Advertisement
০৬ মে ২০২৪

খাবারে ভেজালের রমরমা, ধরবে কে?

বাজারে বিকোচ্ছে চকচকে পটল, বেগুন। মাঠের ফসল এত ঝকঝকে হয় কী করে! সন্দেহ হলেও কিছু করার নেই। ওই সব্জিই কিনতে হচ্ছে গৃহস্থকে। মিষ্টির দোকানে শোকেসে সাজানো লাড্ডুর রং দেখে মনে হয়তো সন্দেহ জাগতেই পারে, রং মেশানো নয় তো? কৃত্রিম রঙে রাঙানো এ সব জিনিস ব্যাগে বয়ে ঘরে নিয়ে গেলেই বিপদ।

পুজো-পরবে মেলায়-দোকানে থরে থরে এমনই সাজানো থাকে খাবার। এর মধ্যেই কিছু খাবারে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর রং মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পুরুলিয়ায় কিছু বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযানের দাবি জানিয়েছেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

পুজো-পরবে মেলায়-দোকানে থরে থরে এমনই সাজানো থাকে খাবার। এর মধ্যেই কিছু খাবারে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর রং মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পুরুলিয়ায় কিছু বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযানের দাবি জানিয়েছেন। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

বাজারে বিকোচ্ছে চকচকে পটল, বেগুন। মাঠের ফসল এত ঝকঝকে হয় কী করে! সন্দেহ হলেও কিছু করার নেই। ওই সব্জিই কিনতে হচ্ছে গৃহস্থকে। মিষ্টির দোকানে শোকেসে সাজানো লাড্ডুর রং দেখে মনে হয়তো সন্দেহ জাগতেই পারে, রং মেশানো নয় তো?

কৃত্রিম রঙে রাঙানো এ সব জিনিস ব্যাগে বয়ে ঘরে নিয়ে গেলেই বিপদ। টাটকা সব্জি বা ফল কিংবা লোভনীয় এই সব খাবারের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিষ। নিষিদ্ধ রাসায়নিক নিয়ে তৈরি এই সব জিনিস অবিলম্বে আটকাতে প্রশাসনকে কড়া হাওয়ার আবেদন জানাল পুরুলিয়া জেলা হিউম্যান রাইটস ফোরাম নামের একটি সংস্থা। তারা পুরুলিয়া শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজারে বিক্রিত খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার দাবিতে সরব হয়েছেন। প্রশাসনও তদারকির জন্য কমিটি গড়েছে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল রয়েছে কি না তা যাচাই করার পরিকাঠামোই নেই।

ওই সংগঠনের মুখপাত্র অধ্যাপক আবু সুফিয়ান দাবি করেছেন, পুরুলিয়া জেলার বাজারগুলিতে এ রাজ্যের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড থেকেও খাদ্যদ্রব্য আসে। বিভিন্ন বাজারে দেখা যাচ্ছে সব্জি টাটকা দেখানোর জন্য রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হচ্ছে। পটল বা টম্যাটো রঙে ডুবিয়ে বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফল পাকানোর জন্যও বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার চলছে। মিষ্টির বা খাবারের দোকানে খাবার রঙিন বা লোভনীয় দেখানোর জন্য নিষিদ্ধ রং ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই রাসায়নিকগুলির মানুষের শরীরে মারাত্মক কুপ্রভাব রয়েছে। এতে বহুরকম জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। অনেকেরই এ সর্ম্পকে সচেতনতা নেই। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রশাসনের ধারাবাহিক ভাবে অভিযান চালিয়ে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল আটকানো প্রয়োজন।”

পুরুলিয়া নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক গোবিন্দ কুণ্ডু বলেন, “ফল, সব্জি বা মিষ্টি-সহ নানা খাবার জিনিস প্রতিনিয়তই আমাদের বাজার থেকে কিনে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাতে ভেজাল থাকছে কি না তা দেখার দায়িত্ব সরকারি দফতরের। কারণ রাসায়নিক মেশানো খাবার মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। পরিকাঠামো সীমিত হলেও তাই অভিযান শুরু করা দরকার। পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতারও।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংগঠনের কাছ থেকে আবেদন পেয়ে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটিও গড়েছে। কিন্তু গোড়াতেই গলদ রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল পরীক্ষার পরীক্ষাগারই নেই। ফলে কমিটি নামেই তৈরি হয়েছে, কয়েকবার হানা দিলেও সে ভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দাস বলেন, “এখানে ভেজাল পরীক্ষার পরিকাঠামো না থাকায় অভিযান কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু তা জন্য অভিযান বন্ধ থাকবে না। প্রশাসনের আধিকারিকরা পরিদর্শনে নামলে বিক্রেতারা সতর্ক হবেন, ক্রেতাদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে ওঠবে।” পুরুলিয়া শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, মিষ্টিতে রং না দেওয়া হলে ক্রেতারা কিনতে চাইবেন না। তাই বাধ্য হয়ে রং মেশাতে হয়। তবে তাতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলেই তাঁদের দাবি।

ওই সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের কাছে পুরুলিয়া শহর ও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসে। যেমন তেলেভাজার দোকানে সব সময় ভাল মানের তেল ব্যবহার করা হয় না। তাঁরা নিজেরাও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন, কোথাও কোথাও তেলেভাজার দোকানে ভাজার পর কড়ায় থেকে যাওয়া তলানি তেলের সঙ্গে নতুন তেল মিশিয়ে ফের ভাজা হচ্ছে। তাঁদের মতে, তলানিতে মিশে থাকা ওই তেল শরীরের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর। আবু সুফিয়ানের কথায়, “আমরা খবর নিয়ে দেখেছি গত ২৫ বছরে পুরুলিয়ায় একটাও খাবারে ভেজালের মামলা করা হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও চিঠি দিয়েছি।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, “অভিযান যে চালানো হয় না তা নয়। কখনও সখনও অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দোকান কিংবা মেলায় খাবারে রং মেশানো আছে কি না, বা খাবারে ভেজাল মেশানো রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার কোনও পরিকাঠামোই এখানে নেই। ফলে প্রমাণ করা যাবে কী ভাবে যে সেই খাবারে ভেজাল মেশানো রয়েছে?” জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের স্বীকারোক্তি, “এই ফাঁক গলেই ভেজাল খাবারের রমরমা চলছে।” ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তাঁরা প্রশাসনকে জেলাস্তরে ‘ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি’ গড়ার দাবি জানিয়েছেন। দ্রুত ওই পরীক্ষাগার গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছে।

প্রশাসন থেকে অভিযানের জন্য যে কমিটি গড়া হয়েছে, তার মাথায় রাখা হয়েছে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকারকে। তাঁর আশ্বাস, “আমরা শীঘ্রই শহরে ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযানে নামব। শুধু তাই নয়, এ বার থেকে শহরে ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি গড়ার দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি কলেজে এই ল্যাবরেটরি গড়ার কথা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prasanta pal purulia adulteration food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE