Advertisement
E-Paper

অস্ত্রোপচারের সুযোগ নেই, এখনও অচ্ছুত কুষ্ঠরোগীরা

কারও হাতের আঙুল বেঁকে-গুটিয়ে দু’টো হাত মুঠোবন্দি হয়ে গিয়েছে। কিংবা চোখের পাতায় এমন ক্ষত হয়েছে যে, পাতা বন্ধ করতে পারছেন না। কারও আবার গোড়ালির ঘা এতটাই ভয়াবহ যে রোগী গোড়ালি তুলতে পারছেন না, চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে এখনও প্রতি বছর নতুন করে ১১ হাজারের বেশি কুষ্ঠরোগী খুঁজে পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে শরীরে মারাত্মক ধরনের বিকৃতি দেখা দিয়েছে এমন রোগী মেলে বছরে অন্তত পাঁচশো বা তারও বেশি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য এঁরা রোজকার প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন না, রোজগারে অপারগ হন। বিকৃতি বাইরে থেকে দেখা যায় বলে এখনও অনেকাংশে সামাজিক ভাবে এঁদের অচ্ছুত করে রাখা হয়।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫৮

কারও হাতের আঙুল বেঁকে-গুটিয়ে দু’টো হাত মুঠোবন্দি হয়ে গিয়েছে। কিংবা চোখের পাতায় এমন ক্ষত হয়েছে যে, পাতা বন্ধ করতে পারছেন না। কারও আবার গোড়ালির ঘা এতটাই ভয়াবহ যে রোগী গোড়ালি তুলতে পারছেন না, চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে এখনও প্রতি বছর নতুন করে ১১ হাজারের বেশি কুষ্ঠরোগী খুঁজে পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে শরীরে মারাত্মক ধরনের বিকৃতি দেখা দিয়েছে এমন রোগী মেলে বছরে অন্তত পাঁচশো বা তারও বেশি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য এঁরা রোজকার প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন না, রোজগারে অপারগ হন। বিকৃতি বাইরে থেকে দেখা যায় বলে এখনও অনেকাংশে সামাজিক ভাবে এঁদের অচ্ছুত করে রাখা হয়।

সময়মতো অস্ত্রোপচার করে এই বিকৃতি সারানো সম্ভব, মানুষগুলিকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানো সম্ভব। কিন্তু এঁদের মধ্যে অর্ধেক রোগী অস্ত্রোপচারের সুবিধাই পান না। ২০১১-২০১৩ সাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবে রাজ্যে মারাত্মক বিকৃতিযুক্ত কুষ্ঠরোগী পাওয়া গিয়েছে ৯৭৪ জন, অথচ তাঁদের মধ্যে মাত্র ৩৬১ জনের অস্ত্রোপচার করা গিয়েছে।

সময়মতো বেশি সংখ্যক কুষ্ঠরোগীর অস্ত্রোপচার করে অঙ্গবিকৃতি সারানোর জন্য রাজ্যের প্রথম ও একমাত্র রি-কনস্ট্রাকটিভ সার্জারি ইউনিট তৈরি হয়েছিল কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। টাকা এসেছিল ‘জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন’-থেকে। কিন্তু অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও ১৫ শয্যাবিশিষ্ট এই ইউনিট তৈরি হওয়ার পর ১০ মাস কাটতে চললেও তা চালু করা যাচ্ছে না। কারণ, স্বাস্থ্য দফতর এখনও নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ব্যবস্থা করতে পারেনি।

আর জি করের ওই ‘লেপ্রোসি রি-কনস্ট্রাকটিভ সার্জারি ইউনিট’-এর প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য আফশোস করে জানিয়েছেন, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শয্যাসংখ্যা ২৫। সেগুলি পুড়ে যাওয়া রোগী, পথ দুর্ঘটনার রোগী, ক্যানসারের রোগী বা জন্মগত শারীরিক ত্রুটিযুক্ত রোগীতেই ভর্তি হয়ে থাকে। ফলে কুষ্ঠরোগীদের জায়গা দেওয়া যায় না। ওই পৃথক ইউনিটটি চালু হলে মাসে অন্তত ৩০-৩৫ জন কুষ্ঠরোগীর অস্ত্রোপচার করে শারীরিক বিকৃতি সারানো যেত। কিন্তু যত ক্ষণ না ইউনিটটি চালু হচ্ছে তত ক্ষণ বছরে মেরেকেটে ১৫-১৬ জন কুষ্ঠরোগীর অস্ত্রোপচার আরজিকর-এ করা যাচ্ছে।

রূপনারায়ণবাবুর কথায়, “ডাক্তার রয়েছে। কিন্তু ইউনিট চালু করতে অন্তত ১২ জন নার্স ও ১২ জন সাফাইকর্মী দরকার। এখনও এক জনকেও পাইনি। শুনছি লোক নেওয়ার অনুমোদনের জন্য ফাইল এত দিনে অর্থ দফতরে গিয়েছে। এ দিকে, নতুন এই ইউনিটের কথা শুনে দূর-দূরান্তের জেলা থেকে কুষ্ঠরোগীরা আর জি করে অস্ত্রোপচারের জন্য এসে ফিরে যাচ্ছেন।” এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কিছু করার নেই। বিগত সরকারের ৩৪ বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি। এই সরকার তিন বছরে আর কত লোক নেবে? একটু সময় দিতেই হবে। সব কিছু ম্যাজিকের মতো হবে না।”

জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণ কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গে নিযুক্ত উপদেষ্টা প্রসূন মিত্র জানান, ২০০৫ সাল থেকে কুষ্ঠরোগীদের অস্ত্রোপচারের কর্মসূচি শুরু হয়। কিন্তু জেলা হাসপাতালগুলিতে অন্য বিভাগের সঙ্গে অ্যানাসথেশিস্ট ও অপারেশন থিয়েটার ভাগ করে নিতে হত বলে অস্ত্রোপচার খুব কম হয়েছে। অস্ত্রোপচারের অভাবে বহু কুষ্ঠরোগী চিরকালের মতো প্রতিবন্ধী হয়ে গিয়েছেন। এত দিনে আর জি কর-এ কুষ্ঠরোগীদের অস্ত্রোপচারের প্রথম আলাদা ইউনিট তৈরি হল, তারও এই হাল!

প্রসূনবাবুর কথায়, “সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর চুক্তির ভিত্তিতে ১৩৫ জন কর্মী নিয়োগ করেছে। কুষ্ঠরোগী বেশি রয়েছেন, এমন ৮টি জেলা থেকে শারীরিক বিকৃতিযুক্ত রোগীদের খুঁজে বার করে এই কর্মীরা আর জি করের ইউনিটে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে আসবেন। কিন্তু ইউনিট-ই তো অচল! সব আয়োজন জলে গিয়েছে।” আর জি করের এই ইউনিটকে কুষ্ঠরোগীদের অস্ত্রোপচারের অন্যতম ‘নোডাল সেন্টার’ এর মর্যাদা দিয়েছিল ভারত সরকার। দেশে এই রকম আরও ১৩টি কেন্দ্র রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার শুরু করা না-গেলে আর জি কর-এর এই মর্যাদা কেন্দ্র কেড়ে নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

operation leprosy parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy