Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্বী রোগের রমরমা বেশি এই ভারতেই

সেলফি বা নিজস্বী তোলা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় মরিয়া ভাবে পোস্ট করার প্রবণতাকে এক ধরনের মানসিক বৈকল্য বলে চিহ্নিত করেছেন ব্রিটেনের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদুরাইয়ের থিয়াগরাজার স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট-এর গবেষকেরা।

চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজস্বী তুলতে মরিয়া হায়দরাবাদের সেই যুবক।

চলন্ত ট্রেনের সামনে নিজস্বী তুলতে মরিয়া হায়দরাবাদের সেই যুবক।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

অভিধানে এখনই ঠাঁই পায়নি শব্দটা। কিন্তু তার অস্তিত্ব উড়িয়ে দিতে পারছেন না মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

সেলফি বা নিজস্বী তোলা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় মরিয়া ভাবে পোস্ট করার প্রবণতাকে এক ধরনের মানসিক বৈকল্য বলে চিহ্নিত করেছেন ব্রিটেনের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদুরাইয়ের থিয়াগরাজার স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট-এর গবেষকেরা। যৌথ গবেষণাপত্রে তাঁরা এই ‘রোগের’ গালভরা নাম দিয়েছেন ‘সেলফাইটিস’। দুনিয়ার সব থেকে বেশি ফেসবুক নাগরিকের দেশ হিসেবে ভারতকেই গবেষণার জন্য বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা।

সদ্য ভাইরাল হয়ে ওঠা একটি ভিডিও কার্যত এই সেলফাইটিসেরই প্রমাণ। চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে মরিয়া হায়দরাবাদের এক যুবক। তারস্বরে ট্রেনের হর্ন বাজছে। ছেলেটিকে চেঁচিয়ে কেউ বলছেন সরে যেতে। কিন্ত তিনি নির্বিকার! এক হাতে মোবাইল ধরে অন্য হাতের আঙুল ট্রেনের দিকে দেখিয়ে পটাপট নিজস্বী তুলে যাচ্ছেন যুবক। হঠাৎ বিকট শব্দ! ধাবমান ট্রেন এসে গোটা ফ্রেমটা ঢেকে ফেলছে। ট্রেনের ধাক্কায় ছেলেটি গুরুতর আহত বলে খবরে প্রকাশ।

বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই বলছেন, গোটা বিশ্বে সেলফির ফাঁদে প়ড়ে বেঘোরে মৃত্যুর ঘটনায় এগিয়ে ভারতই। চলন্ত ট্রেন থেকে ঝুঁকে সেলফি তুলতে গিয়ে কেউ রেলের খুঁটির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। কখনও পাহাড়ের ধারে নিজস্বী তুলতে গিয়ে খাদে তলিয়ে গিয়েছেন কেউ। নিজের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার নেশা এ ভাবেই এক ধরনের মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। স্রেফ বিয়েবাড়ি বা পুজোয় ঠাকুর দেখার সময়ে নয়, আকছার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে পোস্ট করাটাও আসক্তির চেহারা নিয়েছে।

ব্রিটিশ ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের গবেষণাপত্রটি প্রকশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চে। সেলফাইটিসকে ‘রোগ’ কেন বলা হচ্ছে? ওই গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, ‘আমি ভাল আছি’— সবাইকে এটা বোঝানোর তাগিদেই অনেকে সেলফাইটিসের গ্রাসে ঢুকে পড়ছেন। যেমন, বিমানে চড়ার নিজস্বী তোলার নেপথ্যে অনেক সময়েই থাকে বিমানে চড়ার সামর্থ্য জাহির করার প্রবণতা।

লন্ডনের এক বাসিন্দাকে প্রথম ‘নিজস্বী-আসক্ত’ হিসেবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা চিহ্নিত করেছিলেন। গবেষণাপত্র বলছে, ফি-দিন তিনটি নিজস্বী তোলার অভ্যাসেও সেলফাইটিসের হাল্কা ‌উপসর্গ আছে। কিন্তু কেউ কেউ ক্ষণে ক্ষণে নিজস্বী না-তুলে এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না-করে শান্তি পান না। এটাই এক ধরনের স্থায়ী রোগের লক্ষণ। কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রির চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলছেন, ‘‘কমজোর আত্মবিশ্বাসেও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্বীতে লাইক-কমেন্ট দেখে নতুন জীবন খুঁজে পান।’’ সব মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিজস্বী নিয়ে মত্ততার প্রবণতাকে এখনই অসুখ বলে চিহ্নিত করতে রাজি নন। সেই দলে আছেন মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম। তাঁর কথায়, ‘‘নিজস্বী নিয়ে বাড়াবাড়িতে বিপদ আছে ঠিকই, কিন্তু নিজস্বীর ঝোঁক দেখলেই কাউকে অসুস্থ হয়তো বলা যায় না।’’

অর্থাৎ সেলফির নেশাটা রোগ কি না, বিতর্ক থাকছে তা নিয়ে। বিপদটা নিয়ে কিন্তু নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE