বাড়ির হদিস মেলেনি। সুস্থ হয়েও ওঁদের ঠিকানা তাই হাসপাতাল। সেখানেই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন। খবরের কাগজে ওঁদের কথা পড়েই পাড়ার ছেলেরা ছুটে গিয়েছিল হাসপাতালে। বলেছিল, নিয়মিত ওঁদের চুল, নখ কাটার দায়িত্ব নিতে চায়। কর্তৃপক্ষের সবুজ সঙ্কেত মেলার পরে এখন নিয়ম করে সপ্তাহে এক দিন হাসপাতালের ছাদে নিয়ে গিয়ে ওই রোগীদের চুল, নখ কাটানো হচ্ছে। নিজেদের হাতখরচের পয়সা বাঁচিয়ে পাড়ার ছেলেরাই জোগাচ্ছে নাপিতের পারিশ্রমিক।
শুধু পাড়ার ছেলেরা নয়, ওঁদের সাহায্যে হাত বাড়িয়েছে সরকারি দফতর, একাধিক বেসরকারি সংস্থা। এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষ ও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এমনটাই দাবি টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপতাল কর্তৃপক্ষের। সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখানে ৩৬ জন রয়েছেন, যাঁদের কোনও পরিজন বা বাড়ির ঠিকানার খোঁজ মেলেনি। এঁদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছে সাহায্য চেয়েও সাড়া মেলেনি। কিন্তু সম্প্রতি আনন্দবাজারে এদের নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে অনেক সংস্থা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে।”
সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিএমও থেকে যত দ্রুত সম্ভব এই সব রোগীদের সরকারি হোমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি সমাজকল্যাণ দফতরের এক প্রতিনিধি দল এসে এই সব রোগীর অবস্থাও দেখে যান বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা হয় ওই প্রতিনিধিদের।
খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির তরফ থেকে এই সব রোগীদের জন্য নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যায় চা ও হাল্কা জলখাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই রোগীদের এক জন মলিনা ঘোষ বলেন, “চায়ের স্বাদ ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন আবার পাচ্ছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, মিশনারিজ অব চ্যারিটিজের তরফে এই রোগীদের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখায় সাহায্যের আশ্বাস মিলেছে।
হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে সদ্য বদলি হয়ে এম আর বাঙুরে এসেছেন চক্ষু চিকিৎসক দীপঙ্কর রায়। সূত্রের খবর, হাসপাতালের কাজে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদানের আগেই তিনি কর্তৃপক্ষকে একটি শর্ত দিয়েছেন। তা হল রুটিন কাজের বাইরেও তিনি নিয়মিত এই রোগীদের চোখ পরীক্ষা করবেন। সেই পরীক্ষাতেই ইতিমধ্যে ন’জনের চোখে ছানি ধরা পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। ১ জুলাই চিকিৎসক দিবসে এঁদের চার জনের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে আরও পাঁচ জনের চোখে অস্ত্রোপচার হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। দীপঙ্করবাবু বলেন, “এখানে আসার আগে আনন্দবাজারে ওঁদের কথা পড়ে আমি কিছুটা আবেগতাড়িত হই। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিই।”
ওই রোগীদের খোঁজে এত দিন কেউ না এলেও খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে অনেকেই এসেছেন ওঁদের মধ্যে পরিজন কেউ আছে কি না জানতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের খোঁজ করতে এসেছিলেন এক বাবা। প্রিয়জনের খোঁজ না পেলেও অসহায় মানুষগুলোর জন্য প্রচুর পোশাক, খাবার দিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে কর্তৃপক্ষকে পুনরায় যোগাযোগের কথাও বলে গিয়েছেন অনেকে।
টালিগঞ্জের বিধায়ক এবং রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস বলেন, “অসহায় মানুষগুলোর উপকার হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy