Advertisement
১১ মে ২০২৪

সিগারেট ধরাচ্ছেন? বাঁচতে আগে খান ভিটামিন সি

সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস থাকলে শুনুন। নিয়ম করে ভিটামিন সি খেতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।

পথিক গুহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৬
Share: Save:

সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস থাকলে শুনুন। নিয়ম করে ভিটামিন সি খেতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।

কারণ, অতিরিক্ত ধূমপানে ফুসফুসের প্রদাহজনিত ব্যাধি, যা কিনা ২০২০-র মধ্যে ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগের পরে তৃতীয় কালান্তক রোগ হিসেবে দেখা দিতে চলেছে, তার থেকে বাঁচতে ভিটামিন সি-ই একমাত্র ভরসা। বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজের অধ্যাপক কৌস্তুভ পাণ্ডা ও তাঁর চার সহযোগীর (ইন্দ্রনীল গুপ্ত, সৌরদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায়, ক্রিস্টিন রোজানাস ও ডেনিস স্টুহের) অন্তত এমনটাই দাবি।

বহু বছরের গবেষণাসমৃদ্ধ ওঁদের পর্যবেক্ষণ আজ প্রকাশিত হচ্ছে ‘প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ (পিএনএএস) জার্নালে। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কৌস্তুভের কাজ চলছে দু’দশকেরও বেশি সময় জুড়ে। ফুসফুসে ধূমপানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তখন অত্যাধুনিক যন্ত্র ছিল না। তবু ওঁরা দেখিয়েছিলেন, সিগারেটের ধোঁয়া ফুসফুসের কোষের ক্ষতি করে। ‘‘সিগারেটের ধোঁয়ায় হাজার হাজার রাসায়নিক। কোনগুলো কী ভাবে ক্ষতি করছে জানার জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক কম্পিউটার বা সফ্‌টওয়্যার তখন আমাদের হাতে ছিল না। এখন এসেছে। তাই অনেকটা নির্ভুল ভাবে ক্ষতির ছবিটা বুঝতে পারছি।’’— বলছেন কৌস্তুভ।

কী বুঝছেন?

ওঁদের বক্তব্য: সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে এমন সব পদার্থ, যারা কিনা ইলেকট্রন খোঁজে। প্রক্রিয়াটির বৈজ্ঞানিক নাম অক্সিডেশন, আর ওই সব পদার্থকে বলে অক্সিড্যান্ট। অক্সিড্যান্টদের ‘ইলেকট্রন ক্ষুধা’ মেটাতে গিয়ে ফুসফুসের কোষ নমনীয়তা হারায়। ভেঙে যায়। এ দিকে ফুসফুসের মূল কাজ হল রক্ত পাম্প করা, যার জন্য তার কোষের আস্তরণ খুবই পেলব হতে হয়। অথচ অক্সিড্যান্টদের প্রভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়া কোষগুলো ওঠা-পড়ার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলে।

পরিণামে অসুস্থতা। কৌস্তুভরা জ্যান্ত গিনিপিগ ও মৃত মহিলার (জীবিত মানুষ নিয়ে পরীক্ষা বারণ) ফুসফুসের কোষে সিগারেটের ধোঁয়ার প্রভাব পরীক্ষা করেছেন দু’ভাবে। (১) কোষগুলিকে আগাম ভিটামিন সি-তে জারিত করে তার পরে ধোঁয়া পাঠিয়ে। (২) ধোঁয়ার মুখে ভিটামিন সি-কে ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা হয়েছে শুধু মানবদেহের কোষের উপরে। দেখা গিয়েছে, দুই পরীক্ষাতেই ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাব রোখা গিয়েছে।

এবং এরই ভিত্তিতে ওঁদের সিদ্ধান্ত: সিগারেটের ধোঁয়াজনিত ফুসফুসের কোষের ক্ষতি ঠেকাতে ভিটামিন সি মোক্ষম দাওয়াই। পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে বিখ্যাত জার্নাল ‘সেল’-এ প্রকাশিত একটি তত্ত্বও তাঁরা নস্যাৎ করেছেন। জার্মানি-অস্ট্রিয়ার এক দল গবেষক ওখানে দাবি করেছিলেন, সিগারেটের ধোঁয়ায় ফুসফুসের ক্ষতি মেরামতযোগ্য। কৌস্তুভরা দেখিয়েছেন, সে ক্ষতি মেরামতের বাইরে।

সুতরাং ওঁদের মতে, ক্ষতি শুরুর আগেই ভিটামিন সি সেবনই বাঁচার পথ। কতটা ভিটামিন সি খেতে হবে?

সিগারেটপ্রেমীরা জেনে রাখুন, তাঁদের দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনপিছু ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দৈনিক খাওয়া জরুরি। অর্থাৎ যাঁর ওজন ৬০ কেজি, তাঁকে রোজ ৬ গ্রাম ভিটামিন সি সেবন করতে হবে। কৌস্তুভের কথায়, ‘‘অনেকের কম সিগারেট খেয়েও ক্যানসার হয়। আবার অনেকে বেশি সিগারেট খেয়ে আক্রান্ত হন ফুসফুসের নানা মারণব্যাধিতে। যেমন, এমফিসেমা অথবা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। ক্যানসারে কোষ সংখ্যায় বাড়ে। আর এমফিসেমায় জীবিত কোষ মরে। দুইয়েরই ফল মারাত্মক।’’ তবে এমফিসেমার ক্ষেত্রে আগেভাগে ভিটামিন সি বর্ম ব্যবহার করলে সুফল মেলে বলে দাবি করছেন কৌস্তুভ।

সঙ্গে অবশ্য শোনাচ্ছেন হুঁশিয়ারিবার্তাও— ‘‘আমরা কিন্তু সিগারেট খেতে উৎসাহ দিচ্ছি না। এমফিসেমার মতো ক্ষতি এক বার শুরু হলে ভিটামিন সি দিয়ে ভাল করা যায় না। শুধু বলছি, সতর্কতা হিসেবে ভিটামিন সি’র উপযোগিতা আছে।’’

‘চ্যারিটি’র মতো ওঁর দাওয়াইও শুরু হয়েছে নিজের বাড়ি থেকে। ‘‘আমার বাবার বয়স আশি পেরিয়েছে। ধূমপানের অভ্যেস ছাড়াতে পারিনি। তাই সাবধানতা হিসেবে কুড়ি বছর ধরে ভিটামিন সি খাওয়াচ্ছি।’’— বলছেন কৌস্তুভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cigarette Vitamin C
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE