Advertisement
০২ মে ২০২৪
Specially Abled Children

‘বিশেষ’ বন্ধুদের হাত ধরে নাচ-গানের মহড়ায় হাজির আমায়া-সৃজারাও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অভিভাবকদের নিয়ে তৈরি গোষ্ঠী ‘সমন্বয়’-এর তরফে চলতি মাসের শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

একযোগে: বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সঙ্গে নিয়ে চলছে নাচের মহড়া। সোমবার, যোধপুর পার্কে।

একযোগে: বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সঙ্গে নিয়ে চলছে নাচের মহড়া। সোমবার, যোধপুর পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৫৭
Share: Save:

পুরোদমে চলছে সমবেত গানের মহড়া। তখনই হঠাৎ হারমোনিয়ামের সামনে থেকে সরে যায় প্রতীক। তা দেখে গান না থামিয়ে তার হাত ধরে ফের সামনে টেনে আনল সৃজা। প্রতীকের অটিজ়ম আছে। ওই শব্দটার মানে কী, তা ঠিক মতো জানে না আমায়া, সৃজা, পৌষালিরা। শুধু এটুকু জানে, সোহম-নিখিল-অনঙ্গদের নিয়ে একসঙ্গে গান করতে হবে। থামা যাবে না, বন্ধুদের হাতও ছাড়া যাবে না।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অভিভাবকদের নিয়ে তৈরি গোষ্ঠী ‘সমন্বয়’-এর তরফে চলতি মাসের শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার তারই মহড়া চলল যোধপুর পার্কে। গানের ক্লাস, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়া-সহ যাবতীয় ঝক্কি সামলে সেখানেই প্রতি সপ্তাহে মহড়া দিতে আসছে আমায়া ও তার দশ সতীর্থ।

‘নিউরোটিপিক্যাল’ (অর্থাৎ, যাদের আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনও সমস্যা নেই) বাচ্চাদের এই উৎসাহে অভিভূত বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অভিভাবকেরা। কাজরী গায়েনের কথায়, ‘‘ওরা যে ভাবে দায়িত্ব নিয়ে বন্ধুদের সামলাচ্ছে, আমাদের কিছু ভাবতেই হচ্ছে না! ওরা যে এ ভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিলেমিশে যাবে, তা ভাবতেই পারিনি।’’ সাত বছরের আমায়ার মা দ্বৈপা দত্ত ভট্টাচার্য আবার বললেন, ‘‘ছোট থেকেই তো জানতে হবে, সবাই সমান। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। সমন্বয় যে মেয়েকে তা জানার সুযোগ দিয়েছে, এটাই তো বড় ব্যাপার।’’

এ দিন নাচের মহড়ার সময়ে হঠাৎই অস্থির হয়ে পড়ে কিঞ্জল। তা দেখে বন্ধুর কাছে ছুটে যায় পৌষালি। দু’হাত ধরে মহড়ার জায়গা থেকে একটু আলাদা নিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে পা মেলায়। বন্ধু শান্ত হতেই তাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে তার পাশে বসে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পৌষালির কথায়, ‘‘বাকিদের দেখে ওর একটু নাচ করার ইচ্ছে হয়েছিল। তাই আমি গিয়ে ওর সঙ্গে একটু নাচলাম। ব্যস, শান্ত হয়ে গেল। এ আর এমন কী কঠিন ব্যাপার!’’

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সৃজার ভাল বন্ধু রাজন্যা কানুনগোর অটিজ়ম রয়েছে। সে খুবই কম কথা বলে। তবে তাতে অসুবিধা হয় না সৃজার। সে বলে, ‘‘ও সুন্দর কি-বোর্ড বাজায়। শুধু কথাটা কম বলে। ভেঙে ভেঙে শব্দ বলে। তবে তাতে আমার তো বুঝতে অসুবিধা হয় না।’’ পৌষালি আবার বলে, ‘‘কেউ যদি মাকে নালিশ করার ভয় দেখায়, আমার খারাপ লাগে। তেমনই আমার বন্ধুদের যে জিনিসে ভয় লাগে, সেটা ওদের সামনে করি না। যতটা সহজে পারা যায় বোঝানোর চেষ্টা করি। তার চেয়েও বেশি, বন্ধুর ব্যবহার থেকে ওর চাহিদা কী, সেটা বোঝার চেষ্টা করি।’’ দ্বৈপা যেমন বললেন, ‘‘মেয়ে এক বারই বন্ধুদের নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। ওকে সহজে বুঝিয়ে বলেছিলাম, বন্ধুর কী সমস্যা। আর কখনও প্রশ্ন করেনি।’’

এ দিনের মহড়ায় পৌষালি যে ভাবে দায়িত্ব নিয়ে বন্ধুদের সামলেছে, আবার নাচের তালে পা মিলিয়েছে, তাতে গর্বিত মা শেফালি বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘একটি বেসরকারি স্কুলে শ্যাডো টিচার হওয়ায় বাড়ি ফিরে মেয়েকে স্কুলের গল্প বলতাম। কিন্তু নাচের সময়ে বন্ধু দাঁড়িয়ে গেলে তার হাত ধরে নাচ করিয়ে দিতে হবে, এটা তো আমি ওকে শেখাইনি!’’ সৃজার মা সোহিনী রায় জানান, মেয়ে পরীক্ষায় কত নম্বর পেল, তার চেয়েও বড় হল, সে কতটা শিখতে পারল। আর এখানে তো দু’তরফই এক অপরের থেকে কিছু না কিছু শিখছে।

মঙ্গলবার বিশ্ব অটিজ়ম সচেতনতা দিবসের প্রাক্কালে তাই আশায় বুক বাঁধছেন কমলিকা-অদিতি-শর্মিষ্ঠা ও তাঁদের মতো আরও অনেক ‘বিশেষ’ মায়েরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Specially Abled Children Program
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE