Advertisement
E-Paper

ক্যানসার প্রতিরোধে উদ্যোগ ডিএসপি হাসপাতালের

নিজের শরীর নিয়ে মেয়েদের যে লজ্জা, সেখানে শিকড় গেড়ে বসে বহু রোগ। তার অন্যতম স্তন ক্যানসার। নিয়মিত পরীক্ষা করানোর লজ্জা-অস্বস্তিটা মেয়েরা এড়িয়ে যেতে চান বলে, অনেক সময়েই বহু দেরিতে ধরা পড়ে অসুখ। কী করে মেয়েদের ক্লিনিক-মুখী করা যায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে নানা দেশের সরকার।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪০

নিজের শরীর নিয়ে মেয়েদের যে লজ্জা, সেখানে শিকড় গেড়ে বসে বহু রোগ। তার অন্যতম স্তন ক্যানসার। নিয়মিত পরীক্ষা করানোর লজ্জা-অস্বস্তিটা মেয়েরা এড়িয়ে যেতে চান বলে, অনেক সময়েই বহু দেরিতে ধরা পড়ে অসুখ। কী করে মেয়েদের ক্লিনিক-মুখী করা যায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে নানা দেশের সরকার।

দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) একটা রাস্তা দেখিয়েছে। ডিএসপি হাসপাতালের ১৯ নম্বর ঘরে সপ্তাহে দু’দিন মঙ্গল ও শুক্রবার বিনামূল্যে মহিলাদের স্তন পরীক্ষা ও চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। উদ্যোগের শুরু ২০১০ সালে। প্রথম দিকে তেমন সাড়া মেলেনি। এখন অনেক বেশি সংখ্যায় মেয়েরা আসছেন পরীক্ষা করাতে। যেমন অনিতা সাকসেনা। কাঁধে, কোমরে, হাড়ের জোড়ের ব্যথায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। নানা জায়গায় চিকিত্‌সা করিয়ে, এখানে এসে ধরা পড়ল তাঁর যন্ত্রণাহীন স্তন ক্যান্সার হয়েছে। তা থেকেই অন্যান্য সমস্যা। তাঁর এখন কেমোথেরাপি চলছে। বললেন, “এখানে না এলে হয়তো রোগ ধরাই পড়ত না। কী যে হতো ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।”

এই হাসপাতালেই নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্তন পরীক্ষা করিয়ে জেনেছেন, তিনি আক্রান্ত। এরপরেই ডেকে পাঠানো হয় তাঁর মা ও মাসিকে। তাঁদের স্তনেও মিলেছে সমস্যা। নিবেদিতার ১২ বছরের মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করাতে পাঠানো হয়েছে, তার শরীরে রোগের সূত্র আছে কি না জানতে।

ওই হাসপাতালের এক মহিলা চিকিত্‌সকের উদ্যোগে চলছে এই ক্লিনিক। বিশ্ব নারীদিবসের প্রাক্কালে তিনি বললেন, “আমি নিজে মহিলা। তাই মহিলাদের অবস্থাটা অনুমান করতে পারি।” আগে অনেকেই বিনা পয়সায় পরীক্ষার সুযোগের কথা জানালেও পরীক্ষায় রাজি হতেন না। কেউ কেউ বাড়িতে জানাতেই লজ্জ্বা পেতেন। আবার স্ত্রীর এমন রোগ বাইরের কাউকে জানাতে বা চিকিত্‌সা করাতে দিতে চাইতেন না বহু পুরুষ। এতে নাকি পারিবারিক সম্মান নষ্ট হবে। এখন ক্রমশ দিন বদলাচ্ছে। হাসপাতালের ১৯ নম্বর ঘরে গিয়ে দেখা গেল, ডিএসপি কর্মী অজয় যাদব এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে। তিনি বললেন, “স্ত্রীর পরীক্ষা করিয়ে নিলাম। সংশয় কেটে গেল।”

ক্যানসার ধরা পড়লে কেমোথেরাপির ব্যবস্থাও রয়েছে হাসপাতালে। ২০১০ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ জন। ২০১৩ সালে ৬৫ জন, আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১২ জন রোগী এসেছেন। কেউ এসেছেন অন্যত্র রোগ চিহ্নিত হওয়ার পরে কেমোথেরাপি ও অন্যান্য চিকিত্‌সার সুবিধা নিতে। আবার কারওর রোগ ধরা পড়েছে এখানেই।

স্তন ক্যানসার হয়েছে কি না, তা অবশ্য মহিলারা নিজেরা বাড়িতেও পরীক্ষা করতে পারেন। বিশেষত স্তনে শক্ত কোনও কিছু হাতে অনুভব হলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিতে হবে। বয়স ৪০ পেরোলে প্রত্যেক মহিলাকেই আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু সাধারণত খুব কম মহিলাই এই নিয়মগুলো মেনে চলেন। তাই হাসপাতালে নিখরচায় পরীক্ষার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বোঝানোর কাজটাও করেন ওই মহিলা চিকিত্‌সক। স্তন ক্যানসার নিয়ে প্রচার করেন দুর্গাপুর ও তার আশেপাশের স্কুলগুলোতেও।

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “সচেতনতা বাড়ানোর জন্য লাগাতার প্রয়াসটা জরুরি। ওঁরা নিখরচায় নিয়মিত যে চেকআপের ব্যবস্থা করছেন, সেটা প্রশংসনীয়।” আর শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার বলেন, “ইএসআই ব্যবস্থায় চিকিত্‌সা করা হলেও, রোগ প্রতিরোধের কাজটা তেমন হয় না। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন।”

একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালনায় যুক্ত রয়েছেন কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকার। তাঁর বক্তব্য, “মেয়েদের রোগ সাধারণত বেশি দেরিতে ধরা পড়ে। তাই এটা ভাল উদ্যোগ। তবে স্তন ক্যানসার মেয়েদের রোগ হলেও, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবিটিসের মতো অসুখে অনেক বেশি মহিলা ভোগেন। তাই এগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করাতেও উত্‌সাহ দেওয়া উচিত।” জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধে ‘প্যাপ স্মিয়ার’ পরীক্ষার উপরেও জোর দেন তিনি।

cancer prevention dsp hospital arpita majumder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy