Advertisement
০২ মে ২০২৪

অমিল পানীয় জল, ক্ষুব্ধ রোগীরা

ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে করিমপুরের গোয়াশ গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিম মণ্ডল। ছেলের পাশে বসে সামিমের মা হাসিনা মণ্ডল বলছেন, “ছেলের অসুখ নিয়ে হাসপাতালে এসেই বিপদে পড়েছি। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তার থেকেও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে জল কিনতে। হাসপাতালের সামনে নলকূপ থেকে যে জল বেরোয় তা স্নানেরও অযোগ্য।”

এমনই ঘোলাটে জল হাসপাতালের কলে। —নিজস্ব চিত্র।

এমনই ঘোলাটে জল হাসপাতালের কলে। —নিজস্ব চিত্র।

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০৩:০১
Share: Save:

ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে করিমপুরের গোয়াশ গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিম মণ্ডল। ছেলের পাশে বসে সামিমের মা হাসিনা মণ্ডল বলছেন, “ছেলের অসুখ নিয়ে হাসপাতালে এসেই বিপদে পড়েছি। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তার থেকেও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে জল কিনতে। হাসপাতালের সামনে নলকূপ থেকে যে জল বেরোয় তা স্নানেরও অযোগ্য।” পানীয় জল না পেয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মুরুটিয়ার রসিকপুরের বাসান্নুর শেখ। ছেলে আলামিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন বাসান্নুর। ওই প্রৌঢ় বলেন, “সরকারি হাসপাতালে পরিশ্রুত পানীয় জলটুকুও মিলছে না! ওষুধের পাশাপাশি জলও কিনে খেতে হচ্ছে। এই গরমে দু’জনের জন্য আর কত জল কিনব বলুন তো? এখন ছেলেটাকে ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি।” একই কথা বললেন ফার্মের মোড়ের সঞ্জয় দত্তও। রবিবার থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সঞ্জয় বলছেন, “হাসপাতালের ২০ নম্বর ঘরের সামনে একটা আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ আছে। কিন্তু সেই জলে এত আয়রন যে খাওয়া যায় না। বাইরে থেকে এই ক’দিনে জল কিনতে যা টাকা খরচ হল তাতে বেশ কয়েক কিলোগ্রাম চাল কেনা যেত!”

সীমান্তবর্তী করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পানীয় জলের সমস্যা বহু দিনের। কখনও নলকূপের সমস্যা, কখনও নলকূপ থাকলেও সেই জলে এত আয়রন থাকে যা পানের অযোগ্য। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে হাসপাতালে একটি নামি কোম্পানির পরিশ্রুত পানীয় জলের দু’টি মেশিন বসানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটা বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতাল ও আবাসনের জল সরবরাহের জন্য যে জলাধার রয়েছে সে জলও পানের যোগ্য নয়। হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের একাংশ জানান, ওই জলাধারের জল হাসপাতালের সর্বত্র সরবরাহ হয়। কিন্তু ওই জলে এত আয়রন থাকে যে সে জল পান তো দূরের কথা, ব্যবহারেরও অযোগ্য। তাই তাঁরা সকলেই বাড়ি থেকে জল নিয়ে আসেন। হাসপাতালেরই এক কর্মী বলছেন, এই যদি হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও কর্মীদের অবস্থা হয় তাহলে রোগীদের কথা ভাবুন।

করিমপুরের আশপাশের এলাকা ও পড়শি জেলা মুশির্র্দাবাদের একাংশ ধরে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালের উপর নিভর্র্রশীল। হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০। অথচ দৈনিক গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০ জন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে সাড়ে তিনশো থেকে চারশো জন রোগী আসেন। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক থেকে নার্স সবই রয়েছে কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, প্রত্যন্ত এই এলাকায় এই গ্রামীণ হাসপাতাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সরকারের তরফে হাজার ঢাকঢোল পেটানো হলেও এই হাসপাতালের ব্যাপারে সবাই যেন উদাসীন।

করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “জুলাই মাসের মধ্যেই আর্সেনিক মুক্ত একটি পানীয় জলের নলকূপ আমাদের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে হাসপাতালে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দৈনিক দূরদুরান্ত থেকে এই হাসপাতালে রোগীরা আসেন। সেখানে এসে পানীয় জলটুকুও যদি না মেলে সেটা অত্যন্ত লজ্জার। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে একাধিকবার জানিয়েও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। বিষয়টি ফের জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরকে জানাব।” হাসপাতালের সুপার রাজীব ঘোষ বলেন, “এই হাসপাতালে রোগীর খুব চাপ। পানীয় জলের জন্য দু’টি মেশিন বসানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেটা সারানোর জন্য বিশেষজ্ঞকে বলা হয়েছে। আর হাসপাতালের ২০ নম্বর ঘরের সামনে একটি আর্সেনিকমুক্ত নলকূপও বসানো হয়েছে। রোগী ও এবং রোগীর আত্মীয়রা সেখান থেকেই জল সংগ্রহ করতে পারবেন। সজল ধারা প্রকল্পের জন্যও জেলা সমিতিতে জানানো হয়েছে। সেটা হয়ে গেলে জলের আর কোনও সমস্যা থাকবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kallol pramanick karimpur hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE