মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে কোভিড-টিকার বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই বারবার বলেছেন চিকিৎসকেরা। ফাইল ছবি
করোনা আক্রান্ত হলেও একটা সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছিল। যার নেপথ্যে কোভিড-টিকার বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই বারবার বলেছেন চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রেও উঠে এসেছে বিষয়টি। সেখানে দেখা গিয়েছে, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে যত জন মারা গিয়েছেন তাঁদের বড় অংশ করোনা টিকার একটি ডোজ়ও নেননি। কিছু জন মারা গিয়েছেন যাঁরা মাত্র প্রথম ডোজ় নিয়েছিলেন।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) আয়োজিত ওই গবেষণায় ছিলেন তাদের বিশেষজ্ঞ অপর্ণা মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরা। ছিলেন এ রাজ্যের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের শিক্ষক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার এবং বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। শহরের দুই হাসপাতাল—কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং বেলেঘাটা আইডি-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ৪২টি হাসপাতালকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ২০২০-র ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ওই সমস্ত হাসপাতাল মিলিয়ে ভর্তি থাকা ২৯ হাজার ৫০৯ জনের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। গড়ে ৫১ বছর বয়সের ওই রোগীদের মধ্যে ৬৩.৬ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। মোট রোগীর ৫৩.১ শতাংশ কোনও না-কোনও একটা কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি এটাও দেখা গিয়েছিল, ৮৭.১ শতাংশ ছিলেন উপসর্গযুক্ত। গবেষণাপত্রে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, ৭২.৩ শতাংশ রোগীর সাধারণ উপসর্গ ছিল জ্বর। আবার ৪৮.৯ শতাংশের শ্বাসকষ্ট এবং ৪৫.৫ শতাংশের শুকনো কাশি ছিল।
মোট রোগীদের মধ্যে ১২ হাজারের কিছু বেশি মানুষের করোনার টিকার প্রথম ডোজ় নেওয়া ছিল। প্রায় ১০ হাজার জন দু’টি ডোজ় নিয়েছিলেন। ৫ হাজার ৯০০ জন টিকা নেননি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোট রোগীর ১৪.৫ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব পুরুষের সংখ্যা বেশি। তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্যানসার, যক্ষা কিংবা স্নায়ুঘটিত রোগের (কোমর্বিডিটি) কোনও একটি ছিল। অরুণাংশুর কথায়, ‘‘প্রায় দেড় বছর ধরে চলা সমীক্ষায় একটা বিষয় স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, যে ৩ হাজার ৯৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বড় অংশ টিকার একটি ডোজ়ও নেননি। প্রথম ডোজ় নিয়ে মৃতের সংখ্যা তার থেকে কিছুটা কম। আর দু’টি ডোজ় নিয়েও মৃত্যুর হার খুবই নগণ্য।’’ যোগীরাজ বলেন, ‘‘কোভিডে মৃত্যুর হার কমাতে টিকার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বোঝা গিয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউের পরে তৃতীয় ঢেউ আসতে দেরি হওয়া এবং মৃত্যু হার নেমে যাওয়ার নেপথ্যেও ছিল টিকার অবদান।’’ টিকাই যে প্রাণ বাঁচিয়েছে সে কথাই মেনে নিচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy