু টেবিলের ভোল বদলে যাবে অনেকটা। আর একটা জিনিস অবশ্যই মনে করে রাখবেন— কাপড়ের ন্যাপকিন। বাঙালি বাড়ির টেবিলে যা সচরাচর রাখা হয় না। যেহেতু হাত দিয়েই খাওয়া হয়, তাই হাত ধুয়ে নেওয়ার চলই রয়েছে। সেটা ফাইন ডাইনিংয়ে বদলে যাবে।

• প্লেট সাজানোর কায়দাও রপ্ত করতে হবে। পাশ্চাত্য কায়দায় টেবিল সাজাতে অবশ্য বিভিন্ন রকম প্লেট থেকে শুরু করে কাঁটা এবং চামচ কোথায় রাখা হবে, তা নির্দিষ্ট। জলের গ্লাস, ওয়াইন গ্লাস কোথায় থাকবে... সব কিছুর ভাগ থাকে। যেহেতু বিদেশি খাবার কোর্সে ভাগ করে পরিবেশন করা হয়, তাই প্লেটের ভাগটা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ।

• কিন্তু বাঙালি বাড়িতে সাধারণত ভাতের সঙ্গেই সব কিছু মেখে খাওয়া হয়। তাই থালার পাশে বাটিতে সার্ভ করা হয়। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সেখানে বরং বাঙালি খাবারকেই কয়েকটি কোর্সে ভাগ করে সার্ভ করা যায়। যেমন প্রথমে একটি প্লেটে লুচি, তরকারি, বেগুন ভাজা সার্ভ করা যেতে পারে। তার পরে অল্প ভাত আর শুক্তো বা ছানার ডালনা কিংবা এঁচোড়ের কোফতা। এ বার মাছের কোনও পদ। তার পরে পোলাও আর মাংস। আর শেষ পাতে পায়েস বা কোনও মিষ্টি রাখা যেতে পারে। এ ভাবে পুরো খাবারটা ভাগ করে নিলেই ফাইভ কোর্স ভাগ হয়ে যাবে।’’

• মনে রাখতে হবে, ফাইন ডাইনিংয়ে খাবারের পদও কিন্তু স্পেশ্যাল। বাঙালি সাবেক রেসিপি বা ফিউশন রেসিপির শরণাপন্ন হতে পারেন সে ক্ষেত্রে।

• বড় আলো না জ্বেলে অ্যাম্বিয়েন্স লাইট জ্বালাতে পারেন।

• ছড়ানো কাচের পাত্রে জল দিয়ে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন। জলে থাকুক ক’ফোঁটা অ্যারোমা অয়েল। একটি পাথরের বাটিতে জুঁইয়ের মালাও রাখা যেতে পারে।

বাড়িতে অতিথির আনাগোনা তো লেগেই থাকে। একটু যত্ন নিলেই কাছের মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন এলাহি করা যায়।

মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সরকার, মিক বাগুই; ছবি: দেবর্ষি সরকার মেকআপ: চয়ন রায়

লোকেশন ও হসপিটালিটি: ওহ! ক্যালকাটা

Home Decor Fine Dining Gourmet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy