- হায়দরাবাদ পর্যন্ত পৌঁছলে দেখা যাবে স্বপ্ন সফল হওয়ার আরও বড় এক কাহিনি। সানিয়া মির্জাকে টেনিস খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য বাবা ক্রীড়া সাংবাদিক ইমরান মির্জা চাকরি পর্যন্ত ছেড়ে দেন। মেয়ের ভবিষ্যৎ কী ভাবে তৈরি হবে, সে চিন্তাতেই মগ্ন থেকেছেন। টেনিস কোর্টে মেয়েকে একা লড়াই করতে হয়। কিন্তু বাইরে এলেই সানিয়া পেয়ে যেতেন বাবাকে। ইমরানই সানিয়ার কোচ, ম্যানেজার সব কিছু। বাবা ঠিক করে দিতেন সানিয়া সারা বছর কোথায় খেলবেন, কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। সানিয়ার সঙ্গে দেশবিদেশে ঘুরতে ঘুরতে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন ইমরান। কিডনিতে পাথর হয়েছিল বিভিন্ন জায়গার জল খেয়ে। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। তবু ধ্যান-জ্ঞান হয়ে থেকেছে মেয়ের সাফল্য। মেয়ের সঙ্গ ছাড়েননি। ভারত থেকে মেয়েদের মধ্যে সেরা টেনিস খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন সানিয়া। পিছন থেকে তাঁকে তৈরি করার কাজটা করে গিয়েছেন বাবা ইমরান।
এ পর্যন্ত ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন সানিয়া। ভারতীয় মহিলা টেনিসে এক নম্বরে তিনি। সিঙ্গল্সে হারিয়েছেন মার্টিনা হিঙ্গিসের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে। ভারতীয় টেনিসে বহু প্রথম সাফল্য এসেছে সানিয়ার হাত ধরেই। তিনিই ভারতের প্রথম টেনিস খেলোয়াড়, যিনি ‘উইমেন্স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সিঙ্গলস জিতেছেন। এশিয়ান গেমস্, কমনওয়েলথ গেমস্, অ্যাফ্রো-এশিয়ান গেমস্ মিলিয়ে ১৪টি পদক জিতেছেন সানিয়া।
- ২০২০ সালের টোকিয়োর সামার অলিম্পিক্সে দেখা গিয়েছিল ভারতীয় গল্ফার অদিতি অশোকের ক্যাডি হয়েছেন তাঁর মা মহেশ্বরী। আবার ২০১৬-র রিয়ো অলিম্পিক্সে অদিতির বাবা ছিলেন তাঁর ক্যাডি। রিয়োতে ৪১ নম্বরে শেষ-করা অদিতি টোকিয়োয় চতুর্থ। টোকিয়োর প্রবল গরমে প্রত্যেক ক্রীড়াবিদই কোনও না কোনও ভাবে সমস্যায় পড়েছেন। অদিতিও তাঁর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু প্রবল রোদের মধ্যেও অদিতির মা ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন মেয়ের পাশে।
২০১৬ সালে প্রথম অলিম্পিক্সে যোগদান বেঙ্গালুরুর অদিতির। তবে বাবা-মায়ের কাজ শুরু হয়েছে বহু আগে। বাবা অশোক এবং মা মহেশ্বরী অদিতিকে গল্ফ খেলতে নিয়ে যান যখন, তখন মেয়ের বয়স সবে পাঁচ। ১২ বছর বয়সে অদিতি এশিয়া-প্যাসিফিক ইনভিটেশন টুর্নামেন্ট খেলেন। এখন তিনি ‘লেডিজ ইউরোপিয়ান ট্যুর’ খেলেন। খেলেন ‘এলপিজিএ ট্যুর’-এও।
আমাদের সমাজ এখনও সামন্ততান্ত্রিক। সাধারণত বাবা-মা যে পথে হেঁটেছেন, সে দিকেই যান সন্তানেরাও। ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার, উকিলের সন্তান উকিল। রাজনীতিতে যেমন, খেলাতেও তা-ই। সিনেমায় তো খুব বেশি। সুচিত্রা সেন, মুনমুন সেন, রাইমা সেন। অপর্ণা সেন-কঙ্কনা সেনশর্মা। রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, মুকুল রায়-শুভ্রাংশু রায়।
উত্তরসূরিরা অভিভাবকদের পথে হাঁটলে এক রকম। তাতে সাফল্য আসার পথ খানিকটা হলেও মসৃণ। কারণ, প্রতি ব্যক্তির পথ আলাদা আলাদা হলেও পথটি কিছুটা পরিচিত।
চেনা পথের বাইরে সন্তানকে এগিয়ে-দেওয়া বাবা-মায়েরা সব ক্ষেত্রে সাফল্য পান না। লড়াই কঠিন। এ দেশে সানিয়া ছাড়া তেমন সাফল্য এখনও বিশেষ দেখা যায়নি। তবে সাফল্য পেতে হলে কর্তব্যপরায়ণ বাবা-মা ছাড়াও প্রয়োজন প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যে যাকে বলা হয়েছে ‘মন্ত্রশক্তি’।
মন্ত্রশক্তি জন্মগত। কারও আছে, কারও নেই। যেমন সানিয়ার মতো আর্ন্তজাতিক মানের খেলা আর কারও ক্ষেত্রে এখনও দেখা যায়নি। সে তাঁর বাবা-মা খেলোয়াড়ই হোন বা আসুন অন্য পেশা থেকে। দিন দিন প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এখন শুধু বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা ও কর্তব্যবোধ অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় না। ময়দানে টিকে থাকার জন্য জরুরি প্রতিভা।
যেমন এ দেশে লিয়েন্ডার পেজের কত নামডাক। চেষ্টায় হয়তো ত্রুটি রাখেননি তাঁর খেলোয়াড় মাতা-পিতাও। কিন্তু সেই লিয়েন্ডারও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সিঙ্গলস্ খেলার সুযোগ পাননি। জেতা তো দূরের কথা!
অন্যরা কত দূর পারবেন, তা বলা কঠিন। কিন্তু রূপকথার মতো স্বপ্ন তো হয়। আর রূপকথা সত্যি না হলেও কিছু কিছু স্বপ্ন সত্যিও হয়। যে সত্যির নাম ‘কিং রিচার্ড’।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।