Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সন্তানের সঙ্গে নিজেরও যত্ন নিন

শিশুর জন্মের পরে মায়ের শরীরও দুর্বল থাকে। সেই সময়ে কী করবেন, রইল তার গাইডলাইন

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৪৮
Share: Save:

মা হওয়ার আনন্দের পাশাপাশি থাকে একরাশ ভয় আর উদ্বেগ। ছোট্ট সোনার যত্ন নিয়ে চিন্তার সঙ্গে রয়েছে নিজেকে নিয়ে ভাবনা। শারীরিক-মানসিক দু’ধরনেই চাপ পড়ে এই পর্যায়ে। শিশুর দেখভালের পরে নিজের দিকে তাকানোর সময় নেই— এমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়। এর থেকে নিজেকে বার করে আনার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।

খেয়াল রাখুন

সন্তান আপনার প্রথম প্রায়োরিটি ঠিকই, কিন্তু এই সময়ে শরীর এতটাই দুর্বল থাকে যে, একটু যত্নের প্রয়োজন। গাইনিকলজিস্ট গীতশ্রী মুখোপাধ্যায় পোস্ট প্রেগন্যান্সি বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরলেন।ডেলিভারির পরে স্টিচ এবং ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে। হেমারেজও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই সময়ে ব্লিডিংও হয়। সে কারণে বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন।ব্রেস্ট ফিডিং করালে স্তনের যত্ন নেওয়াও জরুরি। এই সময়ে ব্রেস্ট ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে। তখন অবশ্যই ডাক্তার দেখান। বেশি মিল্ক চলে এলে স্তন ভারী হয়ে যায়। তখন পাল্টাপাল্টি করে ঠান্ডা-গরম কমপ্রেস করতে হবে। এই সময়ে সারাক্ষণই অন্তর্বাস পরে থাকা উচিত। শিশুকে ব্রেস্ট ফিড করানোর পরে ভাল করে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার করে নেবেন।

সময় পেলে ঘুমিয়ে নিন

শিশুর ক্লক সাইকল আমাদের মতো নয়। সে কখন জাগবে, কখন ঘুমোবে, ঠিক নেই। তাই যখনই সময় পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন। মিনিট দশেকের ঘুমও কার্যকরী। আপনার বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরি। বাচ্চা সামলানো কঠিন কাজ। সাহায্য করার জন্য সেই সময়ে পাশে কেউ থাকলে কাজটা সহজ হয়। বাটি চামচে বা ফিডিং বটলে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যেস করে রাখা ভাল। প্রয়োজনে অন্য কেউও খাওয়াতে পারবে। তখন আপনি একটু জিরিয়ে নিতে পারবেন। শিশুটিকে দেখতে বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা হতেই থাকে। সে ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিতে পারেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শারীরচর্চায় বাধা নেই

মায়ের শরীর আগের অবস্থায় ফিরতে অন্তত ছ’-আট সপ্তাহ লাগে। নর্মাল ডেলিভারি হলে আপনি দু’দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারবেন। সিজ়ার হলে অবশ্য সময় লাগে বেশি। তবে যত দ্রুত স্বাভাবিক রুটিনে ফিরবেন, ততই ভাল। হুট করে ভারী জিনিস তুলবেন না বা নিচু হবেন না। আগের মতো চেহারা ফিরে পেতে সময় লাগবে ঠিকই, কিন্তু ডেলিভারির এক সপ্তাহ পর থেকে কিছু বেসিক শারীরচর্চা করতেই পারেন। এক মাস পরে অনেক এক্সারসাইজ়ই করা যাবে।

সকাল-বিকেল নিয়ম করে হাঁটুন। ধীরে ধীরে হাঁটার সময় বাড়াবেন। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় করতে পারেন। স্কোয়াট, প্লাঙ্কও শুরু করতে দিতে পারেন। শোয়ার সময়ে পেট চেপে উপুড় হয়ে শোবেন।

ছ’মাস পর্যন্ত ভারী জিনিস তোলা বা লাফানো বারণ। সবটাই রয়ে সয়ে করবেন। শারীরচর্চা করতে গিয়ে ব্যথা অনুভব করলে বা স্টিচের এলাকায় টান পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শারীরিক সম্পর্ক

ডেলিভারির পরে যে হেতু ব্লিডিং চলে, তাই তখন শারীরিক সম্পর্কে না যাওয়াই ভাল। ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেলে আর কোনও বাধা নেই। তবে চিকিৎসকেরা কনট্রাসেপ্টিভ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই সময়ে ফের কনসিভ করলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অনেকের ধারণা ব্রেস্ট ফিড করালে কনট্রাসেপ্টিভের প্রয়োজন পড়ে না। এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। ওরাল কনট্রাসেপ্টিভ ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরাই। বাজার চলতি ওষুধে হিতে বিপরীত হতে পারে। সিজ়ারিয়ান ডেলিভারিতে যৌনজীবনে কিছু সমস্যা আসতে পারে। লুব্রিকেশন কম হওয়ার কারণে চিকিৎসকেরা অনেক সময়ে লুব্রিক্যান্ট জেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে এগুলির কোনওটাই জটিল সমস্যা নয়। কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।

ব্যালান্সড ডায়েট

ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য মায়ের শরীরে পুষ্টি দরকার। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম দরকার পড়ে এই সময়ে। খাবারের মাধ্যমে ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিলে ভাল। হালকা রোদ গায়ে লাগানো যেতে পারে ডেলিভারির পরে মাস দুয়েক চিকিৎসকেরা ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ট্যাবলেট খেতে বলেন খাদ্যতালিকায় যেন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিনের ভারসাম্য থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সয়াবিন, ফল, আনাজ থাকা বাঞ্ছনীয় ওজন কমাতে গিয়ে এমন কিছু করবেন না, যা আপনাকে শারীরিক ভাবে আরও দুর্বল করে দেয়

মানসিক সমস্যা

মানসিক সমস্যাকে অবহেলা করবেন না। মন ভাল না থাকলে, শরীরও ভাল থাকে না। প্রেগন্যান্সির পরে প্রায় এক বছর পর্যন্ত মেয়েদের শরীরে নানা হরমোনের বদল চলে। দুর্বলতা, স্ট্রেস, চট করে মেজাজ হারানো, মন খারাপ, যৌন জীবনে অনিচ্ছা— এই সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরলেন ডা. গীতশ্রী মুখোপাধ্যায়। বাচ্চা সামলানো এমনিতেই চাপের, তাই হতাশা জন্মানোও অস্বাভাবিক নয়। স্বামী-পরিবারের সহযোগিতায় এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।

সারা দিন বাচ্চার দেখভালের মাঝে নিজের জন্যও সময় বার করা জরুরি। সিনেমা দেখুন, বই পড়ুন। বাচ্চাকে কারও কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী একটু বাইরে ঘুরে আসুন। সন্তানের দেখভালের কাজে স্বামীও যেন যুক্ত থাকেন। ডেলিভারির পরে যৌনমিলনে অনিচ্ছা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এটা স্বামীকেও বুঝতে হবে। দু’জনে মিলেই সমাধান খুঁজুন। এই সময়ে মেয়েদের চেহারাও খারাপ হয়ে যায়। স্ট্রেস না নিয়ে সালঁয় গিয়ে নিজেকে একটু প্যাম্পার করতে পারেন।

চাকুরিরতাদের লড়াইটা হয়তো আরও কঠিন। সারা দিন বাড়িতে থাকা মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় অনেকেরই। তা ছাড়া প্রেগন্যান্সি লিভের পরে অফিসে গিয়ে মানিয়ে নিতেও সমস্যা হয়। সন্তান এবং অফিস দুটো জায়গা সামলানো সত্যিই কঠিন। এতে মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে। বাচ্চার সব কাজ একা হাতে করতে যাবেন না। ঠান্ডা মাথায় প্রায়োরিটি বেছে নিয়ে রুটিন সাজান। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও, কিছু দিন পরে দেখবেন আপনি হাসিমুখেই সব দিক সুন্দর সামলাতে পারছেন।

মডেল: ত্বরিতা
ছবি: দেবর্ষি সরকার, লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা কনক্লেভ, চকগড়িয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE