Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

অনুমতি ছাড়াই শিবিরের রক্ত নিচ্ছে বহু ব্লাড ব্যাঙ্ক

স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থায় (স্যাক্স) দু’টি এবং বেহালার পর্ণশ্রী থানায় দায়ের হওয়া একটি অভিযোগ। এই তিনটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই বেরিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বড়সড় অনিয়ম। স্যাক্সের কর্তারাই জানাচ্ছেন, ‘রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ’-এর ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র ছাড়াই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বহু বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতাল বিভিন্ন রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে চলেছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থায় (স্যাক্স) দু’টি এবং বেহালার পর্ণশ্রী থানায় দায়ের হওয়া একটি অভিযোগ। এই তিনটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েই বেরিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বড়সড় অনিয়ম। স্যাক্সের কর্তারাই জানাচ্ছেন, ‘রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ’-এর ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র ছাড়াই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বহু বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতাল বিভিন্ন রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে চলেছে।

রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে পরপর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরে স্যাক্সের কর্তারা পুরনো নথি খতিয়ে দেখা শুরু করেন। দেখা যায়, কলকাতার ৪ নম্বর ব্রিজ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল, পার্ক সার্কাসের একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক, ওয়াটারলু স্ট্রিটের এক ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং ফুলেশ্বরের একটি হাসপাতালকে রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহের ব্যাপারে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাদবাকি কোনও বেসরকারি সংস্থার সেই অনুমতি নেই। কিন্তু তারা সবাই বিভিন্ন শিবির থেকে রক্ত নিচ্ছে।

স্যাক্সের নতুন প্রকল্প অধিকর্তা ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স থাকা মানেই কিন্তু রক্তদান শিবিরে গিয়ে রক্ত সংগ্রহের ছাড়পত্র পাওয়া নয়। শিবির থেকে রক্ত নেওয়ার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকো ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র নিতে হয়। শিবির থেকে রক্ত নেওয়া, রক্ত ঠিকঠাক পরীক্ষা এবং সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো তাদের আছে কি না, তা বিচার করে তবেই ওই শংসাপত্র দেওয়ার কথা। মিনার কথায়, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। সব খোঁজ নিয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি! দেখা যাচ্ছে, প্রায় সবাই শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩-৪ জনকে। অথচ বাকিরাও খোলাখুলি বিভিন্ন শিবির থেকে রক্ত নিয়ে চলেছে।”

কেন রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র নেয়নি বহু ব্লাড ব্যাঙ্ক? ভবানীপুরের এক প্রখ্যাত বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা ব্রতীশ নিয়োগী বা পার্ক সার্কাসের একটি নামী ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আশিস ভৌমিকদের মতো অনেকেই জানিয়েছেন, ১৯৯৯, ২০০৫ এবং ২০১০ সালে তিন বার স্যাক্স ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্রের জন্য বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে আবেদন করতে বলে। রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ থেকে পরিদর্শনও হয়। কিন্তু তার পরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই না জানিয়ে ৯৮ শতাংশ ব্লাড ব্যাঙ্ককে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কারণ, শংসাপত্রের জন্য ব্লাডব্যাঙ্কের পরিকাঠামো খুঁটিয়ে দেখার পরিকাঠামো রাজ্য রক্তসঞ্চালন পর্ষদ বা রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের ছিল না। দোষ মূলত সরকারি পরিকাঠামোর বুঝে এ ব্যাপারে এত দিন ব্লাডব্যাঙ্কগুলিকে বাধা না-দিয়ে চুপ করে ছিল স্যাক্স।

মিনা জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেক আগে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার তিনটি রক্তদান শিবির আয়োজনকারী সংস্থার অভিযোগ পেয়ে তাঁরা তদন্ত শুরু করেন। বেহালার ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি শিবিরে রক্ত সংগ্রহকারী বেসরকারি হাসপাতাল প্রায় সমস্ত দাতার রক্তের গ্রুপ ভুল লিখেছিল। এ ব্যাপারে পর্ণশ্রী থানায় ও স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। মানিকতলা এলাকার একটি শিবিরে আর একটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক দাতাদের বাধ্যতামূলক রক্তচাপ পরীক্ষা করেনি ও অ্যানিমিয়া রয়েছে কি না, জানতে চায়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি শিবিরে একটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক প্রচুর টাকা উপহার দিয়ে দাতার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। মিনা জানান, ওই তিনটি ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র ছাড়া কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাঙ্ক যাতে রক্তদান শিবির থেকে রক্ত না নেয়, সে ব্যাপারে নতুন করে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

permission blood blood bank parijat bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE