Advertisement
E-Paper

সিস্ট নিয়ে কিছু জরুরি কথা

শরীরে কোথাও সিস্ট হলে ভয় পাবেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিস্ট বিনাইন। জেনে নিন সিস্ট থেকে কী-কী অসুবিধে হতে পারে ও তার প্রতিকার।

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৭:২১
Share
Save

সিস্ট কথাটা শুনলেই অধিকাংশ মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সব সময়ে সিস্ট মানেই খারাপ খবর ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। মেয়েদের ডিম্বাশয়ে সিস্টের কথা বেশি শোনা গেলেও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই সিস্ট হতে পারে। সিস্ট ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বিনাইন অর্থাৎ ক্যানসারহীন। তবে সিস্ট হলে সংশ্লিষ্ট অংশে ব্যথা-যন্ত্রণা হতে পারে। ওই অঙ্গের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হতে পারে। এতে অহেতুক ভয় পাবেন না। বরং সিস্ট ঠিক কী, তার প্রকারভেদ এবং প্রতিকার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন।

অধিকাংশ সিস্টই বিনাইন

ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনিকলজিস্ট ডা. গৌতম খাস্তগীর বোঝালেন, ‘‘সিস্ট হল জলভরা থলি। এতে পরিষ্কার জল, ঘোলা জল, নোংরা বা সংক্রমিত জল, রক্ত বা হলদে রঙের জল থাকতে পারে। পুরনো রক্ত বা খয়েরি রঙের পদার্থও থাকতে পারে (চকলেট সিস্ট)। সাধারণ জল থাকলে সেগুলিকে সিম্পল সিস্ট বলা হয়। রক্ত থাকলে হেমারেজিক সিস্ট বলে।

‘‘সিস্ট মানে টিউমর, কিন্তু টিউমর মানেই ক্যানসার নয়। যে কোনও কিছুই যদি শরীরে খানিকটা জায়গা দখল করে, তবে আমরা তাকে বলি টিউমর বা স্পেস অকুপায়িং লিসান। টিউমর ম্যালিগন্যান্ট ও বিনাইন দু’রকম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিস্ট বিনাইন। সিস্টের দেওয়াল মোটা হলে, তার মধ্যে অনেক পার্টিশন থাকলে, ওই পার্টিশন কোথাও পাতলা কোথাও মোটা হলে, সিস্টের মধ্যে মাংসপিণ্ড থাকলে, সিস্টে রক্ত চলাচল হলে তা ম্যালিগন্যান্সির লক্ষণ।’’ চিকিৎসক আলট্রাসোনোগ্রাফি, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করে সিস্ট শনাক্ত করেন। সিস্টে রক্ত চলাচল বেশি হলে ক্যানসারাস হওয়ার সম্ভাবনা।’’

কোথায় সিস্ট হয়

মহিলাদের ডিম্বাশয় বা জরায়ু ছাড়াও মানুষের মস্তিষ্ক, যকৃৎ, ফুসফুস, ত্বকের উপর, মাংসের মধ্যে, হাড়ে, স্তন কিংবা শুক্রাশয়েও সিস্ট হওয়া সম্ভব। পেটের মধ্যে অন্ত্রের মাঝখানে মেসেন্টেরিক সিস্ট থাকতে পারে। খানিকটা জায়গা জুড়ে থাকে বলে যে অঙ্গেই সিস্ট হয়, সেই অংশের কার্যক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটে। ধরা যাক, মস্তিষ্কের ব্রোকা’স এরিয়ায় সিস্ট হয়েছে। ওই অংশ দিয়ে আমরা কথা বলি। তাই কথা বলতে অসুবিধে হবে। তেমনই অন্য কোনও জায়গায় হলে দেখতে, শুনতে বা হাত-পা নাড়াচাড়া করতে অসুবিধে হয়। যকৃৎ, বৃক্ক বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট হলেও ওই অঙ্গ কাজ করবে না। ফুসফুসে বড় সিস্ট হলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হবে। যেখানেই সিস্ট হবে, তার আশপাশের স্নায়ুতে চাপের সৃষ্টি হবে। ফলে ব্যথা হবে। তবে যকৃৎ প্রভৃতি জায়গায় সিস্ট হলে ব্যথা না-ও থাকতে পারে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী সিস্ট দেখতে পান না, যন্ত্রণা অনুভব করেন। তবে কিছু সিস্ট বাইরে থেকে দেখা যায়। চামড়ার উপরে সিবেসিয়াস সিস্ট হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ভিতরের নিঃসরণ জমতে জমতে সিস্টের আকার নেয়। এগুলি রোগী দেখতে পান। ব্রণও এক ধরনের সিস্ট। ঘাড়ে বা পিঠে চামড়ার নীচেও ফ্যাট গলে তৈরি সিস্ট বা লাইপোমা থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিস্টের মাঝখানটা গলে যায়। সহজ কথায় সিস্টের বাইরেটা শক্ত ঠেকবে, ভিতরে তরল থাকবে। এগুলি ক্যানসারে পরিণত হয় না। জানালেন ডা. খাস্তগীর।

কী ভাবে চিকিৎসা হয়

জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘জিনগত বা কোনও সংক্রমণের কারণে সিস্ট হয়। তা প্যাথোলজিক কি না খেয়াল করতে হবে। যেমন, এক ধরনের ফিতাকৃমির জীবাণুও মস্তিষ্কে সিস্ট তৈরি করতে পারে। তাতে রোগীর খিঁচুনি হবে। এমন সিস্ট হলে বাড়িতে পোষ্য আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। সাধারণ কৃমির ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধেই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলে। লিভারে সিস্ট হলে আবার পর্যবেক্ষণে জোর দেওয়া হয়। হাতের তালুর উলটো দিকেও নিউরোফাইব্রোমা ধরনের সিস্ট দেখা যায়।’’

সিস্ট ভয়ের কি না তা জানতে কিছু টিউমর মার্কারস রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে সিস্ট হলে পিএসএ পরীক্ষা, ওভারির সিস্ট বিনাইন না ম্যালিগন্যান্ট জানতে সিএ১২৫ রক্ত পরীক্ষা করা হয়। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সিস্টের জল বার করে নেওয়া হয়। একে বলে ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি। পুরো অজ্ঞান করতে হয় না। পেটের একটা জায়গা অবশ করে সুচ ফুটিয়ে লিভার, কিডনি ইত্যাদিতে সিস্টের তরলে যে কোষ ভাসছে তা বার করে নেওয়া যায়। সেই কোষ পরীক্ষা করে ক্যানসারাস কি না দেখে নেওয়া হয়। ক্যানসার হলে সার্জারি করে সিস্ট বাদ দিতে হয়। বড় সিস্ট অস্ত্রোপচারে বাদ না দিলে অঙ্গগুলির ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারির পরের দিনই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিন-চার দিনেই রোগী সুস্থ হয়ে যান।

ওভারিয়ান সিস্টের ক্ষেত্রে

ডা. খাস্তগীর বললেন, ডিম্বাশয়ে তিন-চার রকম সিস্ট হয়। হলুদ জল ভরা সিস্ট, থকথকে বা তৈলাক্ত পদার্থ ভরা সিস্ট, চটচটে পদার্থ ভরা সিস্ট (তার মধ্যে দাঁত, চুল, মাংসের টুকরোও থাকে, যাকে ডার্ময়েড সিস্ট বলে) ও পুরনো রক্ত জমে তৈরি চকলেট সিস্ট। এ ছাড়া সিস্টের মধ্যে রক্ত চলাচলের শিরা ছিঁড়ে রক্ত জমলেও হেমারেজিক সিস্ট হতে পারে। পাঁচ সেন্টিমিটারের কম সিস্টের জন্য কিছু করতে হয় না। তার চেয়ে বড় সিস্ট যন্ত্রের সাহায্যে বাদ দেওয়া হয়। শুধু তরল বার করে নিলে কিন্তু সেই তরলে সিস্ট আবার ভরে উঠতে পারে। সিস্টের পুরোপুরি চিকিৎসা না হলে (রেকারেন্স) বা নতুন কোনও সিস্ট গজালেও (রিঅকারেন্স) সমস্যাটি ফিরতে পারে। সিস্টের অস্ত্রোপচারে বাকি ডিম্বাশয়ের কোনও ক্ষতি হয় না।

ডিম্বাশয়ের সিস্ট থাকলে ডিম্বাণু বেরোনোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ফলে গর্ভধারণে অসুবিধে হয়। তবে তারও চিকিৎসা রয়েছে। সিস্ট পাক খেয়ে ঘুরে (টরশন) না গেলে গর্ভাবস্থায় সিস্টকে কিছু করা হয় না। গর্ভাবস্থার ১৪-২০ সপ্তাহের মধ্যে সিস্টের সার্জারি করা যেতে পারে। ১৪ সপ্তাহের আগে বা ২০-২৪ সপ্তাহের পরে সার্জারি চলে না।

কিডনি বা লিভারের ক্ষেত্রেও সিস্ট বাদ দিলে অঙ্গের বাদবাকি অংশের সমস্যা হয় না। ক্যানসার হলে বা বড় সিস্ট আশপাশের অঙ্গের ক্ষতি করে বলে, তা বাদ দিতে হয়। বড় সিস্ট থাকলে ডিম্বাশয় ভারী হয়ে পাক খেয়ে ঘুরে যেতে পারে। তখন পেটে ব্যথা হয়, যে বৃন্ত থেকে ডিম্বাশয় ঝুলছে তার রক্ত চলাচল বা স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। ডিম্বাশয় নষ্ট হতে পারে। যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস বা মস্তিষ্কের সিস্টে এই সম্ভাবনা নেই।

বেশির ভাগ ক্যানসারাস সিস্ট শক্ত, ছড়ানোর আগে পর্যন্ত ব্যথাহীন। এ দিকে সিস্ট তরলে ভরা, ব্যথাও থাকে। কাজেই সিস্ট মানেই ক্যানসার নয়। আর সিস্ট হলেই অস্ত্রোপচার নয়। শরীরের অনেক জায়গাতেই ছোট সিস্ট থাকে। সেগুলি বাদ দিতে গেলে আদতে বেশি ক্ষতি হয়। কিন্তু কিছু সিস্ট বাদ না দিলে ক্ষতি আরও বেশি। সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেই চিকিৎসা করা হয়।

মডেল: ঐশ্বর্য সেন, সুস্মেলী দত্ত, শুভশ্রী কর; ছবি: জয়দীপ দাস; মেকআপ: সুবীর মণ্ডল; লোকেশন: হোটেল পেঙ্গুইন

Disease

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।