ওসমান হাদির খুনি, পরিকল্পনা এবং সাহায্যকারীদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি তুলল ইনকিলাব মঞ্চ। রবিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুসারে) ঢাকার শাহবাগ চত্বরে তাদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি থেকে এই চার দফা দাবির কথা ঘোষণা করা হয়। দাবিপূরণের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়ও বেঁধে দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। প্রসঙ্গত, হাদি এই ইনকিলাব মঞ্চেরই আহ্বায়ক ছিলেন।
মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের প্রধান দাবি হল হাদির খুনি এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের বাকি দু’টি দাবি ভারত সম্পর্কিত। হাদির সংগঠনের তরফে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের কাজের অনুমতি বা ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির যুক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ করা জরুরি।
মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের কাছে ইনকিলাব মঞ্চের তৃতীয় দাবি হল, ভারত যদি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের ফেরত না-দেয়, তবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে। তাদের চতুর্থ এবং শেষ দাবি হল, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে থেকে যাঁরা ‘পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন’, তাঁদের চাকরিচ্যুত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনীতে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ অনেকে রয়েছেন বলে দাবি ইনকিলাব মঞ্চের। তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, “এই চার দফা দাবির মধ্যে আগামী ২৪ কার্যদিবস (কাজের দিন)-এর মধ্যে শহিদ ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেফতার করে বিচার সম্পন্ন করা আমাদের প্রধান দাবি। বাকি তিন দাবিও এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই নিশ্চিত করতে হবে।” রবিবার রাতেই ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায় ইনকিলাব মঞ্চ। একই সঙ্গে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে জানানো হয়। সোমবার দুপুর ২টোয় ঢাকার শাহবাগ চত্বরে বাংলাদেশের সমস্ত স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার পড়ুয়াদের সমবেত হওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটির তরফে জানানো হয়েছে, ‘বিচার’ না-হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। সরকারি উদ্যোগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছ’দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরেই বাংলাদেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য এবং হাদির সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সংগঠিত গণরোষের কোপে তছনছ হয়ে যায় একাধিক সরকারি ও সাংস্কৃতিক ভবন, সংবাদপত্রের দফতর। হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অনেককে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু মূল হত্যাকারী ফয়সাল করিম এবং তাঁর প্রধান আলমগীর শেখের খোঁজ মেলেনি। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে রবিবার ইউনূস প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, হাদি-হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই।