E-Paper

নির্বিচারে কাটা হচ্ছে মাটি, রাতারাতি ডোবায় পরিণত হচ্ছে দো-ফসলি জমি

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক দল মাটি-মাফিয়ার দাপট চলে এলাকায়। চাষিদের কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার শর্তে মোটা দামে জমি নেয় তারা।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২৭
উধাও: এ ভাবেই কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি। বারুইপুরের উত্তরভাগ এলাকায়।

উধাও: এ ভাবেই কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি। বারুইপুরের উত্তরভাগ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র ।

চাষের জমি থেকে নির্বিচারে কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি। সেই মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় বা নিচু জমি ভরাট করার কাজে। মাটি কাটার ফলে বদলে যাচ্ছে জমির চরিত্র। সেই জমিতে চাষ তো হচ্ছেই না, গভীর ভাবে খননের ফলে আশপাশের জমিতেও মাটি ধসে চাষবাস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বারুইপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশ কিছু দিন ধরেই এ ভাবে বেআইনি মাটি কাটা চলছে। অভিযোগ, চাষের জমি বাঁচাতে প্রশাসনের তেমন হেলদোল নেই। ক্ষুব্ধ চাষিদের একাংশ।

সম্প্রতি বারুইপুরের উত্তরভাগ এলাকা থেকে মাটি বহনকারী সাতটি গাড়ি আটক করে পুলিশ। সাতটি গাড়ির চালক-সহ মাটি কাটার কাজে যুক্ত আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, উত্তরভাগের বুড়ির আবাদ এলাকায় চাষের জমি থেকে মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছিল। পরদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশো বিঘা ধান জমির বহু জায়গা থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক দল মাটি-মাফিয়ার দাপট চলে এলাকায়। চাষিদের কাছ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার শর্তে মোটা দামে জমি নেয় তারা। এর পরে যন্ত্র বসিয়ে ১০-১২ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। সেই মাটি পাচার হয়ে যায় বিভিন্ন জায়গায়। এত গভীর করে মাটি কাটার ফলে সেই জমি আর চাষের উপযোগী থাকে না। কেউ কেউ সেই জমিতে মাছের ভেড়ি করেন। কেউ এমনিই ফেলে রাখেন। অভিযোগ, শুধু উত্তরভাগ নয়, বারুইপুর ও আশপাশের এলাকা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় রমরমিয়ে এই কারবার চলছে।

বুড়ির আবাদেই এক খেতে দেখা মিলল স্থানীয় দখিনপাড়ার বাসিন্দা এক চাষির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চাষি বলেন, “জমি-দালালেরা সাধারণত ভিতরের দিকে জমিগুলিকে নিশানা করে। চাষিরা জানেন, ওই জমি কখনওই তেমন দরে বিক্রি হবে না। ফলে মাটি কাটার শর্তে বিঘাপ্রতি এক-দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া দেন তাঁরা। কেউ কেউ আরও বেশি দরে জমি বিক্রিও করে দিচ্ছেন। তার পরেই শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে দুই-তিন ফসলি জমি থেকে দশ-বারো ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়।” ওই চাষি জানান, ওই জমিতে আর কখনওই চাষ হয় না। কেউ কেউ মাছ চাষ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এই ভাবে মাটি কাটার ফলে পাশের জমির মাটিতে ধস নামে। আমার নিজের প্রায় দশ বিঘা জমি রয়েছে। কখনও দালালদের দিইনি। কিন্তু পাশের জমির মাটি কাটার ফলে বেশ কয়েক ফুট ধসে গিয়েছে। এক দিকে চাষের জমি কমছে। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন নজর না দিলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।” এলাকায় মাটি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এক যুবক অবশ্য এই ব্যবসাকে বেআইনি বলে মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “চাষির কাছ থেকে টাকা দিয়ে জমি কিনে নেওয়ার পরে সেই জমিতে কী করব, সেটা আমার ব্যাপার।”

স্থানীয় রামনগর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, “মাটি কাটার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত পদক্ষেপ করেছে। সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে চাষের জমির মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও লুকিয়ে- চুরিয়ে মাটি কাটা চলছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।” বারুইপুর থানার আইসি অর্ধেন্দুশেখর দে সরকার জানান, চাষের জমিতে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা বরদাস্ত করা হবে না। ইতিমধ্যে ন’জনকে গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা হয়েছে। আগামী দিনেও এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Baruipur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy