Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উদ্বোধন সার, চালু হল না ডায়ালিসিস সেন্টার

ঘটা করে মাস খানেক আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি। গত ১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেরও ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেন।

তালাবন্ধ ডায়ালিসিস সেন্টার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

তালাবন্ধ ডায়ালিসিস সেন্টার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

ঘটা করে মাস খানেক আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত তা চালু হয়নি। গত ১ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেরও ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেন। ওই ইউনিটের উদ্বোধন উপলক্ষে বহরমপুরের ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কিন্তু তারপরে একমাস কেটে যাওয়ার পরেও ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালু না হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ইউনিট চালুর আগে জলের একটা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৯ অগস্ট মুম্বই থেকে জলের ওই রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে তিন জনের একটি তদন্তকারী দল ডায়ালিসিস ইউনিটের জল, মেশিন-সহ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।”

মুর্শিদাবাদ জেলায় সরকারি কোনও হাসপাতালে এত দিন কোনও ডায়ালিসিস ইউনিট চালু ছিল না। বহরমপুরের একটি মাত্র বেসরকারি হাসপাতালে ওই ডায়ালিসিস ইউনিট রয়েছে। বহরমপুর লাগোয়া ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করতেও রোগীর বাড়ির লোকজনদের মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। এছাড়া ডায়ালিসিসের জন্য কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ বা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে হয় জেলার বাসিন্দাদের। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই ব্যয় হয়। এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার ওই ডায়ালিসিস ইউনিট উদ্বোধন হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন জেলার মানুষ। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “ডায়ালিসিস অত্যন্ত ব্যয় বহুল চিকিত্‌সা। অনেক সময়ে আর্থিক কারণে এত ব্যয় বহুল চিকিত্‌সা সাধারণ মানুষের পক্ষে বহণ করা সম্ভব হয় না। সাধারণ মানুষদের কথা চিন্তা করেই মুখ্যমন্ত্রী এখন ওই ধরনের বিভিন্ন ইউনিট খোলার দিকে নজর দিয়েছেন এবং সেই মত পদক্ষেপও করছেন।” কিন্তু উদ্বোধনের পরেও প্রায় মাস খানেকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলাবাসী।

জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “ডায়ালিসিস ইউনিটকে ঘিরে সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু উদ্বোধনের পরেও এখন পর্যন্ত তা চালু না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। মানুষকে বিভ্রান্ত না করে ঠিক কবে থেকে চালু হবে, তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।” তিনি জানান, ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালুর ব্যাপারে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাঁদের কাছেও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ভরসায় না থেকে অনেকেই রোগী নিয়ে কলকাতা ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “সম্পূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি না করেই তাড়াহুড়ো করে যে কোনও কিছু উদ্বোধন করার একটা প্রবণতা মুখ্যমন্ত্রীর রয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার ক্ষেত্রে সে কৃষি খামার হোক বা ডায়ালিসিস ইউনিট হোক। উদ্বোধনের পরেই সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক একটা প্রত্যাশা থাকে। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। সাধারণ মানুষও সরকারের ওই আচরণে ভীষণ ভাবে হতাশ।”

তৃণমূলের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি সুবোধ দাস বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই।” মুর্শিদাবাদ জেলা যুগ্ম পর্যবেক্ষকের অন্যতম তথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে উদ্বোধনের পরেও তা চালু হয়নি, আমি খোঁজ না নিয়ে বলতে পারব না। তবে এটা দলের কোনও বিষয় নয়।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালিসিস করতে শুরুতে ৭৫০ টাকা এবং ডায়ালিসিস করতে যে সমস্ত উপকরণ লাগবে, তার জন্য অতিরিক্ত ২৮০ টাকা দিতে হবে। পরের বার ডায়ালিসিস করতে অবশ্য ৭৫০ টাকার বদলে ৫০০ টাকা ও ২৮০ টাকা দিতে হবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পিপিপি মডেলে ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালানো হবে। বাতানুকূল ওই অত্যাধুনিক ডায়ালিসিস ইউনিটে ১০টি মেশিন রয়েছে। ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালানোর জন্য কলকাতার একটি সংস্থার সঙ্গে সরকারের মউ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর ওই সংস্থা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে তিন লক্ষ টাকা করে দেবে। ওই অর্থ ফের রোগীদের স্বার্থে কাজে লাগানো হবে। মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও রোগীর পরিবারের ডায়ালিসিস করার মতো আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে রোগী কল্যাণ সমিতির কাছে লিখিত আবেদন করলে ডায়ালিসিসে ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া যেতে পারে।” কিডনি বিশেষজ্ঞ রঞ্জন পাণ্ডে এবং দুজন বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বুধবার সরেজমিনে তদন্তে আসেন। সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তাঁরা সব দিক খতিয়ে দেখে ওই ডায়ালিসিস ইউনিট চালু করার অনুমোদনও দিয়েছেন।” ফলে যে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে, তাদের অবিলম্বে ওই ইউনিট চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু কবে নাগাদ ওই ইউনিট চালু হবে সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE