রক্ত দিয়ে শিল্প গড়ার ডাক দিয়েছিল সিপিএম। আর তৃণমূল জমানায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর রক্তটাকেই নিয়ে এল শিল্পে!
সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত অতিরিক্ত প্লাজমা বা রক্তরস বিক্রির জন্য সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ঠিক হয়েছে, প্রতি লিটার প্লাজমার জন্য ওই সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরকে ১৪৫০ টাকা করে দেবে, যা খরচ হবে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০১১-’১২ সাল থেকেই প্লাজমা বিক্রি বা প্লাজমা-র বিনিময়ে রক্তের ব্যাগ, ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা অ্যালবুমিনের মতো উপাদান সংগ্রহের চেষ্টা শুরু হয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, স্বেচ্ছায় দান করা রক্ত থেকে উত্পাদিত উপাদান বিক্রি করলে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে না তো? শেষে ২০১৪-র নভেম্বরে দিল্লিতে ‘জাতীয় রক্তসঞ্চালন পর্ষদ’ এবং ভারত সরকারের রক্তসঞ্চালন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (স্যাক্স) কর্তারা। রক্তসঞ্চালন পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়, বেশির ভাগ ব্লাড ব্যাঙ্কেই প্লাজমা উদ্বৃত্ত হচ্ছে। পড়ে থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে বা ফেলে দিতে হচ্ছে। বদলে তা বিক্রি করলে স্বাস্থ্য দফতরের কিছু আয় হতে পারে। এর পরেই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এ নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কথায়, “অধিকাংশ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে যত রক্ত সংগ্রহ হয়, পরিকাঠামোর অভাবে তার মাত্র ১৫-৪৫ শতাংশের উপাদান পৃথক করা যায়। তা সত্ত্বেও প্লাজমা উদ্বৃত্ত থাকে। কারণ, এর প্রয়োজন কম ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তা এক বছর পর্যন্তও রাখা যায়। তুলনায় প্যাকসেল বা লোহিত রক্তকণিকা, প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার চাহিদা বিপুল। তা ৪-৫ দিনের বেশি রাখাও যায় না।” প্রসূন ভট্টাচার্য, মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্যের মতো একাধিক হেমাটোলজিস্টেরও মত, প্লাজমা মূলত হিমোফিলিয়া ও পুড়ে যাওয়া রোগীর লাগে। তার পরেও তা অতিরিক্ত থাকে এবং জমে থেকে মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কাজেই ফেলে দেওয়ার থেকে তা বিক্রি করা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে ২০১২-র নভেম্বরে ২৩৬০ ইউনিট এবং ২০১৩-র ডিসেম্বরে ১০৪০ ইউনিট প্লাজমা মেয়াদ-উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়েছিল।
যে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা জানায়, বিভিন্ন বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে তারা যে দামে প্লাজমা কেনে, একই দাম দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। প্লাজমা থেকে তারা ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও অ্যালবুমিন তৈরি করবে। অ্যালবুমিন থেকে যকৃত্ ও কিডনির রোগ, প্রোটিন ঘাটতির ওষুধ হয়। ইমিউনোগ্লোবিউলিন দরকার রক্ত ও স্নায়ুর জটিল রোগে। বিদেশ থেকে এই ওষুধ আনলে দাম মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে হয়।
এ রাজ্যে এমনিই রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের হার কম। সেখানে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত প্লাজমার জোগান মিলবে? রোগীদের বঞ্চিত করে বেসরকারি সংস্থাকে প্লাজমা বিক্রি করা হবে না তো? এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান মানিকতলা থেকে মেডিক্যাল, এসএসকেএম, নীলরতন বা আরজিকর ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারা। তাঁদের কথায়, পরিকাঠামো, বিশেষত লোকবলের অভাবে রক্তের পৃথকীকরণ কম হচ্ছে সত্যি। তবে যা হচ্ছে, তার মধ্যেও তাঁরা ইচ্ছে করে প্লাজমা কম তৈরি করেন। যেমন ১০০০ ইউনিট রক্তের ৮০০ ইউনিটের উপাদান পৃথকীকরণ হলে তার মধ্যে প্লাজমা তৈরি হয় মাত্র ১০০ ইউনিট থেকে। প্লাজমা বিক্রি হলে এই পরিমাণ বাড়ানো যাবে। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, ন্যাকো-র নির্দেশ, প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্ক যত রক্ত সংগ্রহ করবে তার ৮০ শতাংশ থেকে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ করতে হবে। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সম্প্রতি টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা, চিকিত্সক-নার্সদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতির জন্য সাড়ে ছ’কোটি টাকা অনুমোদনের কাজ হয়েছে। এতে উপাদান পৃথকীকরণ বাড়বে এবং প্লাজমার অভাব হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy