Advertisement
E-Paper

অ্যাম্বুল্যান্সের অভাব, সঙ্কটে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা

সর্বোত্‌কৃষ্ট চিকিত্‌সা পরিষেবা পেতে মানুষ মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। অথচ কলকাতার সেই মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই বিপুল রোগীকে পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্য দফতর বরাদ্দ রেখেছে মাত্র একটি বা দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স! সম্প্রতি আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিস্থিতির প্রতিকার চেয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছে কলকাতার দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭

সর্বোত্‌কৃষ্ট চিকিত্‌সা পরিষেবা পেতে মানুষ মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। অথচ কলকাতার সেই মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই বিপুল রোগীকে পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্য দফতর বরাদ্দ রেখেছে মাত্র একটি বা দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স! সম্প্রতি আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিস্থিতির প্রতিকার চেয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছে কলকাতার দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা প্রশ্ন তুলেছে, “কেন খরচ বাঁচানোর নামে অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি বিষয়ে কাটছাঁট করবে স্বাস্থ্য দফতর? কেন হাসপাতালের কর্তাদের যাতায়াতের জন্য তিন-চারটি করে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ থাকবে আর যত হিসেব করা হবে অ্যাম্বুল্যান্সের বেলায়?”

কী হয়েছিল আরজিকরে?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শোভাবাজারের অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হাসপাতাল বেশ কিছুদিন আগেই আরজিকরের সহযোগী হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশেই আরজিকরের প্রসূতি বিভাগে রোগীর বিপুল চাপ সামলাতে কিছু রোগী প্রতিদিন অবিনাশ দত্তে পাঠানোর কথা। এর জন্য আরজিকর থেকে বেশ কয়েক জন চিকিত্‌সককেও পাঠানো হয়েছে সেখানে। কিন্তু আরজিকরের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের বরাদ্দ মাত্র একটি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। নভেম্বরের পয়লা তারিখ থেকে একুশ তারিখ পর্যন্ত টানা প্রায় কুড়ি দিন সেই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক ছুটিতে গিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই গত ১৮ নভেম্বর ৭টি, ১৯ নভেম্বর ৫টি ও ২০ নভেম্বর ৪টি সদ্যোজাতর মৃত্যু হয় আরজিকরে। মৃত্যু হয় এক প্রসূতিরও। রটে যায়, রোগীর চাপ সামলাতে না-পেরে মা ও সদ্যোজাতদের ঠিকঠাক দেখাশোনা করছেন না চিকিত্‌সকেরা। বিক্ষোভ শুরু করেন ভর্তি থাকা রোগীর আত্মীয়েরা। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ করে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২২ নভেম্বর তড়িঘড়ি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের ব্যবস্থা করে আরজিকর থেকে প্রসূতিদের অবিনাশ দত্ত হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়।

স্বাস্থ্যকর্তারাই জানিয়েছেন, আরজিকরে প্রতি মাসে শুধু শিশু ডেলিভারির সংখ্যাই প্রায় ২ হাজার। সেখানে প্রসূতি বিভাগে শয্যা রয়েছে মেরেকেটে ৫০। অন্য হাসপাতালে রোগী না-পাঠালে সদ্য প্রসূতি বা সদ্য সিজার হওয়া মাকেও মাটিতে রাখতে হয় অথবা অস্ত্রোপচারের পরে এক শয্যায় অন্য রোগীর সঙ্গে গাদাগাদি করে তাঁদের থাকতে হয়।

এ দিকে, অ্যাম্বুল্যান্স না চলায় কোনও আসন্ন প্রসূতি বা সদ্য প্রসূতিকে অবিনাশে পাঠানো হয়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিনে যেখানে ৮-৯ জন রোগিণীকে অবিনাশে পাঠানো হয়, সেই জায়গায় ২০ দিনে খুব বেশি হলে ৫-৭ জন প্রসূতি অবিনাশে গিয়েছেন। তা-ও অনেক টাকা দিয়ে নিজেরা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, এর ফলে রোগীর অস্বাভাবিক চাপে স্ত্রীরোগ তথা প্রসূতি বিভাগে পরিষেবা তছনছ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীরোগ বিভাগের এক চিকিত্‌সকের কথায়, “রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছিলাম, ওয়ার্ডের মাটিতে এমনকী, বারান্দায় রাখতে হচ্ছিল সদ্য প্রসূতিকে। অন্য দিকে, অবিনাশে শয্যা খালি থাকছিল।”

এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা (পরিবহণ) পার্থসারথি পালের বক্তব্য, “কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে সচরাচর কাউকে অন্য জায়গায় রেফার করা হয় না। তাই একটি বা দু’টির বেশি অ্যাম্বুল্যান্স ওই হাসপাতালগুলির প্রয়োজন নেই।” কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষেরা এই যুক্তি মানতে চাননি এবং দাবি করেছেন, কম অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য প্রতিনিয়ত তাঁদের ও রোগীকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

যেমন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন পাভলভ, বাঙুর হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হয়। কিছু পরীক্ষার পরে বা কিছুদিন সেখানে রাখার পরে আবার ফেরত আনতে হয়। কিন্তু মাত্র একটি অ্যাম্বুল্যান্সে এই কাজ করা যাচ্ছে না। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের মতে, তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্স তুলনায় একটু বেশি। তিনটি। কিন্তু একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পক্ষে তা অপ্রতুল। সেখানকার এক কর্তার কথায়, “প্রতিনিয়ত শম্ভুনাথ হাসপাতালে ডায়ালসিসের জন্য, পিজি পলিক্লিনিক কিংবা বাঙুর হাসপাতালে রোগীদের রেফার করা হচ্ছে বা চিকিত্‌সার পরে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু গাড়ির অভাবে তা একেবারেই ঠিকঠাক হচ্ছে না। ভুগছেন দরিদ্র রোগীরা, যাঁদের অনেক টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়ার ক্ষমতা নেই। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সও মওকা বুঝে মাত্রাতিরিক্ত চড়া দাম হাঁকছে।” মাত্র ২টি করে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সম্বল করে প্রতিমুহূর্তে পরিষেবা দিতে গিয়ে

ঠোক্কর খাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কতৃপক্ষও।

ambulance scarcity medical service parijat bandopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy